ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খুনের তিন সহযোগীর আদালতে স্বীকারোক্তি

এমপি লিটন হত্যা, জাপা নেতা কাদের খান ১০ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এমপি লিটন হত্যা, জাপা নেতা কাদের খান ১০ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২২ ফেব্রুয়ারি ॥ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতা সুন্দরগঞ্জের জাপা (এ) সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডাঃ আব্দুল কাদের খানকে গ্রেফতারের পর বুধবার দুপুরে পুলিশ তাকে গাইবান্ধার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক মইনুল হাসান ইউসুফ ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় বগুড়া শহরের রহমান নগর জিলাদারপাড়া তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে রাতে গাইবান্ধায় নিয়ে আসা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার সকালে শহরের ব্রিজ রোড এলাকা থেকে তিন খুনী কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর সমস কবিরাজপাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসান (২২), উত্তর সমস বেকাটারি গ্রামের ওসমান গণির ছেলে শাহীন (২৩) এবং কাদের খানের গাড়িচালক বগুড়ার শাহজাহানপুর থানার কামারপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে হান্নানকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। অপর খুনী রানাকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে সক্ষম না হলেও শীঘ্রই সে ধরা পড়বে বলে সূত্রে জানা গেছে। বুধবার গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে প্রেস ব্রিফিংয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এ সময় রংপুর রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি বশির আহমেদ, গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ব্রিফিংয়ে লিটন হত্যা মামলার বাদী তার বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী, লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং পরিবারের অন্যান্য লোকজন, গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলনসহ জেলা আওয়ামী লীগ, অন্যান্য দল নেতৃবৃন্দ ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। যেভাবে কিলাররা শনাক্ত হয় ॥ লিটনের কিলাররা গত ২ জানুয়ারি গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে ধোপাডাঙ্গায় হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ওই পিস্তলটি ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে ফাইম নামে এক যুবকের কাছ থেকে তার মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনতাই করে। ছিনতাই শেষে তাড়াহুড়া করে পালাতে গিয়ে পিস্তলের ৬ রাউন্ড বুলেটের ম্যাগজিনটি তাদের অগোচরে রাস্তায় পড়ে যায়, যা স্থানীয় জনগণের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ উদ্ধার করে। এই পিস্তলের বুলেট পরীক্ষা করে দেখা যায়, এমপি লিটনের শরীর থেকে অপারেশন করে বের করা এবং তার বাড়িতে হত্যার পর প্রাপ্ত বুলেটের খোসার সঙ্গে ওই ম্যাগজিনের বুলেটের মিল রয়েছে। পরে এই সূত্র ধরে খুনীদের আটক করা হয় এবং পিস্তলটির ব্লাস্টিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। খুনীদের স্বীকারোক্তি ॥ গ্রেফতারকৃত তিন খুনী মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে খুনের ঘটনা স্বীকার করে এবং এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থ যোগানদাতা ও প্রশিক্ষণদাতা হিসেবেও আব্দুল কাদের খানের নাম উল্লেখ করে। এদিকে খুনীরা কাদের খানের পিস্তলটি ব্যবহার করেছিল বলেই বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত ব্লাস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা চূড়ান্ত হবেন বলে ধারণা করছেন। এদিকে সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান খুনীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক কাদের খানের পিস্তল এবং বুলেট জব্দ করে। কিন্তু ৪০ রাউন্ড বুলেট ক্রয় করলেও কাদের খান পুলিশকে মাত্র ১০ রাউন্ড বুলেট জমা দিতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ৩০ রাউন্ড বুলেটের হিসাব দিতে পারেননি। এ বিষয়েও মঙ্গলবার পুলিশ পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ॥ জেলা জজ আদালতে সরকার পক্ষের পিপি এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, এমপি লিটন খুনের চাঞ্চল্যকর মামলাটি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হত্যার পরিকল্পনা ॥ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে এক মাস ২০ দিনের তদন্ত শেষে মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এই লিটন হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। এমপি লিটনকে সরিয়ে দিয়ে পুনরায় ওই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার উচ্চাভিলাষ ও ক্ষমতার মোহেই সাবেক এমপি কাদের খান এক বছর আগে থেকেই এই হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করে। এজন্য তিনি তার ঘনিষ্ঠ চার সহচর মেহেদী হাসান, শাহীন, হান্নান ও রানাকে প্রলুব্ধ করে এবং নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে তাদের ৬ মাসব্যাপী নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়। তার ছক অনুযায়ী ইতোপূর্বে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা আসার পথে এমপি লিটনকে গত অক্টোবর মাসে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এমপি লিটনের নিজ বাড়িতে তাকে গুলি করে হত্যা করতে সক্ষম হয়। লিটন হত্যা মিশনে তিনজন অংশ নেয়। তারা হলোÑ মেহেদী হাসান, শাহীন ও হান্নান। এর মধ্যে ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে হত্যা নিশ্চিত করে মেহেদী হাসান। লিটনের স্ত্রী ও বোনের সন্তোষ ॥ লিটনের হত্যার পরিকল্পনাকারী ও খুনীদের গ্রেফতার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এই খুনের রহস্য উদঘাটনে নিয়োজিত পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান এবং খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিও অনুরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
×