ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা সমস্যার শেকড়, সুচি ও বিশ্ব সম্প্রদায় -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যার শেকড়, সুচি ও বিশ্ব সম্প্রদায় -স্বদেশ রায়

রোহিঙ্গা সমস্যার শেকড়ে কেউই যেন হাত দিতে চান না। সকলে এর কেবল কয়েকটি ক্ষত স্থানের একটি স্থানে পানি ঢালার বিষয়ে কথা বলছেন। অর্থাৎ গত কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে যে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তাদের ভরণ-পোষণের জন্য সবাই কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। তাৎক্ষণিকভাবে এটা জরুরী। কোন একটি সমস্যার কারণে যখন মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়, প্রতিবেশী কোন দেশে আশ্রয় নেয়, তখন গোটা বিশ্বের দায় পড়ে ওই মানুষগুলোকে আগে বাঁচানো। পাশাপাশি গোটা বিশ্বেরই দায় পড়ে কেন ওই মানুষগুলো বাস্তুভিটে ছেড়ে, শত শত বছরের তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পদ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেÑ সেই সমস্যার সমাধান করা। এ ধরনের সমস্যাগুলো সম্পূর্ণরূপে বিশ্ব ফোরামের বা বিশ্বের সকল দেশের দায়। কোন দুটি দেশের দায় নয়। বাংলাদেশের গত কয়েক যুগ ধরে চলে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি সমাধানের সব থেকে দুর্বল দিক, এ সমস্যাকে ধরে নেয়া হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। অর্থাৎ এ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সমস্যা। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা কখনই ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীর সমস্যার মতো নয়। এ কোন মতেই দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়। সমস্যাটি সম্পূর্ণরূপে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তাদের দেশের নাগরিক বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোন দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে যদি ওই দেশের নাগরিক ভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়, তখন প্রথমেই দায়িত্ব পড়ে যে দেশের মানুষ শরণার্থী হয়েছে- তাকেই ওই সমস্যা সমাধান করা। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার, জাতিগত, ধর্মগত বা গোষ্ঠীগত কারণে কোন মানবগোষ্ঠী যখন চরম সমস্যার মুখে পড়ে, তাদের জীবন বিপন্ন হয়, তখনই তারা শরণার্থী হয়। তখন তাদের কিছু অংশ প্রতিবেশী কোন দেশে বা অনেকগুলো দেশে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। আর কিছু অংশ বিদ্রোহী হয়। এই বিদ্রোহীদের যাই শক্তি থাকুক না কেন, তা নিয়ে প্রতিরোধে নেমে পড়ে। কখনও কখনও এই প্রতিরোধ সশস্ত্র হয়, কখনও তা বিচ্ছিন্নতাবাদীতেও রূপ নেয়, কখনও সন্ত্রাসের আকার ধারণ করে। এর ভেতর কাছাকাছি সময়ে এ অঞ্চলে এ ধরনের দুটি সমস্যা দেখা গেছে একটি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা অপরটি শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের নিয়ে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭৫ সালের পরে। তাদের একটি অংশ সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে যায়, একটি অংশ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। শুধু তাই নয়, গোষ্ঠীগত কারণে এই উপজাতিরা ভারতীয় উপজাতিদের কাছ থেকে নানান সহায়তাও পায়। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যা ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হয়। তার আগে তারা বৈষম্যের কথা বলত কিন্তু তা নিয়মতান্ত্রিক পথে। ১৯৮৪ সালে তারা সশস্ত্র পথ ধরে। তাদের কাছাকাছি ভারতীয় প্রদেশ তামিলনাড়ু। ওখানের নাগরিকরাও তামিল। তাই তাদেরও একটি মানবিক সমর্থন পায় শ্রীলঙ্কার তামিল জনগণ। তারা অনেকে তামিলনাড়ুতে এসে আশ্রয় নেয়। ভারত বিষয়টিতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়। কিন্তু সমস্যাটি ভারত ও শ্রীলঙ্কা ওই দুই দেশের ছিল না। সমস্যা ছিল শুধু শ্রীলঙ্কার। এই দুটি সমস্যার মধ্যে প্রথমে সমাধান হয় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা। বলা যেতে পারে গত শতকের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে মানুষসৃষ্ট রক্তাক্ত সমস্যার এমন শান্তিপূর্ণ সমাধান আর হয়নি। এই সমস্যার সমাধান করেন শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে। শেখ হাসিনার আগে যত সরকার এসেছে তারা ওই সমস্যাকে অস্ত্র দিয়ে সমাধান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা আগেই তাদের সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতর নিয়ে আসেন। তিনি রাজনৈতিক পথে, সংবিধানের অধীনে ওই উপজাতিদের কিছুটা বিশেষ সুবিধা দিয়ে সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতর আনেন। শেখ হাসিনার ওই শান্তি চুক্তির চুল চেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে রেখে তিনি কিছু বিশেষ সুবিধা ওই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোকে দিয়েছেন। যার ভেতর দিয়ে সম্পূর্ণ বিনা রক্তপাতে মুক্ত হয়েছে নিয়মিত রক্তপাত। এখনও হয়ত কিছু কাজ বাকি আছে। তবে এটা স্বাভাবিক, এ ধরনের জাতিগত, ধর্মগত বা নৃগোষ্ঠী গত সমস্যার শতভাগ সমাধান একদিনে করা যায় না। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা তাদের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ঘটিয়েছে এই শতাব্দীর সব থেকে বড় গণহত্যা। তারা গণহত্যার মধ্য দিয়ে এই সমস্যার এক ধরনের সমাধান করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে সমস্যাকে দমন করা হয়েছে। বেড়েছে ক্ষত। যা নিয়ে বিস্তারিত এই কলামে লিখতে গেলে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে লেখার বিষয়বস্তু ভিন্ন দিকে চলে যাবে। এই শতাব্দীর সব থেকে বড় এ গণহত্যা অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার গণহত্যা নিয়ে কাজ করেছেন সাংবাদিক ও গবেষক ফ্রান্সিস হ্যারিসন। তার ‘স্টিল ডেথ কাউন্টিং’ বইয়ে ওই গণহত্যার বিস্তারিত একটি ছবি মেলে। মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে শেখ হাসিনার পথ অনুসরণ না করে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসের পথ অনুসরণ করে গত কয়েক মাসে। সম্প্রতি তার রশি টেনে ধরেছে তারা। আপাতত মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের সশস্ত্র অভিযান বন্ধ করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান বন্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু আসলে কি তারা খুব বেশি দিন বন্ধ রাখতে পারবে? না পারার সম্ভাবনা কিন্তু বেশি। কারণ মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের যে রূপান্তর হয়েছে তা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী বা শ্রীলঙ্কার তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের থেকে ভিন্ন। এর কারণ বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি। শ্রীলঙ্কার তামিল ও বাংলাদেশের পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়েছিল, তারা পাশের দেশে তাদের স্বগোত্রীয় কিছু মানুষের সমর্থন পেয়েছিল- আর যে সমীকরণগুলো ছিল তা ভিন্ন, মোটেই আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক ছিল না। খুব জটিলও ছিল না। অন্যদিকে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা এখন জঙ্গীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাদের বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা আরএসও থেকে এখন রূপান্তরিত হয়ে হারাক্কা আল ইকাইনের পতাকা তলে যাচ্ছে। এই সংগঠনটি সম্পূর্ণরূপে আল কায়েদা ও পাকিস্তানী আইএসআইএর নিয়ন্ত্রিত। তাই এরা যে কোন মুহূর্তে গত ৯ অক্টোবরের মতো আবারও কোন জঙ্গী হামলা চালাতে পারে। তখন আবারও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আগের রূপে আবির্ভূত হবে। তখন আবারও শরণার্থী সমস্যার সৃষ্টি অনিবার্য হয়ে উঠবে। এই বাস্তবতাই এখন মনে রাখতে হবে মিয়ানমারের সরকার ও তাদের অবিসংবাদিত নেতা সুচিকে। নিশ্চিত করতে হবে এই ঘটনা যেন আর না ঘটে। তার পূর্ব সাবধানতা এখনই নিতে হবে। এই পূর্ব সাবধানতা নেয়ার কাজটি সুচিকে করতে হবে। এক্ষেত্রে কী কী করণীয় তা নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে সুচি যতটা ভাল বুঝবেন তার থেকে অন্য কারও বেশি বোঝা সম্ভব নয়। তবে, সুচিকে এখনই তার সেনাবাহিনীর সঙ্গে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। যেহেতু সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর আলাদা ক্ষমতা আছে। এ কারণে সুচিকে অন্তত দুটি বিষয় সেনাবাহিনীকে বোঝাতে হবে, এক. রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সমস্যা; এ সমস্যা সমাধনের জন্য এমন পথে এগোতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দুই. রোহিঙ্গা জঙ্গীরা বর্তমান বিশ্বের আর দশটি দেশের জঙ্গীদের মতোই। যেমন জার্মানি বা ফ্রান্সে মুসলিম জঙ্গীরা হামলা করছে। ওই সব দেশে খুঁজে খুঁজে জঙ্গী ধরছে। সাধারণ মুসলিম সেখানে নিরাপদ। মিয়ানমারকেও তেমনটি হতে হবে। নিজ দেশের ভেতর সেনাবাহিনীর সঙ্গে এই সমঝোতার পাশাপাশি সুচির জন্য এখন অনেক বেশি দরকার, বাংলাদেশ সফরে আসা। সুচি বাংলাদেশ সফরে এলে অনেকগুলো দিক থেকে উপকৃত হবেন। প্রথমত. তিনি বাংলাদেশে এমন একজন নেতার সঙ্গে আলাপ করতে পারবেন, যিনি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমস্যার সমাধানের বিষয়ে তার বাস্তব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা জানতে পারবেন। তিনি হয়ত শান্তিতে নোবেল পাননি, কিন্তু তিনিই বিনা রক্তপাতে গত শতাব্দীর শেষভাগে ক্ষুদ্র উপজাতিকে রক্তপাতের পথ থেকে ফিরিয়েছেন। তাদের শতভাগ একদিনে ফেরাতে পারেননি, এখনও শতভাগে পৌঁছতে পারেননি- কিন্তু কিভাবে তিনি এগোচ্ছেন এটা জানতে পারবেন। যা সুচির জন্য এ মুহূর্তে অনেক জরুরী। এ ছাড়া সুচি বাংলাদেশ সফরে এলে এখানে আসা রোহিঙ্গাদের ভেতর একটা আশা জাগবে, সুচি তাদের ফিরিয়ে নিতে চান। তাদের সমস্যার সমাধান করতে চান। রোহিঙ্গাদের ভেতর এই আত্মবিশ্বাস বা আস্থা অর্জন সুচির জন্য এখন অত্যন্ত জরুরী। অন্যদিকে সুচিকে অবশ্যই সহযোগিতা নিতে হবে শেখ হাসিনার। তার সাহায্যই তাকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা পেতে সহায়তা দেবে। কারণ সুচির নিজের সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটা সমঝোতা যেমন অনেক বেশি জরুরী তেমনি জরুরী রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে একটা সমঝোতার। এক্ষেত্রে এখন সমস্যা দাঁড়িয়েছে, রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আল কায়েদা ও আইএসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা সুচির সম্ভব হবে না। সে কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় কিভাবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসিত করা সম্ভব সেটাই তাকে দেখতে হবে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের আস্থায় নিয়েই সুচিকে দুর্বল করতে হবে জঙ্গী গোষ্ঠীকে। যেমন দেশের মানুষকে আস্থায় নিয়ে শেখ হাসিনা দুর্বল করছেন তার দেশের জঙ্গী গোষ্ঠীকে। আর এর জন্য সুচিরও প্রয়োজন হবে আর্থিক সহায়তা। কারণ, মিয়ানমার দরিদ্র দেশ। তারা নিজেরা রোহিঙ্গা ইস্যু কেন্দ্র করে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে তা পূরণের ক্ষমতা তাদের নেই। তবে এসব কিছুই কিন্তু এক রাতে বা একদিনে হবে না। শেখ হাসিনা যত দ্রুত বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান করেছিলেন অত দ্রুতও হবে না। কারণ শেখ হাসিনার সুবিধা ছিল তিনি দ্রুত তাদের সাংবিধানিক কাঠামোতে নিয়ে এলে তাদের অবৈধ অর্থের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। আর তা হওয়ার কারণও ছিল যেহেতু শেখ হাসিনা আইএসআই পরিচালিত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যাবতীয় কর্মকা- বাংলাদেশে বন্ধ করে দেন। তাই ভারতও পাল্টা কোন বাংলাদেশী বিচ্ছিন্নতাবাদী রাখে না। এক্ষেত্রে উভয় দেশ পরস্পরের রাষ্ট্র নীতিরও নেতার ওপর আস্থা রাখে। অন্যদিকে সুচির কিন্তু তার সরকারের ওপর ও রাষ্ট্রের ওপর শেখ হাসিনার মতো ওই সক্ষমতা নেই। মিয়ানমারের সাংবিধানিক কাঠামোতেও কিছু সংযোজন, বিয়োজনের প্রয়োজন আছে। তাই তাকে একটু ধীরেই এগোতে হবে। এছাড়া আল কায়েদা, আইএস ও পাকিস্তানী আইএসআইএর অর্থ বন্ধ করা কঠিন। এখানে সুচিকে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে বিশেষ করে শেখ হাসিনার বর্তমান জঙ্গীবিরোধী ইমেজকে সঙ্গে নিয়েই বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে যেতে হবে। বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দিলে চলবে না। এই যে সময় লাগবে, এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে থাকা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠুভাবে, নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য পুরনো ঠেঙ্গার চরই ভাল স্থান হবে। কারণ সেখানে তাদের নিরাপত্তা দেয়াও যেমন সহজ হবে তেমনি একটা ভাল শরণার্থী ক্যাম্প তৈরি করা যাবে। এটা ঠিক, এই বিদেশী শরণার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশের একটি সবুজ বনায়ন ধ্বংস হবে। অবশ্য মানুষের থেকে বড় কিছু নেই। তাই মানুষের জীবন ও বেঁচে থাকার স্বার্থে এমন ক্ষত বাংলাদেশকে মেনে নিতে হবে। যাহোক, কোন দেশ যখন শরণার্থীকবলিত হয় তখন এসব দিক বিবেচনা করতে হয়। পুরনো চরটি মানুষের বসবাসযোগ্য হয়ে গেছে। সেখানে প্রায় ২০ বছর বনায়ন হয়েছে। তাই সেখানে শরণার্থীদের নিলে কোন অসুবিধা হবে না। তবে এই ছয় লাখ মানুষকে নিয়মিত খাবার, চিকিৎসা ও বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে হলে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। এখানে মালয়েশিয়ার এক জাহাজ রিলিফ সমুদ্রে এক পাত্র পানি ফেলার মতো। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা সহযোগিতা দেবে। শুধু এই দুটি দেশ নয়, আরও বড় অর্থনীতির দেশকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মিডিয়ার দুই একটির দায়িত্বহীন আচরণ দেখা যাচ্ছে। একদল খুব সূক্ষ্মভাবে ভুল সংবাদ পরিবেশন করছে যে, যেখানে শরণার্থী নেয়া হচ্ছে, তা মানুষের বাসযোগ্য স্থান নয়। আরেক দল বলছেন, রোহিঙ্গাদের নির্বাসিত করা হচ্ছে। ছয় লাখ শরণার্থী সমস্যা একটি মানুষসৃষ্ট বড় দুর্যোগ। এ ধরনের দুর্যোগ নিয়ে দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা করার কোন সুযোগ নেই বরং এখন আরও একটি বিষয় প্রয়োজন, ছয় লাখ রোহিঙ্গা সকলকেই নিবন্ধনের আওতায় আনা। এ কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন বিদেশী সাহায্য প্রচুর আসবে এবং রোহিঙ্গারা তাদের প্রয়োজনীয় রিলিফ পাবে- তখন যারা পালিয়ে আছে তারাও স্বেচ্ছায় নিবন্ধিত হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ী সমাধানেও এই নিবন্ধন প্রয়োজন। কারণ এই নিবন্ধনই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার সময় সব থেকে প্রয়োজনীয় হবে। অন্যদিকে বর্তমান রোহিঙ্গারা যেখানে আছে এটা একটি আঞ্চলিক মাদক ও মানব পাচার রুট। বাংলাদেশের নিজস্ব উন্নতির স্বার্থে এবং পৃথিবীতে মাদক ও মানব পাচার কমানোর স্বার্থে এই এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখানে থাকলে ওইভাবে নিরাপত্তা সম্ভব না বরং সীমান্তরক্ষীদের কাজে বাধা হবে। এই মাদক ও মানব পাচারকারীদের জন্য কিন্তু এখানে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থাকা প্রয়োজন। তাই তারা অনেক অর্থ ব্যয় করে অনেককে কিনবে- যাতে তারা রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কোন ক্যাম্পে নেয়ায় বাধা দেয়। এ কাজে এক শ্রেণীর সুশীলও নামবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এর সার্বিক দিক তাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে হবে। সব মিলে, বাংলাদেশের এই উন্নয়ন যজ্ঞের সময় থেকে সময় বের করে এখন আরেকটি মানুষসৃষ্ট বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। [email protected]
×