ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঙালীর একুশ একুশের বাঙালী

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বাঙালীর একুশ একুশের বাঙালী

বাঙালী আসলে এক ভাগ্যবান জাতি। ভাগ্যবান এ জন্য যে তাকে রক্ত দিয়ে সব কিছু পেতে হয়- যেন রক্তই তার একমাত্র পুঁজি, একমাত্র সম্বল, একমাত্র অবলম্বন, যেন রক্তই তার অহঙ্কার আর অঙ্গীকারের মূল ভিত্তি। প্রমাণ তার যেমনটা বলেছিলেন আমাদের মহামতি জাতির জনক : রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব -এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ! রক্ত ছাড়া সে হাঁটতে জানে না- পঙ্গু। রক্তই তাকে হাঁটতে শিখিয়েছে, চলতে শিখিয়েছে, বাঁচতে শিখিয়েছে এবং বাঁচাতে শিখিয়েছে। রক্তপাত ছাড়া যেমন কোন শিশু মাতৃগর্ভ ছেড়ে পৃথিবীতে আসে না। সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই তো ব্যক্তি ও সমাজ সামনের দিকে এগুতে থাকে। এগুতে হলে দাঁড়াতে হয়, দাঁড়াতে হলে চাই অবলম্বন। রক্তের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সে অবলম্বন তৈরি হয়। তাই অনেক সম্পর্কের মধ্যে রক্তসম্পর্কের প্রতি সবার একটু টান বেশি; অন্য সম্পর্ক ছিন্ন করা গেলেও রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় না, অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বাঙালীর সব মহৎ অর্জনে রক্তের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। কখনও সে রক্ত ঝরিয়েছে দিবালোকে, কখনও বা অন্তরালে বুকের ভেতরে তার অদৃশ্য রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্তই তাকে বীরের মর্যাদা দিয়েছে। প্রকৃত বীরজাতির যাবতীয় গুণাবলী ও লক্ষণাদি বাঙালীর রক্তে রয়েছে। শত্রুকে সে সহজে খতম করতে জানে আবার শত্রুকে সে সহজে আপনও করে নিতে পারে। বাঙালী সম্পর্কে আমার এ উপলব্ধিজাত মূল্যায়নে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। সেটাই স্বাভাবিক। কারও মতের সঙ্গে কারও মত মিলবে এমনটি না ভাবাই সমীচীন। যে সমাজে যত মত থাকবে সে সমাজ তত বেশি বিকশিত হবে, তত বেশি এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। যতদিন বাঙালী মত ও পথ পায়নি ততদিন সে ছিল কর্মে ও মর্মে পরাধীন। অনেক সংগ্রাম আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পর বাঙালী তার পথের দিশা লাভ করে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রধানত বঙ্গবন্ধুই বাঙালীকে মত ও পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু এ মত ও পথের জন্যও তাকে রক্ত দিতে হয়েছে। অবাক হতে হয় হাতেগোনা কয়েকজন ভাষাশহীদের রক্ত পরবর্তীতে লাখো লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে আজ আমাদের জাতিরক্তে মিশে আছে! শহীদ যেমন মরে না, শহীদের রক্তও কখনও শুকিয়ে যায় নাÑ তা তার জাতিরক্তে মিশে নিরন্তর বহমান থাকে।
×