ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

ভেস্তে গেল স্বপ্ন ভি কে শশীকলা এখন জেলে। চার বছরের জেল হয়েছে হিসাববহির্ভূত সম্পত্তি রাখার মামলায়। ব্যাঙ্গালুরুর পরাপ্পনা আগ্রাহারা জেলে তিনি কয়েদি। তার কয়েদি নম্বর ৯৩২৪। সেখানে তিনি পেয়েছেন একটি ছোট্ট রুম। আর দুই নারী বন্দীর সঙ্গে থাকতে হবে। ঘুমাবেন মেঝেতে। শশীকলা হচ্ছেন তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল এআইএডিএমকে এর প্রয়াত নেত্রী জয়ললীতার ঘনিষ্ঠ সহচর, ছিলেন তার বিকল্প। ধারণা করা হয়েছিল জয়ললীতার মৃত্যুর পর তিনি পার্টির ও রাজ্যের হাল ধরবেন। কিন্তু ভেস্তে গেল সে প্রত্যাশা। অন্তত চারটে বছর এ ব্যাপারে কোন আশা নেই। জেল থেকে বের হলে তখন কী হয়, তামিলনাড়ুর রাজনীতি কোন্্্ দিকে মোড় নেয় সেটা দেখে বলা যাবে শশীকলার ভবিষ্যত। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, শশীকলাকে এখন জেলে বসে কাজ করতে হবে। প্রতিদিনই কাজ। কোন ছুটি নেই। কাজ অবশ্য এমনি এমনি হবে না। এ জন্য তিনি পাবেন প্রতিদিন সে দেশের পঞ্চাশ টাকা করে। কাজটা কী? সেটা হচ্ছে মোমবাতি বানাতে হবে কিংবা বানাতে হবে আগরবাতি। এ কাজের মূল্য রয়েছে, তাই তিনি মজুরি পাবেন, আর একটা জিনিস তিনি পাবেন রাজনীতিক হিসেবে। রোজ দুটি করে খবরের কাগজ। শশীকলার ব্যাপারে এক স্বপ্ন যে রাজ্যের অনেকেরই ছিল যে তিনি হয়ত জয়ললীতার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেন। হয়ত শশীকলারও স্বপ্ন ছিল তিনি তার রাজ্যের রাজনীতির হাল ধরবেন শক্ত হাতে। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় রায়ে উল্টে গেল সব। আগামী চারটি বছর এভাবেই কাটবে। এর মুক্তি পেয়ে তিনি যদি সে দেশের আইন অনুযায়ী বেশ কিছু দিন নির্বাচনে দাঁড়ানোর অযোগ্য বিবেচিত হন তাহলে দেরি হয়ে যাবে অনেক। এমন হলে শশীকলার স্বপ্ন পূরণে বিলম্ব হয়ে যাবে অনেক বেশি। কন্যা ভ্রƒণ হত্যা রোধে এটাও ভারতের একটি খবর। সেখানকার মহারাষ্ট্রের এক গ্রামের এক সেলুন মালিকের ঘটনা। সেখানে অনেকেই সংসারে কন্যাসন্তান নিতে চান না। অনেকেই চান সংসারে ছেলেদের জন্ম হোক। মেয়েসন্তানের দরকার নেই। সে জন্য অনেক পরিবারে দেখা যায়, সংসারে কোন মহিলা সন্তান সম্ভবা হলে তাকে ডাক্তারী পরীক্ষায় জেনে নেয়া হয়, যে সন্তান আসছে, সে ছেলে না মেয়ে। যদি মেয়ে হয়, তাহলে সে ভ্রƒণ নষ্ট করে দেয়া হয়। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে সেখানে। এই পরিস্থিতি ব্যথিত করে তুলেছে উল্লিখিত ওই সেলুন মালিককে। প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেল, তিনি নিজে এ ব্যাপারে নিজের সাধ্যমতো একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের মারাথওয়াদা গ্রামের বাসিন্দা ওই সেলুন মালিকের নাম অশোক। তিনি তার এলাকায় ঘোষণা করেছেন, যে সংসারে কোন কন্যার জন্ম হবে, সেই কন্যার পিতার চুল কাটা ও দাড়ি শেভ করে দেবেন তিনি বিনা পয়সায়। কন্যা সন্তান জন্মের পর প্রথম ছয় মাসে একবার কন্যার পিতাদের চুল কাটা ও দাড়ি শেভ করা হবে, এতে কেন পয়সা দিতে হবে না। উল্লিখিত সেলুনটির নাম মনীষা। প্রকাশিত খবরে জানা গেল এ কথা। আরও জানা গেল ওই সেলুন মালিকের বক্তব্য, তিনি জানিয়েছেন, চারপাশে কন্যা শিশুর ভ্রƒণ হত্যার ঘটনা দেখে তার খুব খারাপ লাগে। কী করা যায় ভাবতেন সে কথা। কিন্তু সুদূর এক গ্রামে থেকে কী আর করবেন। শেষে একা যা পারেন, সেটাই করেছেন। যাতে কন্যাশিশুর ভ্রƒণ হত্যা কিছুটা হলেও বন্ধ হয়। মহারাষ্ট্রের এক নিভৃত পল্লীর এক সেলুনওয়ালার উদ্যোগটি যে প্রশংসার যোগ্য, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সে উদ্যোগের প্রশংসা যদি তার গ্রামবাসী করে, তাহলে এবং তার উদ্যোগে সহায়তা করে তাহলে সেটি হবে আরও ভাল। তবে সবচেয়ে ভাল হতে পারে যদি তার গোটা এলাকার লোক তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয় এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যায়।
×