ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের বহুমাত্রিকতায় উজ্জ্বল বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিল্পের বহুমাত্রিকতায় উজ্জ্বল বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব

মনোয়ার হোসেন ॥ বসন্ত বিকেলে ঢুকে পড়ি উৎসব আঙ্গিনায়। চোখ চলে যায় বিস্তৃত উদ্যানের বাঁ পাশে। নজরে পড়ে আঁকাআঁকির দৃশ্য। রাধারমণ দত্ত বেদির সুবীর চোধুরী আর্ট ক্যাম্পে শিল্পীরা নিমগ্ন চিত্তে রাঙিয়ে যাচ্ছেন ক্যানভাস। চিত্রপটে উঠে আসছে নানাবিধ বিষয়। এ সময় রোকেয়া সুলতানার তুলির টান বিশেষভাবে কেড়ে নেয় মনোযোগ। রঙের ছটা ছড়িয়ে দেয়া তার চিত্রকর্মে চমৎকারভাবে উদ্ভাসিত হয়েছেন হাসন রাজা। এই মরমি সঙ্গীতসাধকের প্রতিকৃতির চারপাশজুড়ে গেছে পাখি ও ঘরবাড়ি। শিল্পী জানালেন, ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি বালা না আমার’ গানটির অনুপ্রেরণায় চিত্রিত হচ্ছে ছবিটি। চিত্রকর্ম সৃজনের এই সুন্দর দৃশ্যপট পেরিয়ে চলে যাই কুশিয়ারা কলোনেডে। সেখানে স্থাপত্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে মেলে ধরা হয়েছে আগামী দিনের সিলেট শহরের নান্দনিক রূপরেখা। বিপুল উৎসাহ নিয়ে সিলেটবাসী অবলোকন করছেন আপন শহরের ভবিষ্যত পরিকল্পনার নকশা। এর পর জিমনেশিয়ামের সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চের পথে পা চালাই। সেখানে পরিলক্ষিত হয় সিলেটী সিনেমাপ্রেমীদের ভিড়। পরিপূর্ণ মিলনায়তনে চলছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। দেখানো হচ্ছিল জাহিদুর রহিম অঞ্জনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘মেঘমল্লার’। এর পর সন্ধ্যা গড়াতেই কানে আসে শেকড়সন্ধানী সুরেলা শব্দধ্বনি। তখন উৎসবের মূল মঞ্চ হাসন রাজা মঞ্চে শুরু হয়েছে লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা। আর বিলম্বিত সন্ধ্যায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়েছে মণিপুরি থিয়েটারের নাটক ‘কহে বীরাঙ্গনা’। এভাবেই শিল্পের বহুমাত্রিকতায় উজ্জ্বলতা পেয়েছে মানবিক সাধনায় বেঙ্গল সাংস্কৃতি উৎসব সিলেট শিরোনামের আয়োজনটি। এ উৎসবের ভেন্যু সিলেটের আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী চলমান এ আনন্দ আয়োজনের দ্বিতীয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার। শিল্প-সাহিত্যের নানা অনুষঙ্গজুড়ে দেয়া এদিনের উৎসবে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ শীর্ষক কিডস কর্নার। বিকেল বেলায় সেখানে মনের আনন্দে এক শিশুকে খেলনায় ঘোড়ায় দুলুনি খেতে দেখা যায়। সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে সূচনা হওয়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনার প্রথমেই ছিল লোকগানের উপস্থাপনা। চড়া কণ্ঠের সুরকে আশ্রয়ে করে মঞ্চে আসেন বাউল ভজন খ্যাপা। একতারা, দোতারা ও ঢোলের সুর তোলা সঙ্গীতায়োজনে গেয়ে শোনান ‘গুরু আমারে কি রাখবেন করে চরণদাসী’, ‘নামাজ আমার হইলো না আদায়’, ‘আমি কাঙাল হবো মেঙে খাবো’, ‘যদি ত্বরিতে বাসনা’সহ বেশকিছু গান। সহজিয়া সুরে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে আদায় করে নেন করতালি। দ্বিতীয় পরিবেশনায় ছিল যন্ত্রসঙ্গীতের উপস্থাপনা। তবলার তালবাদ্যে মুখরিত উৎসবকে রাঙিয়ে দেয় বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই দলে ছিল ১০ বছরের তবলিয়া নসরাত-ই-জাহান খুশবুসহ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ সাত শিল্পী। এরপর একই সঙ্গে আধুনিক গান ও নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন মনোময় ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় দিনের সর্বশেষ পরিবেশনাটি ছিল অনবদ্য। লোকসঙ্গীতের যুগলবন্দী পরিবেশনা দিয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন চন্দনা মজুমদার ও শতাব্দী রায়। এদিনের আরেকটি উপভোগ্য উপস্থাপনা ছিল ‘কহে বীরাঙ্গনা’ নাটকের মঞ্চায়ন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের সৃষ্টি অবলম্বনে মণিপুরি থিয়েটার প্রযোজিত নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন শুভাশিস সিনহা। জ্যোতি সিনহার একক অভিনীত প্রযোজনাটি মুগ্ধ করেছে নাট্যপ্রেমী দর্শকদের। আজ হবে সাহিত্য সম্মেলন ॥ আজ শুক্রবার উৎসবের তৃতীয় দিন। ছুটির দিনে সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে উৎসব কার্যক্রম। কবি ও লেখকদের সম্মিলনে সৈয়দ মুজতবা আলী অনুষ্ঠিত হবে কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন। সান্ধ্যকালীন আয়োজনে রাগাশ্রয়ী বাংলা গান গাইবেন বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়। নজরুলসঙ্গীত ও সেকালের গান শোনাবেন সুবীর নন্দী ও ঝুমা খন্দকার। সব শেষে জীবনমুখী গান গাইবে কৃষ্ণকলি ও তার দল।
×