ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৬ গাড়ির দুটি ফেরত দিল বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৬ গাড়ির দুটি ফেরত দিল বিশ্বব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টনক নড়েছে বিশ্বব্যাংকের। অন্যের গায়ে দুর্নীতির গন্ধ শুকতে অভ্যস্ত বিশ্বব্যাংক এবার নিজের অনিয়মের অপবাদমুক্ত হতে ফেরত দিয়ে গেছে দুটো গাড়ি। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৬ গাড়ি নিয়ম বহির্ভূতভাবে হস্তান্তরের অভিযোগে তদন্ত শুরুর পর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের হাতে গাড়ি দুটো তুলে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। সোমবার সকালে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা এসে টয়োটার একটি আরএভি-ফোর এসইউভি এবং একটি সেডান জমা দিয়ে যান। এ সম্পর্কে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, দুটি গাড়ি জমা দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, তারা শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করেছে। বাকি ১৪টি গাড়ির বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক কী পদক্ষেপ নেয়, সেজন্যও নজরদারি অব্যাহত রাখা হবে। গাড়ি দুটির ব্যবহারকারী ছিলেন ফিনল্যান্ডের নাগরিক মির্ভা তুলিয়া এবং ভারতীয় মৃদুলা সিং। মির্ভা তুলিয়া ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট হিসেবে এবং মৃদুলা সিং ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে সিনিয়র সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময় তারা ব্যক্তিগত ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এই গাড়ি দুটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনেন। উল্লেখ্য, শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আনা ১৬ গাড়ির বিষয়ে জানতে চেয়ে গত বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে একটি চিঠি পাঠানো হয় অধিদফতরের পক্ষ থেকে। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয় গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করতেন, তারা এখন কোথায় আছেন এবং গাড়িগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কী? উত্তর দেয়ার জন্য সাতদিন সময় দেয়া হয় বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়কে। তবে শুল্ক ফাঁকির ওই অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের কোন বক্তব্য সে সময় পাওয়া যায়নি। শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, ২০০৩ সালের প্রিভিলেজড পার্সনস (কাস্টমস প্রসিডিউর) রুলসের আওতায় বাংলাদেশে কর্মরত দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিশন হেডের সুপারিশ থাকতে হয় এবং এনবিআর ওই গাড়ির বিপরীতে একটি পাসবুক দেয়। ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে তার আগে তাকে গাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও ওই পাস বইয়ের তথ্য কাস্টমসের নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হয়। ওই সুবিধার আওতায় ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন মডেলের ১৬টি গাড়ি আনা হয়। সেই কর্মকর্তারা দেশ ত্যাগ করলেও কাস্টমসের কাছে তাদের গাড়ির বিষয়ে কোন তথ্য জমা পড়েনি। এ জন্যই ১৬টি গাড়ি তলবের চিঠি পাঠানো হয়। তবে প্রিভিলেজড পার্সনস রুলসের আওতায় আনা গাড়ি হস্তান্তর করার তিনটি বৈধ উপায় আছে। ওই গাড়ি নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে, অন্য কোন প্রিভিলেজড পার্সনকে হস্তান্তর করা যেতে পারে, অথবা সব ধরনের কর ও শুল্ক দিয়ে সাধারণ ব্যক্তির যানবাহন হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাউকে হস্তান্তর করা যেতে পারে। কেউ যদি আইন অমান্য করে গাড়িগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে থাকেন এবং সেই অর্থ যদি তিনি দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে বলে জানান ড. মইনুল খান। তিনি বলেন, গত পরশু বিশ্বব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল শুল্ক গোয়েন্দা দফতরে উপস্থিত হয়ে গাড়ি ফেরতের বিষয়ে তাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এই আলোচনার সূত্রে দেশে প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফান স্বাক্ষরিত পত্র মারফত বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষে গাড়ি দুইটি সোমবার সকালে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। গাড়ি দুটি বর্তমানে শুল্ক গোয়েন্দার সদর দফতরের হেফাজতে রয়েছে। কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই করে গাড়ি দুইটির বিষয়ে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
×