ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে শিল্পমন্ত্রী

ঢাকা বাসযোগ্য করতে বাইরে স্থানান্তর করা হবে শিল্প

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঢাকা বাসযোগ্য করতে বাইরে স্থানান্তর করা হবে শিল্প

সংসদ রিপোর্টার ॥ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকা বাসযোগ্য করার জন্য শহরের মধ্য হতে সকল প্রকার কল-কারখানা শহরের বাইরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) আওতায় সাভারে ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমির ওপর অত্যাধুনিক ও পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য জাহান আরা বেগম সুরমার প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, ঢাকার মেট্রোপলিটন আবাসিক এলাকা বিশেষ করে পুরনো ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হতে কেমিক্যাল মজুদাগার/কারখানা দ্রুত সরানোর জন্য বিসিকের আওতায় কেরানীগঞ্জ উপজেলাধীন সোনাগান্ধা মৌজায় কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের বিষয়টি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দিলারা বেগমের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী সাভার শিল্পনগরীর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, হাজারীবাগে অপরিকল্পিত, দীর্ঘদিনের পুরনো, অবিন্যস্ত ও দূষিত পরিবেশে বিদ্যমান ১৫৫টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামে ওই শিল্পনগরীতে ২০৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করেছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন পর্যায়ে রয়েছে। সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আমির হোসেন আমু জানান, শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার টেকসই উন্নয়নকল্পে জাতীয় শিল্পনীতি- ২০১০ যুগোপযোগী করে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিল্প ও বিনিয়োগ নীতিমালাকে উদার করা হয়েছে। এ নীতিমালার আলোকে বিভিন্ন সুবিধাদি দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। নির্বাচন এলেই শুরু হয় দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, নির্বাচন এলেই শুরু হয় দেশী-বিদেশী নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার কারণেই বিএনপি বিদেশের আদালতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ দলকে দেশের জনগণও প্রত্যাখ্যান করেছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের এম এ মালেক, বেগম লায়লা আরজুমান বানু, ফরহাদ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন ও গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন। আলোচনা শেষে সংসদ অধিবেশন আগামী রবিবার বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দলের ফরহাদ হোসেন বলেন, দেশ যখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চলছে। অগ্নিসন্ত্রাস, জ¦ালাও-পোড়াওয়ের পর জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয় হলি আর্টিজানের মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। কিন্তু সরকার শক্ত হাতে জঙ্গীবাদকে দমন করেছে বলেই দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতির কথা দেশের জনগণ কোনদিন ভুলবে না। তাদের এই অপকর্মের জন্যই কানাডার ফেডারেল কোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে রায় দিয়েছে। বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিকল্প জ্বালানির পরিকল্পনা ॥ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানি সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গৃহস্থালিতে এলপিজি সরবরাহে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক হতে বেঁচে যাওয়া এ গ্যাস শিল্প খাতে সরবরাহ করা হবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের লিখিত জবাবে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ তথ্য জানান। তিনি জানান, দেশের প্রায় ১২-১৩ শতাংশ (২ কোটি) মানুষ গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুত, সার, শিল্প, বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে প্রাকৃতিক গ্যাস অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেন, চাহিদার সঙ্গে গ্যাসের উৎপাদন সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় বর্তমান সরকার বিদ্যুত ও শিল্প খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করছে। তবে অন্যান্য খাতে গ্যাসের নতুন সংযোগ আপাতত বন্ধ রয়েছে। সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, সরকার দেশে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কঠোর হস্তে দমন করছে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে কতিপয় ক্ষমতাবান দুষ্কৃতকারী এ কাজে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য বেগম সানজিদা খানমের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, বর্তমান সরকার সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিতকল্পে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে মোট ১১ হাজার ৩০২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ২০১৭ হতে ২০২১ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
×