ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু কৃষি ভার্সিটির সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

কৃষির উন্নয়নে টেকসই কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করুন

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কৃষির উন্নয়নে টেকসই কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করুন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশ এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধন। মননশীল, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলোর মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো বিশ^মানের জ্ঞান সঞ্চারণ, নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন এবং সুদক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, যারা দেশ, সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আগামীর পথে। তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, কিন্তু কমছে কৃষি জমি। তাই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং ক্রমহ্রাসমান জমির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কিভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় তা ভাবতে হবে। দেশের কৃষি বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের সালনাস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। আমাদের আবহমান ঐতিহ্য মিশে আছে কৃষির সঙ্গে। মূলত বাঙ্গালী জাতির শেকড় নিহিত কৃষির মধ্যে। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা অসামান্য। দেশের জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা ও আমিষের চাহিদা পূরণ, শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ রফতানি বাণিজ্যে কৃষি খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য। তাই কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, গবেষণলব্ধ নতুন জ্ঞান উন্নয়নের চাবিকাঠি। কৃষি খাতের সম্প্রসারণে আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ু উপযোগী পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবনে মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া কৃষকরা যাতে এসব প্রযুক্তি সহজে ব্যবহার করতে পারে তাও নিশ্চিত হতে হবে। মনে রাখতে হবে উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তি কৃষিবান্ধব না হলে তা বাস্তবে কোন কাজে আসবে না। ধনী-গরিব, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল দেশেই কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা কৃষিকে ভুলবেন না, উৎসকে ভুলবেন না। বরং কৃষির উন্নয়নে টেকসই কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন। কৃষকরা যাতে উৎপাদনে উৎসাহিত হয়, উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পায় তা নিশ্চিত করতেও সব সময় তাদের পাশে থাকবেন। এ জন্য উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। আলু, টমেটো, আম, আনারস, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল ও ফল সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে বেশিরভাগ সময়ই উৎপাদকগণ ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন এবং উৎপাদনে উৎসাহ হারান। তাই এসব বিষয়েও কৃষিবিদদের ভাবতে হবে। রাষ্ট্রপতি ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, একবিংশ শতাব্দির এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তোমরা দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে কৃষিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেছ, যখন বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের সকল শাখায় বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। অর্জিত জ্ঞানকে হালনাগাদ করে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে সময়ের দাবি মোকাবেলা করে এগিয়ে চলাই হবে তোমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমি আশাকরি তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন বিপ্লব সাধনে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা ও উদ্ভাবন ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের এক প্রান্তের উদ্ভাবনের সুবিধা অপর প্রান্ত ভোগ করছে। এদেশের দক্ষ কৃষি গ্রাজুয়েটরা এমনই উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিবে যাতে সারা বিশ্বের মানুষ ঘরে বসেই তার সুফল ভোগ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন প্যাভিলিয়নে বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে সমাবর্তন ভাষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবর রহমান। এতে স্বাগত ভাষণ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. ইসমাইল হোসেন মিঞা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবর রহমান। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ^বিদ্যালয়ের অটাম ২০০৯ থেকে অটাম ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রীপ্রাপ্ত ১ হাজার ১১৩ জনকে সনদ প্রদান করা হয়। এর আগে দু’টা ৪০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও বিশ^বিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক সদস্য এবং অনুষদের ডিনদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাবর্তন শোভাযাত্রা সহকারে অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। উল্লেখ্য, বিশ^বিদ্যালয় অটাম ২০০৯ থেকে অটাম ২০১৬ পর্যন্ত ৬১ জনকে পিএইচডি ডিগ্রী, উইন্টার ২০০৯ থেকে অটাম ২০১৬ পর্যন্ত ৫৩৪ জনকে এমএস ডিগ্রী, উইন্টার ২০০৯ থেকে উইন্টার ২০১৫ পর্যন্ত ৪৯৬ জনকে বিএস (কৃষি) ডিগ্রী, উইন্টার ২০১২ থেকে উইন্টার ২০১৫ পর্যন্ত ১০৪ জনকে বিএস (ফিশারিজ) ডিগ্রী এবং উইন্টার ২০১৫ টার্মে ১৮ জনকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
×