ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যন্ত্র পেলে বাংলায় রায় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ॥ প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

যন্ত্র পেলে বাংলায় রায় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ॥ প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদালতের রায় বাংলা ভাষায় না লেখায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারক খুব সুন্দরভাবে বাংলায় রায় লিখছেন। আপীল বিভাগেও আমরা এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। প্রযুক্তির এই যুগে যদি কোন ডিভাইস আসে যার মাধ্যমে আদালতে ঘোষণা করা রায় বাংলায় রূপান্তর হয়ে যাবে, তাহলে অনায়াসে বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মঙ্গলবার সকালে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের (হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগ) বিচারপতিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধান বিচারপতি সিনহা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এর আগে সকাল ৮টার দিকে জাতীয় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আইন কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ও মোঃ শাহ আলমসহ কমিশনের কর্মীরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি অধিদফতরগুলোয় বাংলা চালু হলেও আদালতে সেটা বাস্তবায়ন করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। এ জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। অবশ্য হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারক খুব সুন্দরভাবে বাংলায় রায় লিখছেন। এটা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। তিনি বলেন, আপীল বিভাগেও আমরা এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। প্রযুক্তির এই যুগে যদি কোন ডিভাইস আসে যার মাধ্যমে আদালতে ঘোষণা করা রায় বাংলায় রূপান্তর হয়ে যাবে, তাহলে অনায়াসে বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ ২১ ফেব্রুয়ারিকে শোকের দিন উল্লেখ করে এস কে সিনহা বলেন, আজকের দিন আমাদের জন্য শোকের। ১৯৫২ সালের এই দিনে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি আমাদের ভাইদের রক্তের বিনিময়ে। এরপর ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, কয়েক দিন আগে আমার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে গিয়েছিলাম। সেখানকার একজন অধ্যাপক আমাকে জানান, ঢাকা ছাড়াও বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে ভারতেও কয়েকজন নিহত হয়েছিলেন। তিনি সেই নামগুলো সংগ্রহ করে একটি গ্রন্থ লিখেছেন। এবারের বইমেলাতেই হয়ত সেটি প্রকাশ হতে পারে। এর ফলে বাংলা ভাষার ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আমি মনে করি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিচারাঙ্গনে বাংলা ভাষার চর্চা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জনস্বার্থে হলেও উচ্চ আদালতের রায় বাংলায় লেখা উচিত। এমনকি ভেটিংও বাংলায় হওয়া উচিত। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের তিনটি লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় দিয়েছিলেন বলে জানান খায়রুল হক। আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর বাংলায় রায় দেয়ার চিন্তা করেছি, দিয়েছিও। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ইংরেজীতে রায় বোঝে না। যে কারণে তাদের সঙ্গে বিচারাঙ্গনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে প্রায় ২০০টি রায় বাংলায় হয়েছে জানিয়ে উচ্চ আদালতের সব কাজে বাংলা প্রচলনের ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানান তিনি।
×