ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এই সেবা চালু হলে কেউ বিদেশ থেকে নকল মোবাইল সেট আমদানি করতে পারবে না

আগামী মাসে মোবাইল ডাটা সেন্টার উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আগামী মাসে মোবাইল ডাটা সেন্টার উদ্বোধন

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ডাটা সেন্টার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ করেছে বিএমপিআইএ। আগামী মাসের যে কোন দিন মোবাইল ডাটা সেন্টারের উদ্বোধন করা হবে। তবে ডাটা সেন্টার নির্মাণের আগে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজ তৈরি করার কথা ছিল। বিএমপিআইএ বলছে, আইএমইআই ডাটাবেজের সফটওয়্যার পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্ত কারিগরি ত্রুটির কারণে এ সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য মোবাইল ডাটা সেন্টার নির্মাণকাজ হচ্ছে। মোবাইল ডাটা সেন্টার সেবা চালু হলে বিদেশ থেকে কেউ নকল মোবাইল সেট আমদানি করতে পারবে না। ফলে গ্রাহক প্রতারণার হার অনেক কম হবে। দেশে নকল মোবাইল সেট কিনে হাজার হাজার গ্রাহক প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) জানিয়েছে, অবৈধ ও নকল মোবাইল ফোনের প্রবেশ বন্ধে, চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) ডাটাবেজ করার জন্য সফটওয়্যার পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে আইএমইআই উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি গত এক বছরে। গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আইএমইআই ডাটাবেজ উদ্বোধন করার কথা ছিল। এক বছর ধরে মোবাইলে আইএমইআই নম্বর নিয়ে মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা এ কাজটি শেষ করতে পারেনি। এ বছর ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজ উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে আইএমইআই ডাটাবেজ প্রস্তুত করতে পারেনি মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন। আইএমইআই ডাটাবেজের সফটওয়্যার পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। তবে কিছু কারিগরি জটিলতা দেখা দেয়ায় এর উদ্বোধন কাজ পিছিয়ে গেছে। কিন্তু কারিগরি কারণে সেই কাজ পিছিয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। আর সেই কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই দেশের মোবাইল ফোন নিয়ে তৈরি একটি ডাটা সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। বিএমপিআইএর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ডাটাবেজটি তৈরি করব। কিন্তু এটি ব্যয়বহুল একটি কাজ। এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতও ব্যয়বহুল হবে। ফলে এটা চালু করতে দেরি হবে। এরপর আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজ করা হবে। কারণ প্রতিদিন বহু গ্রাহকের ফোন হারিয়ে যাচ্ছে অথবা চুরি হচ্ছে। ডাটাবেজ থাকলে মোবাইল সেট হারিয়ে বা চুরি হলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। এ জন্য ডাটাবেজ খুব জরুরী। এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। মন্ত্রণালয় বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এটা রক্ষণাবেক্ষণ করলেও ব্যয়ভার কারা বহন করবে তা চূড়ান্ত না হওয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। এ জন্য ডাটাবেজ তৈরির কাজে দেরি হচ্ছে। আমরা আশা করছি আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজ তৈরি করে দেব। তবে এটা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিটিআরসিকে নিতে হবে। কারণ এত ব্যয়বহুল কাজ সংগঠনের একার পক্ষে সম্ভব হবে না। বিটিআরসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এর একটি সমাধান হবে। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে আমরা এখন মোবাইল ডাটা সেন্টার তৈরি করতে যাচ্ছি। আগামী এক মাসের মধ্যে ডাটা সেন্টার চালু করতে পারবো। বিটিআরসির সহযোগিতায় বিএমপিআইএ শিগগিরই আইএমইআই ডাটাবেজ সংরক্ষণ ও এর কার্যকারিতা প্রয়োগের মাধ্যমে ভোক্তার অধিকার রক্ষার সেবাটি চালু করা হবে। এদিকে, মোবাইল-ফোন ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন মোবাইল ডাটা সেন্টার তৈরি করেছে। এই সেন্টারের উদ্বোধন করা হবে আগামী মাসের যে কোন দিন। এই সেবাটিও গ্রাহকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর নকল না আসল তা পরীক্ষার জন্য একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু আইএমইআই নম্বর বিষয়ক ডাটাবেজ না থাকায় তা পরীক্ষার কোন সুযোগ নেই। ফলে আইএমইআই নম্বর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ডাটাবেজ থাকলে অবৈধভাবে আমদানি করা বা নকল আইএমইআইয়ের ফোন সেটের প্রবেশ বন্ধ করা সহজ হবে। গ্রাহকরাও প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবে। বাজারে নামি দামি ব্যান্ডের মোবাইল সেট রয়েছে, যেগুলোর ফেক আইএমইআই নম্বর লেখা থাকে। এসব সেট কিনে গ্রাহকরা প্রতারণা শিকার হচ্ছেন। আবার সেট হারিয়ে বা চুরি ছিনতাই হলে সেটগুলো বের করা যাচ্ছে না। আসল আইএমইআই নম্বর হলে সহজেই বিটিআরসিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটে উদ্ধার করতে পারে। আইএমইআই ডাটাবেজ থাকলে চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া আইএমইআইয়ের কোন মোবাইল সেট চালু হলে তার আইএমইআই নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপারেটরদের ডাটাবেজে চলে যায়। ফলে ওই নম্বরটি সংরক্ষিত হয়। তখন তার অবস্থান সম্পর্কে সহজেই জানা যাবে। একসঙ্গে সব মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর না থাকায় তা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ডাটাবেজের আগে ডাটা সেন্টার থাকলে সেখানে দেশে আসা মোবাইল ফোনের তালিকা, পরিমাণ, সংখ্যার (স্মার্টফোন ও বার ফোন) একটি পৃথক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে।
×