ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুশকিলে বিএনপি শুদ্ধতার পথ খুলবে যেভাবে

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মুশকিলে বিএনপি শুদ্ধতার পথ খুলবে যেভাবে

বিএনপিকে যারা ধোয়া তুলসীপাতা মনে করেন তারা এখন কি বলবেন? কানাডার আদালতের রায় কি আওয়ামী লীগের হাতে আছে? না তারা কানাডাকে প্রভাবিত করেছে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যারা প্রগলভ মনে করেন তারা কি এবার মত বদলাবেন? তিনি যে প্রায়ই বলেন, বিএনপি আসলে ষড়যন্ত্রের দল সেটা কি মিথ্যা? কানাডার আদালত এও বলেছে, বিএনপি সন্ত্রাসে জড়িয়েছে, ভবিষ্যতে জড়াতে পারে। কথাটা ভেবে দেখার মতো। তারা আপাতত চুপ আছে বলে এ কথা মনে করার কারণ নেই তাদের ষড়যন্ত্র থেমে আছে। আমরা যারা বিএনপি জমানা দেখেছিÑ যৌবনের শুরুতে জিয়াউর রহমানের কঠিন শাসনে দেশকে বদলে যেতে দেখেছি, আমাদের বিভ্রান্ত করা সহজ নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন দু-একটা সভায় উপস্থিত ছিলাম যেখানে একবারের জন্যও বুঝতে পারিনি কত দুঃসময় আর কত বিভ্রান্তি ঝুলে আছে বাংলাদেশীদের জীবনে। চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে অনুষ্ঠিত সেই সভায় জাগদলের সমাপ্তি ঘোষণা করে নতুন যে দলের রূপরেখা দেয়া হয় তারই আরেক রূপ বিএনপি। সে সভায় প্রয়াত স্পীকার তুখোড় বক্তা নামে পরিচিত শামসুল হুদা চৌধুরীর বক্তব্য শুনে ‘থ’ বনে গিয়েছিলাম। স্বভাবসুলভ ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় তিনি পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের বিষয় নিয়ে বলেছিলেন, জেনারেল অরোরা ও জেনারেল নিয়াজীর সেই দলিল নাকি সই হয়েছিল নড়বড়ে এক চারপেয়ে টেবিলে। মুচকি হাসিতে শামসুল হুদা ব্যঙ্গ করছিলেন এই বলে, আমাদের বিজয়ও নাকি তেমনি নড়বড়ে। যাদু মিয়া, শাহ আজিজ পরে মাওলানা মান্নানের হাতে পড়া বিএনপি আসলে কি সে কথা আজকের প্রজন্ম না বুঝলেও আমাদের জানা আছে। সে তখন থেকে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি সামনে রেখে এ দেশকে এই জাতিকে পাকি ভাবধারায় চালানোর জন্য বিএনপি নামক দলের পেছনে ছিল মুসলিম লীগের পরাজিত প্রতিশোধপ্রবণ নেতারা। আর তাদের খুঁটি ছিল বাংলাদেশের মুক্তি ও জন্মে অবিশ্বাসী পাকি রাজাকার জামায়াতের দড়িতে বাঁধা। কোন্ পুণ্যবলে জানি না আজ এত বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে এ দেশের ইতিহাস আলোর মুখ দেখেছে। তা না হলে এতদিনে মুক্তিযুদ্ধের হাড়ে দূর্বা গজিয়ে যেত। বিএনপির ব্যাপারে কানাডা আজ যা বলছে এ দেশের কিছু সাহসী মানুষ অনেক আগে থেকেই তা বলে আসছেন। এক সময় তাদের সমঝোতায় অবিশ্বাসী কট্টর বলে যারা সমালোচনা করতেন এখন তারা কি মত পাল্টাবেন? আসলে দেশ ও জাতির সমস্যা বিএনপি যতটা, তারচেয়ে বেশি এর পেছনে থাকা কিছু নষ্ট মানুষ আর সুশীলের প্ররোচনা। বিএনপিকে এরাই বাঁচিয়ে রেখেছে। খেয়াল করবেন ফরহাদ মযহারের মতো বুদ্ধিজীবী আসিফ নজরুলের মতো কূটতার্কিক বা আলো-অন্ধকারে বড় হওয়া পত্রিকার সাংবাদিক-লেখকরা কতটা ভয়ানক। এরা নিজেরা বিলেত আমেরিকায় ঘুরে বেড়ায়, সন্তানদের সে সব দেশে রাখে, নিজেরা ঢাকা ক্লাব ছাড়া বিনোদনের জায়গা খুঁজে পায় না, আবার এরাই জাতিকে অন্ধ ভারত বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িকতা আর পাকি প্রেমে ধানের শীষে মজিয়ে রাখে। সাইলেন্ট মেজরিটি নামের ভয়াবহ জায়গাটা এদের তৈরি। এই একুশেও এটিএনের অনুষ্ঠানে আসা প্রথম আলোর এক নব্য লেখক যে সমঝোতা বা রিকনসিলিয়েশনের কথা বলল তার ভেতরে লকলকে বিএনপি সাপ। যার মানে এই সবাই আমরা সুখে থাকার শর্ত হচ্ছে রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধার গলায় গলায় মিলন। এই ধারণা মাঠে এনে বিএনপি এ দেশেকে কয়েক যুগ পিছিয়ে দিয়েছিল। অথচ এটি না সম্ভব না এর কোন ভিত্তি আছে? দুনিয়ার বহু দেশে যুদ্ধ হয়েছে। নিজেদের ভেতর জাতিসত্তার অন্তর্গত দ্বন্দ্বে যুদ্ধে বিশ্বের ইতিহাস ভিয়েতনাম। মাত্র দু’মাস আগে আমি সে দেশে দেখে এসেছি উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের কলহ এখন অতীত। সায়গনের নাম পাল্টে হো চি মিন সিটিতে যারা নাখোশ তারাও এখন বাগে পোষ মেনে সভ্য নাগরিক। তাদের সামনে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। ভিয়েতনাম কিভাবে এগিয়েছে না গেলে দেখা হতো না। এখন ওবামা তাদের প্রিয় অতিথি। তাদের মানুষের কণ্ঠে শুনেছি চীনের রাষ্ট্রপতিকে তারা বাহ্যিকভাবে সম্মান জানালেও ওবামাকে তারা অন্তরে ঠাঁই দিয়েছে। শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। শত্রু বা দুশমন যদি আধুনিক হয়, যদি হয় পরিবর্তনশীল, যদি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে যায় বন্ধুত্ব তখন প্রাসঙ্গিক। আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের দুশমন পাকিস্তান একটি প্রতিক্রিয়াশীল দেশ। তার আচরণ, তার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কেন, সারা দুনিয়ার জন্য উদ্বেগের-আতঙ্কের। সেই পাকিস্তানের ছায়া সঙ্গীকে কিভাবে সমর্থন করে এই সুশীলরা? কিভাবে আমরা আশা করি সাপের বন্ধু ছোবল মারবে না? শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, পাকিদের ষড়যন্ত্র এখনও বহাল। তারা এখন গণহত্যা নিয়ে বিহারী নিধনের নতুন গল্প বানাচ্ছে। সেখানে তাদের পরম বন্ধু বিএনপি। তাই যদি আরও আগে ভাগেই খালেদা জিয়া কিংবা গয়েশ্বর বাবুরা কি করে ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন? তারা মূলত এই এজেন্ডার পরিকল্পক। মাঠ যাচাই করার পর বুঝে শুনে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সেখানে তাদের পথ যে আস্তে আস্তে সন্ত্রাসের দিকে যেতে পারে সেটা তো কিছু দিন আগেই দেখেছি আমরা। দেশের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে গদী দখলের জন্য তারা হেন কাজ নেই করেনি। আগুনে মানুষ পুড়িয়ে বার্ন ইউনিটের বাতাস ভারি করে যান পুড়িয়ে তারা যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল সেটা আমরা ভুলে যাইনি। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বে দেশ সে আগুনের আঁচ নিভিয়েছে। জান দিয়ে মোকাবেলা করে দেশ বাঁচিয়েছিল পুলিশ। সে দলকে কানাডার মতো আধুনিক দেশের আদালত সন্ত্রাসী বলবে না তো কি বলবে? দিশেহারা বিএনপির এখন কঠিন সময়। তারা যে আশায় বসে আছে সে আশা পূরণ হতে দিলে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে বাংলাদেশ। তাই সাধু সাবধান। এখনও তাদের আস্ফালন শেষ হয়নি। কাল খবরে দেখলাম রিজভি সাহেব বলেছেন, এসব খবর নাকি সরকারী দলের বানানো। আবার আরেক খবরে পড়লাম গয়েশ্বর বাবু বলেছেন, বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না। এসব কথার পেছনে যে ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের উচিত তাতে হাত দেয়া। তারা এখন মাঠের রাজনীতি বাদ দিয়েছে প্রায়। সেটা কোন সুখকর কিছু না। এই বিষধর সাপ বা নোংরা রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বিএনপিকে। না হলে তাদের সম্মান তো সম্মান, অস্তিত্বও যে হুমকির মুখে পড়বে সেটা পরিষ্কার করার সময় এসেছে। সেটা করতে না পারলে এ দেশের রাজনীতি উন্নয়নের সঙ্গে চলতে পারবে না। কানাডা যা করেছে আমরা তা পারিনি। আমরা যা করব বা করতে পারব সেটা তারা পারবে না। এই কথা মনে রাখলেই পথ খুঁজে পাবে শুদ্ধ রাজনীতি।
×