ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষণে ক্ষণে বদল রক্তের গ্রুপ, ধরা পড়ল বিরল রোগ

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্ষণে ক্ষণে বদল রক্তের গ্রুপ, ধরা পড়ল বিরল রোগ

অনলাইন ডেস্ক ॥ মাস তিনেক ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ছবি পাল। শারীরিক ভাবে দুর্বল। হাঁটাচলার ক্ষমতাও কমে যাচ্ছিল। রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসক দেখেন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩। দ্রুত রোগীকে রক্ত দেওয়া জরুরি। কিন্তু সেখানেই গোলমাল। পরিজনেরা যখন রক্তের নমুনা নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে যান, তখন ব্লাড ব্যাঙ্ক জানায় কাগজে লেখা রক্তের গ্রুপের সঙ্গে নমুনার রক্তের গ্রুপ এক নয়। ফের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ষাট বছরের ওই প্রৌঢ়ার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, গ্রুপ কখনও ‘এবি পজিটিভ’, আবার কখনও ‘ও পজিটিভ’। বিভ্রান্তি বাড়তে থাকে। জেলার ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, কোথাওই চিকিৎসকেরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কোন গ্রুপটা আসল। অথচ রক্ত দিতে দেরি হওয়ায় তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে অবশেষে জানা যায়, তিনি একটি বিশেষ রোগে আক্রান্ত, চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ব্লাড কম্পোনেন্টস ডিসঅর্ডার’। কুম্বস টেস্ট নামে এক ধরনের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। তার পাশাপাশি অস্থিমজ্জার অর্থাৎ, হাড়ের ভিতরে যেখানে রক্ত তৈরি হয়, সেটারও পরীক্ষা হয়। তাতেই ধরা পড়ে ছবিদেবীর এই বিরল রোগ। পাশাপাশি ধরা পড়ে বারকিটস লিম্ফোমা নামে এক ধরনের ক্যানসারেও আক্রান্ত তিনি। ওই হাসপাতালের অধিকর্তা চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায় জানান, ছবিদেবীর দেহে অটো অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছিল। যার জেরে দেহের অ্যান্টিজেন নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ফলে তাঁর রক্তের গ্রুপ বোঝা যাচ্ছিল না। ক্ষণে ক্ষণে রক্তের চরিত্র বদলে যাচ্ছিল। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দশ হাজারে মাত্র এক জনের এই সমস্যা দেখা যায়। তবে এই সমস্যা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকী বহু চিকিৎসকও ওয়াকিবহাল নন। ফলে বহু ক্ষেত্রেই সমস্যা বাড়তে বাড়তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই কারণেই রক্তের গ্রুপের বদল হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। ছবিদেবীর ক্ষেত্রে কেন এটা হয়েছিল? হেমাটোলজিস্ট গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য জানান, ব্লাড কম্পোনেন্টস ডিসঅর্ডার দেহের বিভিন্ন সমস্যার জেরে হতে পারে। বারকিটস লিম্ফোমা তারই একটি। ছবিদেবীর ক্ষেত্রে এটাই কারণ। তা ছাড়া দেহে প্রোটিনের মাত্রার হেরফের হলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। গৌরীশঙ্করবাবুর সঙ্গে একমত হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘ব্লাড গ্রুপ কখনও অকারণে পরিবর্তন হয় না। অনেকের ধারণা দীর্ঘদিন পরে এমনিই অনেকের ব্লাড গ্রুপ বদলে যায়। কিন্তু এই ধারণা ভুল। অ্যান্টিবডির জেরেই ব্লাডগ্রুপের পরিবর্তন হয়। এই রোগ বিরল। তবে এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা জরুরি।’’ শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরাই ছবিদেবীর চিকিৎসা করছেন। চিকিৎসকেরা আশাবাদী, দ্রুত রোগমুক্ত করা যাবে তাঁকে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×