ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিবাস ইস্যুতে কঠিন নির্দেশনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অভিবাস ইস্যুতে কঠিন নির্দেশনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মঙ্গলবার অভিবাসী ইস্যুতে নতুন কঠিন নির্দেশনা জারি করেছে। এর ফলে দেশটিতে অবস্থানরত ১ কোটি ১০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসীর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। কাগজপত্রবিহীন বা নথিভুক্ত নন এমন অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে নতুন করে দিকনির্দেশনা জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে অপরাধের রেকর্ড আছে এমন অনিবন্ধিত অভিবাসীদের প্রথমে টার্গেট করা হবে। সেই সঙ্গে খোঁজা হবে তাদের যারা মার্কিন নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি কিংবা সামাজিক সুবিধা ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে। এছাড়া যারা নিজেদের মিথ্যে পরিচয় দিয়েছে তাদের এবং যাদের জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি মনে করা হবে তাদেরও খুঁজে বের করা হবে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা এবং গ্রিন কার্ডধারীরা যে প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার পান, অবৈধ অভিবাসীরা তা পাবেন না। যেসব অবৈধ অভিবাসী শিশু যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল তারা অবশ্য এর আওতার বাইরে থাকবে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘ড্রিমার্স অর্ডারে’র আওতায় শিশুরা এই সুরক্ষা পাবে। নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ অতিরিক্ত দশ হাজার জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। তবে ঘটনা যাই হোক এসব অভিবাসীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা শুরু হয়ে গেছে। এসব অভিবাসীদের বেশিরভাগ এসেছে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকান দেশগুলো থেকে। এরা দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। গত মাসের ২৫ তারিখ অভিবাসী সম্পর্কিত একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সই করার পর মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে। অধিকার গ্রুপগুলো ট্রাম্পের এ উদ্যোগকে ‘উইচ হান্ট’ বা ডাইনি খোঁজার সঙ্গে তুলনা করে বলেছে, যেসব অভিবাসী সপরিবারের দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে তাদের গণহারে বহিষ্কার করা হলে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কিন সমাজের সঙ্গে এই অভিবাসীরা গভীরভাবে মিশে গেছে। তাদের ব্যাপক সংখ্যায় বহিষ্কার করা হলে অর্থনীতির ওপরও তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের মন্ত্রী জন কেলি বলেছেন, যে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর ‘অত্যধিক চাপ’ তৈরি করেছে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। কেলি দুটি মেমোর মাধ্যমে নতুন নির্দেশনাটি জারি করেছেন। ওই মেমোগুলোতে তিনি লিখেছেন দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীর ঢল রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর বিশাল বোঝা হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রতিও হুমকি হয়ে উঠছে। সিনেটে ফরেন রিলেশন্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর বেন কার্ডিন বলেছেন, নুতন নির্দেশনা জাতীয় ও জন নিরাপত্তা দুটোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্ল্যসিও অভিবাসী হটাতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ জারি করতে অস্বীকার করেছেন। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ এখন থেকে শিশু ছাড়া যে কোন অবৈধ অভিবাসীকে যে কোন সময় বহিষ্কার করতে পারবে। যেসব অভিবাসীর বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এবং যারা অপরাধের জন্য দ-প্রাপ্ত এক্ষেত্রে তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। নির্দেশনা জারির আগেও অভিবাসন আইন ভঙ্গকারীদের বহিষ্কার করার অধিকার কর্তৃপক্ষের ছিল কিন্তু ওবামার সময় কেবল অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্তদের ক্ষেত্রে এটি সীমিত করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে নেমেই ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তার মতে, দেশে অপরাধ প্রবণতা ও মাদকাক্তদের সংখ্যা বাড়ার জন্য অবৈধ অভিবাসীরাই দায়ী। অভিবাসী সমর্থক অধিকার গ্রুপগুলো মঙ্গলবার নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অব লিবার্টির কাছে ‘অভিবাসীরা স্বাগতম’ ব্যানারে সমাবেশ করেছে।
×