ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কুতুপালং বস্তি পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘ বিশেষ দূতের মন্তব্য

বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা ভাল আছে, সরকারকে ধন্যবাদ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা ভাল আছে, সরকারকে ধন্যবাদ

এইচএম এরশাদ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে ॥ কক্সবাজারে সফরে আসা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি তৃতীয় দিনের মতো উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টাব্যাপী মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে কথা বলেন বিশেষ দূত। মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের খোঁজখবর নেন তিনি। কুতুপালং বস্তিতে অবস্থান করা মিয়ানমারের নাইচ্ছা প্রু গ্রামের জামালিদা, আমিনা বেগম, হামিদাসহ ২০ জন মহিলা ও খেয়ারি প্রাং গ্রামের মোহাম্মদ করিম, আব্দু সালামসহ ১০ জন পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। এদের মধ্যে মিয়ানমারের গৌজুবিল, সিকদারপাড়া, নাইনচং, খেয়ারি প্রাং গ্রামের নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গারা রয়েছেন। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন ইয়াংহি লি। তিনি বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গারা এখানে মোটামুটি ভাল আছে। তিন দিন ধরে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নিয়েছি। তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে। মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উখিয়ার বালুখালী, টেকনাফের লেদা ও কুতুপালং রেজিস্টার্ড ও আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ওপর আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এ সময় জাতিসংঘের বিশেষ দূতের সঙ্গে ছিলেনÑ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র যুগ্ম-সচিব বাকি বিল্লাহ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা। এর আগে বিশেষ দূত সকাল ৯টার দিকে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। মিয়ানমারের কেয়ারি প্রাং গ্রামের নির্যাতিত রোহিঙ্গা আবদুস শুক্কুর, আবদুল আলিম, মোঃ গফুর জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের যুবকরা রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছে। হত্যা করেছে অনেককে, ধর্ষণ করেছে অগণিত নারীকে, গণগ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে নির্বিচারে। অনেক শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ি, যার কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে রোহিঙ্গারা কাছে পেয়ে মনের দুঃখের কথা বলে। রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেলে রোহিঙ্গারা যে কোন মুহূর্তে মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি। শুধু তাই নয়, ওই দেশে রোহিঙ্গাদের চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে এবং রাখাইন সম্প্রদায়সহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মতো স্বাধীনভাবে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের চলাচলের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানায় তারা। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি জানতে সোমবার রাতে চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। তিনি এর আগে গত মঙ্গলবার উখিয়ার বালুখালী নতুন বস্তি, বুধবার টেকনাফে লেদা ও সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। ইয়াংহি লি গত জানুয়ারি মাসের ১০ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত মিয়ানমারে ১২ দিন সফর করেন। তিনি দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
×