ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অথচ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্পের দেহেই বইছে অভিবাসীর রক্ত

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ট্রাম্পের দেহেই বইছে অভিবাসীর রক্ত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দেশ থেকে অভিবাসীদের বের করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এ নিয়ে বিশ্বজুড়েই তোলপাড় চলছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ট্রাম্পের দেহেই বইছে অবৈধ অভিবাসীর রক্ত! ট্রাম্পের দাদা ছিলেন জার্মান বংশোদ্ভূত অবৈধ অভিবাসী। পরে তারা সহায়-সম্পত্তির মালিক হন। ট্রাম্পের মাও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় নেন। এই স্কটিশ নারী গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ খুঁজতে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। স্কটল্যান্ডের লুইস দ্বীপে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ট্রাম্পের মা ম্যারি এ্যানি ম্যাকলিওড মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভাগ্যের সন্ধানে নিউইয়র্কে পাড়ি দেন। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের এই কন্যা একটু ভালভেবে বাঁচার আশায় চাকচিক্যের নগরী নিউইয়র্কে গিয়ে কঠিন সময় পার করেন। চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে থাকা স্কটল্যান্ডের হাজার হাজার মানুষ গত শতাব্দীর প্রথম দিকে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়। ট্রাম্পের মা ছিলেন সেই সময়ে অর্থকষ্টে থাকা মানুষদের মধ্যে একজন। ১৯৩০ সালে ১৮ বছর বয়সে নিউইয়র্কে যান ট্রাম্পের মা ম্যারি এ্যানি ম্যাকলিওড। কোন উচ্চাশা ছিল না। লক্ষ্য ছিল গৃহপরিচারিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে জীবন শুরু করা ও টিকে থাকা। ছয় বছর জীবনযুদ্ধের পর সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ম্যাকলিওডের ভাগ্য খুলে যায়। জার্মান বংশোদ্ভূত নিউইয়র্কের এক ধনী অভিবাসীর পুত্র ফ্রেডারিক ট্রাম্পের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই সময়ে ফ্রেডারিক ট্রাম্প ডেভেলপার ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ফ্রেডারিক ও ম্যাকলিওড ট্রাম্পের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ডোনাল্ড জন ট্রাম্প, আজকের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ১৯১২ সালে স্কটল্যান্ডের লুইস দ্বীপের প্রধান শহর স্টরনওয়ের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে টং নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন ট্রাম্পের মা ম্যাকলিওড। স্কটল্যান্ডের বংশপরিচয় বিশারদ বিল লসন ট্রাম্পের মায়ের পারিবারিক ক্রম খুঁজে বের করেছেন। তার দেয়া ভাষ্যমতে, বিশ শতকের গোড়ার দিকে ম্যাকলিওডের বাবা একটি ছোট দোকানের মালিক ছিলেন। একটি পোস্ট অফিসও চালাতেন তিনি। সে সময়ে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ছিল দরিদ্র। তাদের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও অভাব-অনটন ছিল ম্যাকলিওডদের পরিবারেও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লুইস দ্বীপের প্রায় এক হাজার মানুষ মারা যায়। সেই সময় দ্বীপে মন্দার সৃষ্টি হয়। ভাগ্যের অন্বেষণে অনেক মানুষ বিভিন্ন এলাকায় স্থানান্তরিত হয়ে পড়েন। ম্যাকলিওডদের পরিবারের সদস্য ছিল নয়জন। এত বড় সংসার নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাদের। লুইস দ্বীপে দুর্বিষহ অবস্থায় থাকা অনেক মানুষ সে সময়ে বেঁচে থাকা এবং উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় কানাডায় পাড়ি জমাতেন। তখন ওই দেশে অভিবাসন নেয়া ছিল সহজ। তখন ম্যাকলিওড ছাড়া পরিবারের বাকি আট সদস্য কানাডায় চলে যান। পরে তার বোন ক্যাথেরিন কানাডা থেকে নিউইয়র্কে চলে যান। ১৯৩০ সালে লুইসে ফিরে আসেন ক্যাথেরিন। তখন ম্যাকলিওড অষ্টাদশী। এরপর বোনের হাত ধরে ওই বছরই ট্রাম্পের মা ম্যাকলিওডও কাজের সন্ধানে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। সেখানে এক ধনী পরিবারে আয়া হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু প্রথম কাজ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ওয়ালস্ট্রিটের ধসের কারণে ওই পরিবার আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলে কাজ চলে যায় ম্যাকলিওডের। ১৯৩৪ সালে স্কটল্যান্ডে ফিরে আসেন ম্যাকলিওড। কিন্তু তার আগে নিউইয়র্কে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ফ্রেডরিক ট্রাম্পের। কিছু দিন পর স্কটল্যান্ড থেকে আরও ভাল কিছুর আশায় আবার নিউইয়র্কে চলে যান তিনি। পরে ফ্রেডরিক ও ম্যাকলিওড বিয়ে করেন। ম্যাকলিওড লুইস ছেড়ে চলে গেলেও এখনও সেখানে তাদের বংশধররা আছেন। ট্রাম্পের মামাতো ভাই সম্পর্কের তিনজন লুইসে বসবাস করছেন। তবে তারা ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি নন। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও ট্রাম্পের মা সে দেশের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পান ১৯৪২ সালে। ১২ বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ছিলেন। তবে সুযোগ হলেই তিনি লুইসে ছুটে আসতেন। কিছু দিন থেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতেন। লুইসের অধিবাসীদের মাতৃভাষা গ্যালিক-এ কথা বলতেন তিনি। তবে ইংরেজীও বলতে পারতেন। ২০০০ সালে ৮৮ বছর বয়সে মারা যান ট্রাম্পের মা ম্যাকলিওড। যুক্তরাষ্ট্রের ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, ‘আমেরিকা হলো অভিবাসীদের দেশ।’ অভিবাসীরাই আমেরিকাকে আজকের অবস্থানে এনেছে। ট্রাম্পও অভিবাসীদের সন্তান। আর তিনি-ই কি না এখন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী নিষিদ্ধ করতে চাইছেন। পরিণতি কী হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়। -ওয়েবসাইট
×