ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষুধামুক্ত দেশ বিনির্মাণই সরকারের প্রধান লক্ষ্য ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্ষুধামুক্ত দেশ বিনির্মাণই সরকারের প্রধান লক্ষ্য ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য মুক্তির মাধ্যমে একটি ক্ষুধামুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। দেশের একটি লোকও ভিক্ষা করবে না, না খেয়ে থাকবে না, যাতে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে সেটিই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আখতার জাহানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য সীমার নিচে অবশিষ্ট ১ কোটি ৮০ লাখ লোককে সম্পৃক্ত করে ৩ কোটি মানুষের জন্য ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর একনেক সভায় ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, একটি বাড়ি একটি খামার আমার নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত একটি দারিদ্র্য বিমোচন মডেল। এটি ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিটি গ্রামে ৬০টি দরিদ্র পরিবার নিয়ে একটি গ্রাম সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে, যার মধ্যে ৪০ জনই নারী। দরিদ্র মানুষ সপ্তাহে ৫০ টাকা অর্থাৎ মাসে ২০০ টাকা সঞ্চয় করলে আমরা তাকে ২০০ টাকা বোনাস দিচ্ছি। এভাবে আমরা দুই বছরে একটি গ্রাম সংগঠনে মোট ৯ লাখ টাকার স্থায়ী তহবিল গড়ে দিচ্ছি। অনুরূপভাবে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ২১৩টি সমিতির ২২ লাখ পরিবার তথা ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের ৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার তহবিল গড়ে দেয়া হয়েছে। এ অর্থের মালিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী। সরকার কখনই এ অর্থ ফেরত নেবে না। এটি তাদের স্থায়ী আমানত। বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশ ॥ সরকারী দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার বিস্তৃতি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। এর ফলে ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহসহ বেশ কিছু দেশ পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানি বাণিজ্যের গুণগত পরির্বতন এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করতে রফতানি নীতি ২০১৫-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। রফতানি বান্ধব নীতি ও সফল বাণিজ্যিক অর্থনীতির কারণে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দিচ্ছে এবং সুবিধা বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, চীন, ভারত ইত্যাদি দেশ তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। রফতানি সম্ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ বাজার বিশেষ করে রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, ব্রাজিল, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানি বিপণন উন্নয়নের জন্য সে সকল দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অধিক হারে অংশগ্রহণসহ বাণিজ্য প্রতিনিধিদল প্রেরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর অপর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট এবং তা হলো জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন। বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করা। বিমানকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দুর্নীতিমুক্ত একটি আধুনিক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং বিমানের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা বিশ্বে বাংলাদেশকে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকার আশপাশে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’ শীর্ষক নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের রয়েছে। জাসদের নাজমুল হক প্রধানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানী ও শিক্ষিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশকে একটি জ্ঞানী ও শিক্ষিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বর্তমানে দেশের শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির খাতের উন্নয়নে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে মহাসড়ক নেটওয়ার্ক ॥ জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে মহাসড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে ৫টি আন্তঃদেশীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পৃক্ত। তিনি জানান, বিবিআইএন স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে চার দেশের (বাংলাদেশ-ভুটান-নেপাল ও ভারত) মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রীবাহী যানবাহন এবং পণ্য পরিবহনের জন্য পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে। ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশ ও নেপাল চুক্তিটি অনুসমর্থন করেছে। আশা করা যায় ভুটানও সহসাই চুক্তিটি অনুসমর্থন করবে। চার দেশের অনুসমর্থনের পর চুক্তিটি বাস্তবায়ন হবে। সরকারী দলের কামরুল আশরাফ খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা ছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবেলায় বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মাত্রারিক্ত শিল্পায়নের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। বাংলাদেশ এ জন্য দায়ী না হয়েও মারাত্মকভাবে দুর্যোগের শিকার হচ্ছে।
×