ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মিতু হত্যা মামলার শেষ পরিণতি এখনও অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মিতু হত্যা মামলার শেষ পরিণতি এখনও অনিশ্চিত

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার শেষ পরিণতি কি হবে তা এখনও অনিশ্চিত। সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গত বছরের জুনে চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকায় ভাড়াটিয়া খুনীচক্র কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। সময় গড়িয়েছে আট মাস। এ হত্যা মামলার তদন্ত করছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। মামলার গতি কোন্ পথে তা এখনও পরিষ্কার নয়। হত্যার মূল নির্দেশদাতা ছাড়া আর সবই উদঘাটিত। তবুও নিষ্পত্তির বিষয়টি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তা এডিসি কামরুজ্জামান ইতোমধ্যে বাবুল আক্তার, তার ছোট ভাই, শ্বশুর-শাশুড়িসহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এর পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত আসামিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী হত্যাকা-ের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সন্ত্রাসী মুসা। যে বাবুল আক্তারেরই প্রধান সোর্স। তদন্ত সংস্থার মতে মুসা পলাতক। কিন্তু মুসার স্ত্রী তখন থেকেই বলে আসছেন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। এছাড়া হত্যাকা-ে জড়িত দু’জন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া হত্যাকা-ের জন্য অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলাইয়া গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছে। বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, পুলিশ এ ভোলাইয়ার কাছ থেকে আদালতের মাধ্যমে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করেনি। খোদ পুলিশের মাঝেই আলোচনা হচ্ছে ভোলাইয়া থেকে জবানবন্দী গ্রহণ করা হলে মূল রহস্য আইনগতভাবে উন্মোচন হয়ে যায়। সে নাকি জবানবন্দী দিতেও রাজি ছিল। কিন্তু কেন নেয়া হয়নি তা রহস্যজনক। অপরদিকে, মুসাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এ ঘটনার মূল সাক্ষী তার স্ত্রী নিজে। কিন্তু পুলিশ বলছে, সে পলাতক। তবে অন্যান্য সূত্র বলছে, মুসাকে গুম করা হয়েছে। কে করেছে এবং কেন করেছে তাও রহস্যময়। এদিকে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিতু হত্যার সঙ্গে স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার আইজি একেএম শহীদুল হক চট্টগ্রামে এসে বলে গেলেন, মিতু হত্যার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মিতু হত্যাকা-ের অন্তর্নিহিত রহস্য পুরোপুরিভাবে উদঘাটিত হয়েছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে ভাড়াটিয়া যেসব খুনী জড়িত তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। কে কখন ছুরিকাঘাত করেছে এবং পরে কে গুলি করেছে সবই উদঘাটিত হয়েছে। কিন্তু ভাড়াটিয়াদের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত হওয়ার জন্য কে নির্দেশ দিয়েছিল, অর্থাৎ মিতু হত্যার নির্দেশদাতা কে-তার উত্তর মিলছে না। এর উত্তরে তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, মুসাকে পাওয়া গেলে সবই পরিষ্কার হবে। কারণ, ভাড়াটিয়া খুনীদের ভাড়া করেছিল ওই মুসা। সেই মুসাই তো এখন পুলিশের খাতায় নিখোঁজ। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, মুসা আসলে জীবিত না মৃত। শুরু থেকেই পুলিশের বক্তব্য তকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর সকলকে পাওয়া গেছে। হত্যার পরিকল্পনা, অস্ত্রের যোগানদাতা থেকে শুরু করে সবকিছু উদঘাটিত হয়েছে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরি এমনকি মিতুর মোবাইল ফোনের সিম কার্ডটিও সর্বশেষ উদ্ধার হয়েছে। শুধু মিলছে না হত্যার পরিকল্পনা কার মাধ্যমে হয়েছে বা কে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে প্রথম দিকে মিতুর বাবা-মা কখনও জামাতা বাবুল আক্তারের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকলেও পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা উভয়ই তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে যান। আকারে ইঙ্গিতে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। তারা এ বক্তব্যও দেন যে, বাবুল আক্তার এ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়াও বাবুল আক্তারের পরকীয়ার নানা ঘটনাও প্রচার মাধ্যমে এসেছে। যদিও এসব বিষয় পরে অস্বীকারও করা হয়েছে। মিতু হত্যার ঘটনা তদন্ত কাজ কখন শেষ হবে তা এখনও অনিশ্চিত। অস্ত্র যোগানদানকারী ভোলাইয়া হত্যা পরিকল্পনাকারীদের একজন। তার কাছ থেকেই অস্ত্র ভাড়ায় নেয়া হয়েছিল। পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোলাইয়া পুরো ঘটনা জানে। কিন্তু তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ কেন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী তখন নেয়নি এবং এখনও নিচ্ছে না তাই বড় ধরনের প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। বলা হচ্ছে, মুসাকে পাওয়া না গেলে এ মামলার নিষ্পত্তি কি করা যাবে না? যেহেতু ভোলাইয়া পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম এবং সে জবানবন্দি দিতে আগ্রহী ছিলেন তাহলে এখনও তো আইনগতভাবে সময় রয়েছে তার জবানবন্দী গ্রহণ করা। এ প্রক্রিয়ায় হত্যা রহস্যের উন্মোচন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা নিহিত। অথচ, সেদিকে কেন যাওয়া হচ্ছে না তা তাদের কাছেও প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। জানতে চাওয়া হলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি পুরোপুরিভাবে তদন্ত কর্মকর্তার উপর নির্ভর। এক্ষেত্রে কারও চাপ বা অযাচিত হস্তক্ষেপ চলে না। তদন্ত কর্মকর্তা ইতোমধ্যে পুরো বিষয়টি গুছিয়ে এনেছেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে মামলার চার্জশীট দিতে সময় নেবে না। কিন্তু তারপরও বিষয়টি নিয়ে অনাহূতভাবে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।
×