ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সরবরাহে নিশ্চয়তা পেট্রোবাংলার

নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন শেষ পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন শেষ পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিজিসিএল) খুলনা-৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে নিশ্চয়তা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তা কেটে গেল। এনডব্লিউপিজিসিএল সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা সম্প্রতি বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এর আগে ভারত থেকে এলএনজি আমদানি করে কেন্দ্রটির জ্বালানি সংস্থানের কথা ছিল। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ হলে খুলনা অঞ্চলের বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। খুলনাতেই এনডব্লিউপিজিসিএলের অন্য একটি বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। দ্বৈত জ্বালানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি এখন তরল জ্বালানিতে চলছে। ওই কেন্দ্রটির কাছে ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের কাছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়েজউল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা কম হওয়ায় বিদেশ থেকে অধিকমূল্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন আছে। এ দুটি টার্মিনাল থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাহিদার আলোকে আরও ভাসমান ও স্থলভিত্তিক এলএনজি টামির্নাল নির্মাণের প্রাথমিক আলোচনা চলছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, নির্মাণধীন ও পরিকল্পনাধীন এলএনজি টার্মিনালসমূহ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন ও গ্যাস সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি সাপেক্ষে এনডবিউপিজিসিলএলের খুলনায় ৮০০ মেগাওয়াট এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে ২০২০ সালের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ করা যেতে পারে। সরবরাহের জন্য সঞ্চালন ও বিতরণ পাইপ লাইন নির্মাণের প্রয়োজন হতে পারে। এলএনজি সঞ্চালনের জন্য গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপন করবে। আর এলএনজি বিতরণের জন্য সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করবে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে মূল্যে এলএনজি আমদানি করা হবে তার ওপরই ঠিক করা হবে এর বিতরণ মূল্য। জ্বালানি সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। সঙ্গত কারণে বিবিয়ানার পর আর কোন গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। যদিও এখন এলএনজি যোগ হওয়ায় নতুন করে আবারও গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ৪২ শতাংশ। সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশে। দেখা যায় ২০০৯ সালে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন হতো ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এভাবে গ্যাসের সংস্থান কমে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার কমছে। তবে এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক করা গেলে দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন আবারও বৃদ্ধি করা সম্ভব। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে ২০১২-১৩ সালেই গ্যাসভিত্তিক আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এরপর থেকে বিকল্প উৎস হিসেবে দেশে কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। তবে এখন এলএনজি আমদানি প্রক্রিয়ার শুরুতেই আবারও গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিল পেট্রোবাংলা। এক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে আগামী বছর থেকে এলএনজি আমদানি হলে দৈনিক গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। পর্যায়ক্রমে দেশে এলএনজির যোগানও বৃদ্ধি পাবে। ক্রমান্বয়ে সংকট ঘনীভূত হলে দেশীয় গ্যাসের জায়গা দখল করে নেবে এলএনজি। এলএনজি পরিবেশ দূষণ করে না। প্রাকৃতিক গ্যাসের মতোই ব্যবহার করা যায়। সঙ্গত কারণে কয়লার চেয়ে এলএনজিকেই সম্প্রতি দেশী বিদ্যুত উৎপাদনকারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
×