ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থান প্রকল্পেও ড্রেজার

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কর্মসংস্থান প্রকল্পেও ড্রেজার

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ২৩ ফেব্রুয়ারি ॥ জামালপুর জেলার ইসলামপুরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি) প্রকল্পের কোন নীতিমালাই মানা হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে সংশ্লিষ্টরা সরকারের টাকা হরিলুটের জন্য অতিদরিদ্র শ্রমিকের বদলে তড়িঘড়ি করে কাজ করছে ড্রেজার মেশিন দিয়ে আবার কেউ প্রকল্পের তালিকাভুক্ত শ্রমিক ছাড়াই চুক্তিতে শ্রমিক দিয়ে দায়সারা করছে প্রকল্পের কাজ। বুধবার ইসলামপুর নোয়ারপাড়া ইউনিয়নে প্রকল্প নং-২১, নোয়ারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাট প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ প্রকল্পে প্রতি কর্মদিবসে ৭২ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও একজন শ্রমিকও নেই, প্রকল্পের কাজ চলছে ড্রেজার মেশিন দিয়ে। চরগোয়ালীনি ইউনিয়নের প্রকল্প নং-৪৯, পিরিচপুর ওমেজ উদ্দিনের বাড়ি হতে গুজরের দোকান হয়ে পিরিচপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজের ৬০ জন শ্রমিকরে মধ্যে বুধবার কর্মদিবসে কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে প্রকল্পের শ্রমিক দুলাল, ওমর আলী, শাহজাহান (কাজে আসে নাই) জানান, তারা ২৫ শ্রমিক এ প্রকল্পে ২০ দিন কাজ করে মজুরি না পাওয়ায় কাজে আসা ছেড়ে দিয়েছে। ২০ দিনের মজুরি না পেলে আর কাজ করবে না। একই অবস্থা ডিগ্রীচর পোড়াবাড়ী আফছারের বাড়ি হতে নুরুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজের বুধবার কর্মদিবসে ১০১ শ্রমিকের মধ্যে কেউ কাজে আসেনি। স্থানীয়রা জানান, তিন দিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৫-২৬ শ্রমিক এ প্রকল্পে কয়েকদিন কাজ করেছে। চরপুটিমারী ইউনিয়নের ৪৭নং প্রকল্প আকন্দপাড়া দশানী নদীর পূর্ব পাশে হতে টাবুরচর খেয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজে প্রতি কর্মদিবসে ৯০ শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাজ করছে মাত্র ১৬ শ্রমিক। এ প্রকল্পের শ্রমিক জামিরুল, মনোয়ারা, হালিমা, আমীর আলী, আশরাফ আলী, রাশেদ আলী জানান, তারা ২১ দিন ধরে কাজ করছে কোন মজুরি পায়নি। জানা যায়, কোন শ্রমিক এখন পর্যন্ত জবকার্ড পায়নি। প্রকল্পের কাজের কোন সাইনবোর্ডও নেই। কুলকান্দি ইউনিয়নের হরিণধরা এবতেদায়ি মাদ্রাসা মাঠে মাটি ভরাট প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের তালিকার নির্ধারিত কোন শ্রমিক কাজে নাই। চুক্তিতে ১০-১২ শ্রমিক নিয়ে প্রকল্পের দায়সারাভাবে কাজ করছে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা ওই প্রকল্পের সভাপতি। এ ব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি আলতাফ জানান, তালিকায় যে শ্রমিক দেয়া হয়েছে, তাদের আমি চিনি না, প্রকল্পের কাজ করতে হবে তাই চুক্তিতে শ্রমিক নিয়ে কাজ করছি। জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখের নির্দেশানুযায়ী ৭ জানুয়ারি হতে পহেলা মার্চ ২০১৭ তারিখের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। ৭ জানুয়ারি থেকে যাতে কাজ শুরু করা যায় সে জন্য আগেই ইউনিয়নওয়ারী কার্ড সংখ্যা নির্ধারণ, শ্রমিক বাছাইসহ প্রকল্প বাছাইয়ের সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির দায়িত্বহীনতার কারণে সঠিক সময়ে তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় ইসলামপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে তালিকা প্রস্তুত ও শ্রমিকদের হাতে যথাসময়ে জবকার্ড না পৌঁছায় এবং যথাসময়ে একযোগে কাজ শুরু না হওয়ায় ইসলামপুরে কর্মসংস্থান প্রকল্পের হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। কর্মদিবসে উপস্থিত থাকছে না। কর্মদিবসে চলছে কর্মফাঁকি। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে প্রকল্পের তদারকি ও বাস্তবায়নে দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসাররা থাকলেও রহস্যজনক কারণে পালন করছে নীরব ভূমিকা। এ ব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইজিপিপি বাস্তবায়ন উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব মেহেদী হাসান টিটু জানান, প্রকল্পের কাজ করতে হবে, ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কোন নিয়ম নেই, কোন শ্রমিক কাজ না করলে তাদের মজুরি দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত সরকারের দুর্যোগ ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ ১ম পর্যায়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ওয়েজ প্রকল্পের ইসলামপুরে ১২টি ইউনিয়নে ৫১টি প্রকল্পের ৩ হাজার ৫৮৮ জন উপকারভোগী রয়েছে। সকল উপকারভোগী দৈনিক ২০০ টাকা হারে মজুরি পাবে। ৪০ কর্মদিবসে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজ করার কথা রয়েছে।
×