ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দাবার রানীর অনাড়ম্বর জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দাবার রানীর অনাড়ম্বর জন্মদিন

রুমেল খান ॥ সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন ... নামটা বললে বোধকরি কেউই তাকে চিনবেন না। যদি বলি তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক দাবা মাস্টার, তার ডাকনাম রানী, বিয়ের পর নিজের ডাকনামের সঙ্গে যোগ করেন স্বামীর ‘হামিদ’ নামটি ... তাহলে নিশ্চয়ই চিনতে সমস্যা হবে না! হ্যাঁ, ১৯৮৫ সালে ফিদে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব পাওয়া এবং তিনবার ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ‘বাংলাদেশের দাবার রানী’ খ্যাত তিনিই হচ্ছেন রানী হামিদ। বাংলাদেশের এই দাবা কিংবদন্তির ৭৩তম জন্মদিন ছিল বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)। তাকে জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা। জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি সাধারণত জন্মদিন পালন করি না। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও আমার ছেলেরা জোর করে আমাকে বাধ্য করেছে জন্মদিনের কেক কাটতে, রাত ১২টায়। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, আমি যেন সুস্থ থাকি এবং আরও অনেকদিন খেলতে পারি।’ যতদিন সুস্থ থাকবেন, আর আনন্দ পাবেন ততদিনই খেলে যেতে চান রানী হামিদ। শুরু করার পর পাঁচ বছর লেগেছে তার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পেতে। নিজের সময়ে খুব বেশি ভাল দাবাড়ু বা প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় স্বীয় দাবা দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনেক সমস্যা হয়েছে রানীর। ড. আকমল হোসেন ছাড়া তার সময়ে ভাল দাবাড়ুই ছিল না। তার সঙ্গে খেলে নিজের খেলার মান বাড়াতে হয়েছিল রানীকে। শুধুই দাবার প্রতি আনন্দের জন্য নয়, সাংসারিক কোন চাপ না থাকা, স্বামী প্রয়াত এমএ হামিদের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং পরে সন্তানদের (এদের একজন কায়সার হামিদ ছিলেন আশির দশকের প্রবল জনপ্রিয় জাতীয় ফুটবলার) উৎসাহও রানী হামিদকে লম্বা সময় দাবায় থাকতে সাহায্য করেছে। দাবা খেলাটা তিনি শুরু করেছিলেন স্কুলজীবন থেকেই। রানী মনে করেন, এ প্রজন্মের শিশুদের দাবা খেলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। এজন্য আগ্রহী দাবা সংগঠকদের এবং পৃষ্ঠপোষকদের আরও বেশি করে আর্থিক সহায়তা করা উচিত। সেই সঙ্গে মহিলা দাবাড়ুদের জন্য আলাদা বাজেটও হওয়া দরকার। এদেশে দাবাকে এখনও পেশা হিসেবে নেয়ার মতো প্রেক্ষাপট সেভাবে তৈরি হয়নি। যেসব দাবা টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, সেগুলোতে খুব কমই আর্থিক পুরস্কার দেয়া হয়। দিলেও পরিমাণটা থাকে খুবই নগণ্য। এ নিয়ে আক্ষেপ আছে রানীর। এই প্রজন্মের অনেক মহিলা দাবাড়ুরই আদর্শই হচ্ছেন রানী হামিদ। তারা চায় রানী হামিদের মতো হতে। এ ব্যাপারে রানীর প্রতিক্রিয়া, ‘আমি তো চাই ওরা আমাকেও ছাড়িয়ে যাক। তাহলে দেশের মহিলা দাবা অনেক উন্নতি করবে, এটাই প্রত্যাশা করি।’ জাতীয় দাবায় ২১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রানী হামিদ। এটা বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু দাবা ফেডারেশনের অদক্ষতা, অনীহায় এটি গিনেজ বুকে এখনও অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি পীড়া দেয় রানীকে। এই বয়সেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলে সাফল্য পাচ্ছেন রানী। এটা তারজন্য অনেক গুরুত্বর্পূণ ব্যাপার। এতে আরও খেলে যাবার প্রেরণা পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের মহিলা দাবার উন্নয়নে ১৯৮৫ সাল থেকেই কাজ করছেন রানী। ‘মহিলা দাবা সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তিনি। মাঝে অবশ্য কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০০০ সাল থেকে সচল হয়েছে সংগঠনটির কার্যক্রম।
×