ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের দেখতে জাতিসংঘ দূত কক্সবাজার যাচ্ছেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গাদের দেখতে জাতিসংঘ দূত কক্সবাজার যাচ্ছেন আজ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারে যাচ্ছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। এছাড়া গত ৯ অক্টোবর থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত রোহিঙ্গা ঢুকেছেন সেটা জানতে চায় জাতিসংঘ। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক বৈঠকে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি এসব জানিয়েছেন। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সময় ইয়াংহি লি জানান, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি (ইয়াংহি লি) নিজেই যেহেতু বাংলাদেশে এসেছেন। কক্সবাজারে তিনি সরেজমিন রোহিঙ্গা এলাকা পরিদর্শন করবেন। নিজের চোখেই রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে পারবেন। আর এই বৈঠকটি ছিল সৌজন্যমূলক। ইয়াংহি আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। গত ৯ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করাই তার এই সফরের মূল উদ্দেশ্য। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পাশাপাশি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভালভাবে অনুধাবন করতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি গত ১০-২১ জানুয়ারি মিয়ানমারে ১২ দিন সফর করেছেন। তিনি সফর শেষে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন। এবার সীমান্তের এপারে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে চায় জাতিসংঘ। এখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে সমস্যা সমাধানে সুপারিশও করবে সংস্থাটি। সে লক্ষ্যেই ইয়াংহি লি বাংলাদেশে এসেছেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদনে দেশটির নির্বাচিত নতুন সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের তীব্র সমালোচনা করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সেদেশের আইন মেনে এবং মানবাধিকার রক্ষা করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কোনভাবেই যেন রোহিঙ্গাদের ওপর আইনবহির্ভূত হত্যাকা- না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য বলা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার বৈঠকের বিষয়ে সোমবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লির সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে প্রত্যাবাসন করা হয়। তবে সেই চুক্তি ২০০৫ সালে স্থগিত হয়ে যায়। তিনি জানান, এখন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের ফলে কক্সবাজার এলাকার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, জনসংখ্যাগত, পরিবেশগত, মানবিক ও নিরাপত্তার বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে আরও জানান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বর্ডার লিয়াঁজো অফিস তৈরি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা সংলাপের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া উভয় দেশ বিসিআইএম ও বিমসটেক ফোরামে টেকসই আঞ্চলিক উন্নয়নে যুক্ত রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করেছেন। একই সঙ্গে এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করার জন্য আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সফরের সময় জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
×