ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি সংসদে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি সংসদে

সংসদ রিপোর্টার ॥ কানাডার ফেডারেল আদালতে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দেয়ার পর বাংলাদেশেও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি উঠেছে সংসদে। রাজনৈতিক বিবেচনায় হত্যা মামলা প্রত্যাহার নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে মৃদু বিতর্ক হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়ে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারি বলেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এই বিএনপি গত নির্বাচনের আগে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। নারী-শিশুরা এখনও কাতরাচ্ছে। আমরা বারবার বলেছি, যারা যুদ্ধাপরাধী-সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়, তারাও সন্ত্রাসী। আল্লাহর গজব পড়েছে। বিদেশের মাটিতে এখন বিএনপিকে সনদ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বিএনপিরও নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মাইজভা-ারি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের বিচার করতে হবে। যেসব নেতা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি আমি। হত্যা মামলা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্ক ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান পয়েন্ট অব অর্ডারে রাজনৈতিক বিবেচনায় হত্যা মামলা প্রত্যাহারে সরকারী উদ্যোগের সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করলে অধিবেশনে মৃদু বিতর্ক হয়। পাল্টা বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এ ধরনের বক্তব্যকে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে এইচএম এরশাদের শাসনামলে ময়েজ উদ্দিন হত্যা মামলার আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার উদাহরণও তিনি তুলে ধরেন। তাদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, সরকার চাইলে যে কোন মামলা প্রত্যাহার করতে পারে, যদি সুনির্দিষ্ট গ্রাউন্ড থাকে। পীর ফজলুর রহমান একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের প্রতি স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আবারও রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নব্বইয়ের পর এরশাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার না হলেও ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৬টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। এসব মামলার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সরকারের দুই আমলে করা। আবার ওই সব মামলার বাদী সরকার নিজেই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় ৩৪টি হত্যা মামলাসহ নতুন করে ২০৬টি আলোচিত মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেড় শতাধিক মামলাই আওয়ামী লীগের পর পর দুই মেয়াদের সরকারের আমলে করা। গত বছরে করা মামলাও প্রত্যাহারের তালিকায় রয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের দায়ের করা মামলা সরকারই কী করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে? এটা নিয়ে সবাই বিস্মিত। সেসব মামলার মধ্যে ধর্ষণের মামলা, নাশকতার মামলা, ঘুষ লেনদেনের মামলা, সরকারী টাকা আত্মসাতের মামলা, ডাকাতি মামলা, অবৈধভাবে নিজ অস্ত্র দখলে রাখার মামলা, কালোবাজারি, অপহরণ, জালিয়াতি, বোমা, চুরি ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা হলে যাদের পরিবারের সদস্য খুন হয়েছে তারা কি বিচার পাবে না? এ ৩৪টি হত্যা মামলায় কেউ না কেউ তো খুন হয়েছে। এ সময় ডেপুটি স্পীকার পীর ফজলুর রহমানকে বার বার থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন এবং বসতে বলেন। একপর্যায়ে পীর ফজলুর রহমান তার বক্তব্য শেষ করলে ডেপুটি স্পীকার বলেন, ‘আপনি একটি খবরের কাগজের ওপর ভিত্তি করে এ কথাগুলো বলছেন। সরকার যে কোন মামলা প্রত্যাহার করতে পারে, যদি তার কাছে সে ধরনের সুনির্দিষ্ট কোন গ্রাউন্ড থাকে। প্রত্যাহার করতে হলে যে আদালতের মামলা, সে আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের কাছে আবেদন করতে হয়। সরকার সুপারিশ করলেই কোর্ট মামলা প্রত্যাহার করবে, এটা কোনদিনই হয় না। সুপারিশ করলেই মামলা প্রত্যাহারিত হবে এটা বলা যায় না। তাই অনুমানভিত্তিক কোন বক্তব্য না রাখাই শ্রেয়। পীর ফজলুর রহমানের বক্তব্যের বিরোধিতা করে চীপ হুইপ বলেন, বিরোধী দলে থাকলে অনেক কথাই বলা যায়। পত্রিকায় খবর দিয়ে অনেক খবর দেয়া যায়। কোনটা সত্য কোনটা অসত্য এটা যাচাই করার সুযোগ থাকে না। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন আমাদের গাজীপুরের ময়েজ উদ্দিন হত্যাকা-ের শিকার হলেন। হত্যাকারীর নাম আজম। এরশাদ তখন ওই জায়গায় গিয়ে তাকে ভাই বলে পরিচয় করে দিয়ে ময়েজ উদ্দিন হত্যা মামলার আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিলেন। আজ উনি ৩৪টি মামলার কথা বলছেন। তিনি বলেন, পত্রিকা দেখে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিবৃতি দেয়া কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে আছে, জনগণের স্বার্থবিরোধী কোন কাজ আওয়ামী লীগ আগেও করেনি, আগামীতেও করবে না। যারা এ কাজটি করেছেন তারাই আজ নিজের লজ্জা ঢাকার জন্য আওয়ামী লীগের কাঁধে দোষ দিচ্ছেন।
×