ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভারত সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি ও সার্ক টিকিয়ে রাখার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর জাতীয় সংসদ ভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপ- প্রেস সচিব এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন। বিকেল ৫টায় সংসদ ভবনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। প্রায় ৩০ মিনিটব্যাপী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আসন্ন ভারত সফর ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। বৈঠক শেষে উপ-প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাতে ভারত সফর ছাড়াও সার্ক ও এ অঞ্চলের কানেক্টিভিটি (যোগাযোগ) আরও জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। জয়শঙ্কর সার্কের বিষয়টি উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, সার্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর বেজিং থেকে বৃহস্পতিবার পৌনে দুইটার দিকে ঢাকায় পৌঁছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জয়শঙ্কর পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। ঢাকায় পৌঁছানোর পর হোটেল লা মেরিডিয়ানে অবস্থান করেন সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। সেখান থেকে তিনি জাতীয় সংসদ ভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। এ সময় জয়শঙ্কর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে দিল্লী সফরের আমন্ত্রণ জানান। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এর আগেও ভারতের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের আমন্ত্রণে জয়শঙ্কর ঢাকায় এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জয়শঙ্কর। সে সময় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ভারত সফর সম্পর্কেও আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এক নৈশ্যভোজে অংশগ্রহণ করেন জয়শঙ্কর। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়ে যৌথ ইশতেহারে ৬০ দফা ঢাকা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সেই ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়ে দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আগে থেকেই ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে প্রস্তুতি চলছিল। জয়শঙ্করের ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পায়। আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর সফলের লক্ষ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলে আসছিল। সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ভারত সফরকালে কি কি চুক্তি হতে পারে সে বিষয়েও প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা-দিল্লী। তবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সামনে রেখে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে সেসব নিয়ে আলোচনা চলছে। ঠিক কয়টি চুক্তি হবে, সেটা চূড়ান্ত করা হয়নি। ঢাকা-দিল্লী উভয় পক্ষ মিলেই সেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর গত ৩০ নবেম্বর দুইদিন ঢাকা সফর করেন। ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান। সে সময় ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রত্যাশা করছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যেন ভারত সফর করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গত ৮-১০ নবেম্বর দিল্লী সফর করেছেন। সেখানে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে কি কি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা করেন দুই পররাষ্ট্র সচিব। ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে যোগদানের সময় গত বছর ১৬ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণেই এই সফর হবে। সে অনুযায়ী গত বছর ১৯-২০ ডিসেম্বরে ভারত সফর ঠিক হয়েছিল। তবে হঠাৎ করেই সেই সফর পিছিয়ে যায়। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তবে সে সফরও পিছিয়ে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। আসন্ন ভারত সফর হবে মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। যদিও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রীর মৃত্যুর সময়ে শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সফরে দিল্লী গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনে দুই দেশ পরস্পরকে সমর্থন করে আসছে। গত বছর পহেলা জুলাই রাজধানীর গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর মোদি এক বার্তায় শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন। অন্যদিকে কাশ্মীরের উরি হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে থাকবে বলে জানায় বাংলাদেশ। সূত্র জানায়, ভারত-চীনের কৌশলত সংলাপে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব চীনে গিয়েছিলেন। প্রথমবারের মতো এই সংলাপের আয়োজন করেছে ওই দুই দেশ। সেখান তিনি ঢাকায় আসেন। তিনি আজ শুক্রবার সকালে দিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। এর আগে গত বছর ১০ মে দুই দিনের সফরে ঢাকা এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। সে সময় দুই দেশের মধ্যে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
×