ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১৭ বাণিজ্যিক ব্যাংকে এ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৭২

পথশিশুদের ব্যাংক হিসাবে ২৩ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পথশিশুদের ব্যাংক হিসাবে ২৩ লাখ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের সুবিধাবঞ্চিত পথ ও কর্মজীবী শিশু-কিশোররা সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে পথশিশুদের এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৩ হাজার ৫৭২টি। এসব হিসাবের বিপরীতে তাদের পুঞ্জীভূত সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৮৫১ টাকা। বেসরকারী সংস্থা এনজিওর সহায়তায় এসব এ্যাকাউন্ট খোলা ও পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ১০ টাকার নামমাত্র জামানতে পথশিশুদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার পর এনজিও প্রতিনিধিদের সহায়তায় ব্যাংকগুলো পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের জন্য হিসাব খোলার উদ্যোগ নেয়। এর প্রেক্ষিতে একই বছরের ৩১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে পথশিশুদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান। ওই সময় প্রাথমিকভাবে ৮টি এনজিওর সহায়তায় ১০টি ব্যাংকে ৩ শতাধিক এ্যাকাউন্ট খোলা হয়। বর্তমানে আরও ৪টি এনজিও ও ৭টি ব্যাংক এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। জানা গেছে, পথশিশুদের জন্য আর্থিক কর্মসূচীকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান এবং সাধারণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ওই সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এসব এ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থানে যেমন বস্তি, রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট ও ফুটপাথে বসবাসরত পথশিশু এবং কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের ব্যাংকিং সেবায় আনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয়প্রবণতা তৈরি, কষ্টোপার্জিত অর্থের সুরক্ষা, পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করাসহ তাদের বৃহত্তর কল্যাণে ব্যাংক হিসাব খোলার মহতী উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অধিকাংশ পথশিশু কোন অভিভাবক না থাকায় এনজিও প্রতিনিধিদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের নামে সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। তাদের পক্ষে হিসাবটি পরিচালনা করবেন এনজিও প্রতিনিধিরা। তবে হিসাব ফরম ও অর্থ জমার বইয়ে হিসাবধারী শিশু-কিশোরদের অনুস্বাক্ষর থাকতে হবে। আর এ ধরনের হিসাবে কোন নমিনির দরকার হবে না। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে দশটি ব্যাংক পথশিশু ও কর্মজীবী-কিশোরদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে এ মহতী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ৭টি ব্যাংক। এগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে পথশিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৫৯টি হিসাব খুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। মাসাস ও সাফ নামে দুটি এনজিওর সহায়তায় এসব হিসাব খোলা হয়েছে। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে খুলেছে ৭০টি। ব্যাংকটিতে এসব হিসাবধারী পথশিশুর পুঞ্জীভূত সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৫৪৬টি ব্যাংক হিসাব খুলে দ্বিতীয় অবস্থানে পূবালী ব্যাংক। ব্র্যাক, অপরাজেয় বাংলাদেশ ও নারী মৈত্রী এই তিন এনজিওর সহায়তায় এসব এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই ব্যাংকে পথশিশুদের সঞ্চয় রয়েছে ৫ লাখ টাকা। উদ্দীপন নামের একটি এনজিওর সহায়তায় তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১৯টি এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকে। এই ব্যাংকটিতে পথশিশুদের সঞ্চয় রয়েছে ৪২ হাজার টাকা। এছাড়া ট্রাস্ট ব্যাংক ২৮০টি হিসাবের বিপরীতে সঞ্চয় রয়েছে ৭৯ হাজার ৩০৪ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ২৪৭টি হিসাবের বিপরীতে ৯৯ হাজার ২৯ টাকা, ওয়ান ব্যাংক ২৩১টি হিসাবের বিপরীতে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫১২ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৬৩টি হিসাবের বিপরীতে ২৯ হাজার টাকা, দ্যা সিটি ব্যাংক ১৫০টি হিসাবের বিপরীতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংক এশিয়া ১৯১টি হিসাবের বিপরীতে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৪৫ টাকা, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৬৯টি হিসাবের বিপরীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৫ টাকা, জনতা ব্যাংকে ১৫০টি হিসাবের বিপরীতে ৭৫ হাজার টাকা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৭৫টি হিসাবের বিপরীতে ৭ হাজার ৫০০ টাকা সঞ্চয় রয়েছে।
×