ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা ছিল সানির

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা ছিল সানির

শংকর কুমার দে ॥ মুখে এবারের গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গী হামলা ও নাশকতার কোন আশঙ্কা নেই বলা হলেও জঙ্গী হামলা ও নাশকতার আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই নিñিদ্র নজিরবিহীন নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়। গোয়েন্দা তথ্য ছিল, ভারতে আত্মগোপনরত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির একাংশের নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি নির্দেশে এবারের গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গী হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই চৌকস সদস্যদের সমন্বয়ে পুলিশের চার স্তর, র‌্যাবের তিন স্তর, আর গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারিতে নিñিদ্র নিরাপত্তার আয়োজনে দেখানো হয়েছে চোখ ধাঁধানো এক ম্যাজিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের এমনটাই দাবি। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, এবারের গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে গত এক মাস ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল তৎপর। এ জন্যই ধরা পড়েছে ব্লগার রাজীব হত্যার পরিকল্পনাকারী রানা। নারায়ণগঞ্জে ধরা পড়েছে তিন জেএমবির সদস্য। গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গী হামলা ও নাশকতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতারকৃত জেএমবির সদস্য মোঃ মোস্তফা (২৫), একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার আবু রায়হান ওরফে হিমেল (২৪) ও ঢাকার ধামরাইয়ের মোঃ শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহীনসহ (২১) জঙ্গীগোষ্ঠী একুশে ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে দাবি করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৭ জিহাদী বই, ৪৬ লিফলেট, ৫ চাকু ও চাপাতি, ৫ ককটেল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ২টি স্কচটেপ উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই জেমএবিতে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তারা জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক আমির এবং শায়েখ আব্দুর রহমানের অনুসারী। তিনজন নিজ নিজ এলাকা ও এলাকার বাইরেও সাংগঠনিক বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে সংগঠনের কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন। আমাদের প্রাথমিক ধারণা, হয়ত একুশে ফেব্রুয়ারিতে কোন নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল। অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতেই প্রগতিশীল লেখক মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার অভিজিৎ রায়কে খুন করেছে জঙ্গীগোষ্ঠী। এখনও তার খুনী জঙ্গীগোষ্ঠীর সবাই শনাক্ত হয়নি। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যদের। গত ফেব্রুয়ারিতেই অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গীরা। সে সময় রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে চার ব্যক্তিকে আটক করার পর মঙ্গলবার এ দাবি করে পুলিশ। এবারের গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তাকে সামনে রেখে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া ও র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তা নিয়ে সংবাদ সম্মলেন করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মুখে বলেছেন, জঙ্গী হামলা বা নাশকতার কোন আশঙ্কা নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, জঙ্গী হামলা ও নাশকতার আশঙ্কা মাথায় রেখেই নিñিদ্র নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে যাতে জঙ্গীগোষ্ঠীর সব পরিকল্পনাই ভেস্তে গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির একাংশের নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। সেখানে বসেই কথিত জিহাদ অর্থাৎ, নাশকতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির সূরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে ছিনিয়ে পালানোর সময় একইদিন মির্জাপুরে গ্রেফতার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি। বাকি দু’জন বর্তমানে ভারতে অবস্থান করে জেএমবিকে সংগঠিত করতে কাজ করছেন। সম্প্রতি মোঃ রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ওরফে রাকিব, মোঃ আবু বিন সাইম ওরফে বাপ্পি ওরফে অপু, কাজী আবদুল্লাহ আল ওসমান ওরফে আহসান, মোঃ সোহাগ ওরফে চেয়ারম্যান ৫ জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা কিছুদিন আগে ভারতে গিয়ে সেখানে আত্মগোপনরত জঙ্গী নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তাদের কাছ থেকেও অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনার কথা জানা যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম প্রস্তুতি ও নজিরবিহীন নিরাপত্তার আয়োজনে জঙ্গীগোষ্ঠীর পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই এবারের গ্রন্থমেলায় লেখক, প্রকাশক, দর্শক ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক প্রদানসহ শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি।
×