ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক পেলেন ১০ গুণী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক পেলেন ১০ গুণী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনেক কণ্ঠ মিলে গেল এক সুরে। সবাই মিলে একসঙ্গে স্মরণ করলেন বায়ান্নর ভাষাশহীদদের। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর পাঠ করলেন আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী রচিত কবিতা ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। তাঁর সঙ্গে সমস্বরে উচ্চারিত হলোÑ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।/ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি...। সোমবার বসন্ত সন্ধ্যায় এভাবেই উদ্্যাপিত হলো একুশের প্রথম প্রহর। কিংবদন্তি আবৃত্তিশিল্পী গোলাম মুস্তাফা স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন বিশে ফেব্রুয়ারি হলো এ উদ্যাপন। বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী ও বাচিকশিল্পীর প্রয়াণবার্ষিকীর দিনে এ অনুষ্ঠানে দশ গুণী আবৃত্তিশিল্পীকে প্রদান করা হয় গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। আবৃত্তিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গোলাম মুস্তাফা পদক প্রদান করা হয় সৈয়দ হাসান ইমাম, মৃণাল সরকার (মরণোত্তর), নিখিল সেন, ওয়াহিদুল হক (মরণোত্তর), কামাল লোহানী, নাজিম মাহমুদ (মরণোত্তর), হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য (মরণোত্তর), অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস (মরণোত্তর), কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী (মরণোত্তর) ও আশরাফুল আলমকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন গোলাম মুস্তাফার মেয়ে খ্যাতিমান অভিনয় ও আবৃত্তিশিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্। পদকপ্রাপ্তদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন অতিথিরা। মরণোত্তর পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে পদক গ্রহণ করেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে অনুভূতি ব্যক্ত করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম ও কামাল লোহানী। পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত গুণীজনদের পক্ষে বক্তব্য রাখে অধ্যাপক নরেন বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জলি বিশ্বাস। অনুভূতি প্রকাশ করে গোলাম মুস্তাফার স্মৃতিচারণ করেন আশরাফুল আলম। বলেন, আবৃত্তির পাশাপাশি চমৎকার লেখার দক্ষতাও ছিল গোলাম মুস্তাফার। তাঁর জ্ঞানের পরিধিও ছিল বিস্তৃত। এ কারণে যে কোন আড্ডায় তিনি ছিলেন মধ্যমণি। আবৃত্তি দিয়ে জীবন ধারণ করা যায় না। তাই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অভিনয়কে। মানুষকে আনন্দ দেয়াকে জীবনের অনেক বড় কাজ বলে বিশ্বাস করতেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আবৃত্তি শিল্পীদের কোন উচ্চাভিলাষ নেই। সম্ভবত বাংলাদেশে এটা কোন দিনই পেশা হবে না। এটি চর্চা করে মিডিয়ার ভাষায় কোনদিনই সুপার স্টার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরেও হাজারো ছেলেমেয়ে চর্চা করছে। এই যে মানুষ কবিতাকে ধারণ করছে, তারা যেখানে থাকুক, তারা সচেতন মানুষ হিসেবে থাকবে। আপাদমস্তক বাঙালিত্বকে ধারণ করবে। সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, আমার বাবা একজন জীবনমুখী মানুষ ছিলেন। ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা বাংলাদেশের জন্য নিবেদিত একজন শিল্পীকে হারিয়েছি। আজকের দিনে আমার উপলব্ধি হয়েছে আগামী বছর থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি বাবার জীবনকে উদযাপন করব। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল কবিতার দোলায়িত ছন্দমাখা আবৃত্তি পরিবেশনা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কণ্ঠশীলন, স্বরশ্রুতি, কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, ঢাকা স্বরকল্পন, সংবৃতা, মুক্তধারা সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র, প্রজন্মকণ্ঠ, চারুকণ্ঠ আবৃত্তি সংসদ, স্রোত আবৃত্তি সংসদ, স্বরব্যঞ্জন, মুক্তবাক, স্বরকল্পন আবৃত্তিচক্র, ত্রিলোক বাচিক পাঠশালা, চারুবাক, মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, স্বরচিত্র, আবৃত্তি একাডেমি, বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমি ও উদীচী। রবীন্দ্র সরোবরে জোটের একুশের অনুষ্ঠানমালা ॥ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত অমর একুশে অনুষ্ঠানমালার ত্রয়োদশতম দিন ছিল সোমবার। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ সেøাগানে অনুষ্ঠিত দুই সপ্তাহব্যাপী আয়োজনটি চলছে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে। এদিন বিকেল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন সংগঠন পরিবেশন করে দলীয় ও একক আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য ও পথনাটক। সমশ্বরের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গানটি পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তাদের পরবর্তী পরিবেশনায় ছিল দেশের গান ‘রক্ত শিমুল রক্ত পলাশ’ ও ‘আজ যত যুদ্ধবাজ’। এরপর শিল্পী সমর বড়–য়ার একক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় দেশের গান ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’। শিল্পীর গাওয়া দ্বিতীয় গান হলো ‘তোমার সমাধি ফুলে ফুলে সাদা’। অনুষ্ঠানে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে দৃষ্টি সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিশু সংগঠন মন্দিরা সাংস্কৃতিক পাঠশালার শিল্পীরা। একক কণ্ঠে গান শোনান ফকির সিরাজ, অমিত আচার্য হিমেল, আয়শা আক্তার, স্বপন সাহা, মিতা মোস্তফা, শুভ্রা দেবনাথ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহমুদা আক্তার ও অনিকেত। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে মন্দিরা সাংস্কৃতিক পাঠশালা ও বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টসের শিল্পীরা। সব শেষে পথনাটক পরিবেশন করে ভিষণ থিয়েটার ও ঢাকা থিয়েটার মঞ্চ। একই স্থানে আজ মঙ্গলবার শেষ দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। বিভিন্ন সংগঠন পরিবেশন করবে দলীয় আবৃত্তি, একক আবৃত্তি, দলীয় সঙ্গীত, একক সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য, শিশু-কিশোর পরিবেশনা ও পথনাটক।
×