ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

লিটন হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল কাদের খানের বাড়ি থেকে উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

লিটন হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল কাদের খানের বাড়ি থেকে উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৩ ফেব্রুয়ারি ॥ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকা-ে ব্যবহৃত পিস্তল ও ৬ রাউন্ড বুলেটসহ একটি ম্যাগজিন কাদের খানের বাড়ির উঠোনের আম গাছের নিচে মাটি খুঁড়ে বুধবার গভীর রাতে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে একইদিনে ঢাকা থেকে পলাতক কিলার আনোয়ারুল ইসলাম রানাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে সুন্দরগঞ্জের ভেলারাকাজির ভিটা গ্রামের মৃত তমসের আলীর ছেলে। সে ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কর্মরত ছিল। লিটন কিলিং মিশনে সে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর জন্য হাজির করে পুলিশ। এদিকে কাদের খানের পাসপোর্ট জব্দ এবং যে পরিবহনের টিকেট কেটে কিলারদের বগুড়া থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল সে টিকেটেরও কপি উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। বুধবার বিকেল থেকেই পুলিশ কাদের খানের গ্রামের বাড়ি সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে এমপি লিটন খুনে ব্যবহৃত পিস্তলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে। এ সময় ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা বাড়িসংলগ্ন ৩টি পুকুরের পানি সেচে ফেলে। কিন্তু সেখান থেকে কোন আলামতই পাওয়া যায়নি। অবশেষে রিমান্ডে নিয়ে কাদের খানকে চাপ সৃষ্টি করা হলে তিনি পিস্তলের কথা স্বীকার করেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে রাতে বাড়িতে যাওয়ার পর তার নির্দেশিত আম গাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে অস্ত্র ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তল ও ম্যাগজিন দেখেই বোঝা যায় দেড় থেকে দু’মাস আগে এগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। সুন্দরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে কিলারদের প্রশিক্ষণ ॥ সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে কাদের খানের একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল গ্রেফতারকৃত কিলার শাহীন। পুলিশকে দেয়া তাদের তথ্য অনুযায়ী এই বাড়িতেই কিলারদের পিস্তল চালানো এবং কিলিং মিশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিত কাদের খান। এই বাড়ি থেকেই অস্ত্রসহ গিয়ে এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়। সেদিন ওই পিস্তলটির ম্যাগজিনে ৬ রাউন্ড বুলেট ছিল। কাদের খানের বাড়িতে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ পিস্তল থেকে একটি বুলেট বেরিয়ে গিয়ে দেয়ালে লাগে। পুলিশের অভিযানকালে ঘরের দেয়ালে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। ওই পিস্তলের ম্যাগজিনে থাকা ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়েই খুনীরা এমপি লিটনকে হত্যা করে। আ’লীগ নেতা চন্দনকে খুঁজছে পুলিশ ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বামনডাঙ্গার মনমথ গ্রামের সুশীল সরকারের ছেলে চন্দন সরকারকে পুলিশ এখন খুঁজছে। কাদের খানের জব্দ করা মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তার সঙ্গে এই চন্দন সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। সেই মূলত খুনের দিন এমপি লিটনের বাড়িতে তার অবস্থান এবং অনুকূল পরিবেশের খবর মোবাইল ফোনে খুনীদের জানায়। তার তথ্যে কিলিং মিশন সফল করে খুনীরা। কাদের খানের অবৈধ অস্ত্রের খোঁজে পুলিশ ॥ পুলিশ কাদের খানের অবৈধ অস্ত্রের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে লাইসেন্স করা পিস্তল এবং ১০ রাউন্ড বুলেট জব্দ করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় আরেকটি লাইসেন্স বিহীন পিস্তল বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে আরও লাইসেন্সবিহীন পিস্তল এবং অন্যান্য অস্ত্র তার কাছে রয়েছে। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে বলে পুলিশ আশাবাদী। কে এই কাদের খান? সুন্দরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে জানা গেছে, কাদের খানের পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ময়মনসিংহ জেলায়। তার দাদা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামে জমি কিনে পরিবার-পরিজনসহ বসবাস শুরু করেন। কাদের খানের পিতা হাসেন আলী খাঁ। তার স্ত্রী ডাঃ নাসিমা আকতার একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে সরকারী চাকরি করছেন। সেনাবাহিনী থেকে কাদের খান কর্নেল হিসেবে অবসর নেয়ার পরে বগুড়ার রহমান নগর দিলাদারপাড়ায় গরিব শাহ ক্লিনিক নামে একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। ক্লিনিকের সঙ্গেই তিনি বসতবাড়িও নির্মাণ করে বগুড়াতেই বসবাস শুরু করেন। এর পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতেও একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে তিনি মাঝে মধ্যে এসেই বসবাস করতেন। এ সময়টিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন। পরে মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে জামায়াত প্রার্থী সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুল আজিজকে পরাজিত করে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
×