ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েকটি অনলাইন শপ সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কয়েকটি অনলাইন শপ সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে

এমদাদুল হক তুহিন ॥ বেসরকারি চাকরিজীবী মাজহারুল হক অনিক। দিনের অধিকাংশ সময় তিনি ব্যস্ত থাকেন। ফলে তার মার্কেটে যাওয়ার সুযোগও কম। পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কিনতে প্রায়শই দারস্থ হন ই-কমার্স সাইটের। এই শীতের প্রথম দিকে ‘সাদমার্ট ডটকম’ নামের একটি ই-কমার্স সাইটে জ্যাকেটের বিজ্ঞাপন দেখে তা তার পছন্দ হয়। নির্দিষ্ট এই পণ্যটি হাতে পেতে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ই-মেইলের মাধ্যমে অর্ডার দেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির নিয়মানুযায়ী পরিশোধ করেন অর্ধেক মূল্য। অগ্রিম এই অর্থ পরিশোধের তথ্য নিশ্চিত করা হয় সঙ্গে সঙ্গেই। শর্ত মোতাবেক, ৩৫ দিনের মধ্যে পণ্যটি অনিকের হাতে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু না! ৩৫ পেরিয়ে ৬৭ দিনের মাথায়ও অর্ডারকৃত ওই জ্যাকেট পাওয়া হয়নি অনিকের! শীত শেষ এখন বইছে বসন্তের হাওয়া। অথচ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কোনরূপ যোগাযোগ করা হয়নি বলে অভিযোগ অনিকের। আর প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মুঠোফোনে তার সঙ্গে ৩ বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে যে মেইল থেকে পণ্যের অর্ডার করা হয়েছিল সে মেইল কিংবা মুঠোফোনে মেসেজ করেও পাঠানো হয়নি কোন বার্তা। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তা অনিক বলছেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে তারা পণ্য পৌঁছে না দিয়ে ব্যবসায়িক নৈতিকতা ভঙ্গ করেছে; যা অনলাইন মার্কেটিংয়ের আড়ালে ডিজিটাল প্রতারণা।’ একইভাবে ই-কমার্স সাইট ‘আজকের ডিল ডটকম’-এ ৫ হাজার এম্পিয়ায়ের একটি পাওয়ার ব্যাংকের অর্ডার দেন শাকিল আহমেদ। তার কাছে যখন পণ্যটি পৌঁছে দেয়া হয়, দেখা যায় সেটি মাত্র ৩ হাজার এম্পিয়ারের। শাকিল বলছেন, ‘আমি যে পণ্যটির অর্ডার দিইÑ সেখানে লেখা ছিল ৫ হাজার মাইক্রো এম্পিয়ার। কিন্তু দিয়েছে মাত্র ৩ হাজারের, যা দিয়ে মোবাইলে ৩০ শতাংশ চার্জও দিতে পারি না। এর আগেই পাওয়ার ব্যাংক অফ হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘অভিযোগ জানানোর পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কেবল দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু পণ্যটি পাল্টে দেয়া হয়নি।’ এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ই-কমার্স ব্যবসার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের অভিযোগ। ভোক্তার বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা মেতে উঠেছে প্রতারণায়। হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে সম্ভাবনাময় এ খাতটিকে। জানা গেছে, বর্তমানে ই-কমার্স সাইটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অনলাইন শপিং বা ই-কমার্স সাইটের দিকে ঝুঁকছেন। এতে বেঁচে যাচ্ছে তাদের মহামূল্যবান সময়, অপচয় রোধ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টার। সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ই-কমার্সের পরিধিও। এর প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে বহু হতাশাগ্রস্ত বেকার তরুণের। বর্তমানে এর ওপর ভর করে চলছে বহু পরিবার। মুহূর্তেই সুখের হাসি ঝিলিক দিচ্ছে এসব পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মুখেও। বিপরীতে এই জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে গুটি কয়েক অসাধু ব্যবসায়ী খাতটিকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। তারা মেতে উঠছে নিত্যনতুন প্রতারণায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা ও ভাল মানের ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, ক্রমবর্ধমান হারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ই-কমার্স সাইটগুলোর কোন কোনটি নকল পণ্য সরবরাহ করছে। কেনাকাটা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রতারণার ঘটনাও। নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, এক পণ্য অর্ডার দিলে অন্য পণ্য সরবরাহ, এমকি দাম পরিশোধের পর পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগ বেশ কয়েকটি সাইটের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারণার এসব ঘটনা অব্যাহত থাকলে আস্থার সঙ্কটে পড়বে সম্ভাবনাময় এ খাত। তাদের ভাষ্য, ভোক্তাদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি ব্যবসায়ীদেরও সৎ মনের অধিকারী হতে হবে। কেননা সততা ছাড়া ব্যবসায় টিকে থাকা অসম্ভব। সাদমার্ট ডটকম একটি ই-কমার্স সাইট। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, তাদের ওয়েবসাইটে ৪ কোটির অধিক পণ্য রয়েছে। এর সবগুলো পণ্যই আসে চীন থেকে। এসব পণ্য পাইকারি এবং খুচরা দুভাবেই বিক্রি হয়। অর্ডার করার ক্ষেত্রে পণ্যের অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। অর্ডার নিশ্চিত হওয়ার পর সেসব পণ্য চীন থেকে দেশে আনা হয়। সে ক্ষেত্রে বিমানে করে পণ্য আনতে তারা সময় নেয় সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ৩৫ দিন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা এমন তথ্য জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। আর এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেই অভিযোগ মাজহারুল হক অনিকের। জনকণ্ঠকে অনিক বলেন, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর আমি সাদমার্টে একটি জ্যাকেট অর্ডার করি। নিয়মানুযায়ী অর্ডারকৃত পণ্য মূল্যের অর্ধেক টাকা বিকাশের মাধ্যমে তাদের একটি মার্চেন্ট একাউন্ট নাম্বার (০১৬১১১২২২৮৬) এ পাঠাই। সাদমার্ট কাস্টমার কেয়ার থেকে আমাকে কনফার্ম করে বলা হয় ৩৫ দিনের মধ্যে পণ্যটি আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। এখানে উল্লেখ্য যে, পণ্যটি চীন থেকে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ৬৭ দিনেও আমি আমার ক্রয়কৃত পণ্যটি এখন পর্যন্ত হাতে পাইনি। কবে পাব সেটাও জানি না। বিস্ময়কর হচ্ছে, সাদমার্টের পক্ষ থেকেও আমাকে কিছু জানানো হয়নি বা যোগাযোগ করা হয়নি। অনিকের ভাষ্য, সাদমার্ট এতে তাদের ব্যবসায়িক নৈতিকতা ভঙ্গ করেছে, যা এক ধরনের ডিজিটাল প্রতারণার শামিল।
×