ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

শহীদ মিনারের স্রোত গিয়ে মিশবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শহীদ মিনারের স্রোত গিয়ে মিশবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মোরসালিন মিজান ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সেই একুশে আজ। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ দিয়েছিলেন ‘রফিক, শফিক, বরকত কত নাম।’ পরম শ্রদ্ধায় আজ জাতি তাদের স্মরণ করবে। স্রোত নামবে শহীদ মিনারে। সকাল বেলায় শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে সবাই পায়ে হেঁটে রওনা করবেন বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। আজ মেলার প্রবেশদ্বার খোলা হবে বেলা ১১টায়। প্রতিবারের মতোই সাদা কালো রঙের পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সী মানুষ মেলা ঘুরে বেড়াবেন। অবশ্য ঘুরে বেড়ানোর খুব সুযোগ আজ থাকবে না। বিশেষ এই দিবসে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠবে পুরো প্রাঙ্গণ। গায়ে গা লাগা ভিড় ঠেলেও মানুষ মেলায় যাবেন। একুশের দিন যে! আজ একুশের আবেগ আর ভাষার প্রতি ভালবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। নতুন বই ॥ মেলার ২০তম দিনে নতুন বই এসেছ ৯৪টি। এগুলোর মধ্যে গল্প ১৫, উপন্যাস ১৭, প্রবন্ধ ১, কবিতা ৩০, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ২, জীবনী ৫, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ১, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ১, সায়েন্স ফিকশন ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর রয়েছে ১৬টি বই। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- সরকার আমিনের ‘প্রথম রাতের উপাসনা’ (চৈতন্য), পলাশ মাহবুবের ‘সূর্যমুখীরা দুই বোন’ (অন্যপ্রকাশ), পূরবী বসুর ‘শামসুদ্দিন আবুল কালামের অপ্রকাশিত চিঠি ও স্মৃতি’ (অন্যপ্রকাশ), সেলিনা হোসেনের ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’ (পাঠশালা), সুব্রত বড়ুয়ার ‘গুণীজন’ (অনুপম), সৈয়দ শামসুল হকের ‘মুক্তিযুদ্ধের নাটকসমগ্র’ (স্টুডেন্ট ওয়েজ), ইমদাদুল হক মিলনের ‘বানরের রাজ্যে অজগর’ (পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স), রফিকুল ইসলাম রতনের ‘আমার দেখা আমার লেখা’ (লেখা প্রকাশ), শ্রাবণ আহমেদের ‘অর্ধেক মানব অর্ধেক মানবী’ ও বাকী বিল্লাহ্ রেজার ‘কায়ার ছায়া।’ মোড়ক উন্মোচন ॥ জার্নিম্যান বুকস প্রকাশিত কবি মুহাম্মদ সামাদের ‘সাত দেশের কবিতা’ বইটির পাঠ উন্মোচন হয়েছে গতকাল। বইটিতে চীন, জার্জিয়া, ভিয়েতনাম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সার্বিয়া ও সুইডেনের ১০ জন কবির ১০১টি কবিতা অনুবাদ করা হয়েছে। বিদেশী কবিদের মধ্যে রয়েছেনÑ চীনের চিতি মাচিয়া, জাই ইয়ংমিংয়, জর্জিয়ার লুরাব আর্তভেলিয়াসভিলি, ভিয়েতনামের কবি ন্যুয়েন ফান কোই মাই, যুক্তরাষ্ট্রের সাইমন যে আর্টিজ, জ্যামি প্রক্টর শ্যু, যুক্তরাজ্যের নিয়া ডেভিস, সার্বিয়ার দ্রগান দ্রাগোইলভিচ, ক্রিস্টিয়ান কার্লসন এবং সুইডেনের লারস হেগার। অনলাইনে হুমায়ূন আহমেদের বই ॥ মেলায় এসেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘লীলাবতি’ বইয়ের ই-বই ভার্সন। উদ্বোধন করেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাওন বলেন, বর্তমান সময়ে ই-বই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকেই অনৈতিকভাবে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পিডিএফ কপি প্রকাশ করেছে। যার ফলে লেখক ও তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন যদি বৈধভাবে পিডিএফ কপি ছাড়া হয় তবে পাঠক অবশ্যই বৈধটিকেই গ্রহণ করবে। এর ফলে বৈধ স্বত্বাধিকারীরাই লাভবান হবে।’ মূল মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘উন্নতমানের শিক্ষা : সামাজিক অগ্রগতির চাবিকাঠি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনÑ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। সাক্ষরতার দিক দিয়ে আমরা অনেকটা অগ্রগতি অর্জন করলেও সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যায়নি। তদুপরি তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষায় বাণিজ্যিক তৎপরতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির অনুপ্রবেশ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। এ বিষয়ে আশু ইতিবাচক পদক্ষেপ করা না গেলে প্রকৃত শিক্ষিত জাতি গঠনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল লোপা খানের পরিচালনায় ‘আবৃত্তিশীলন’র বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশনা। এছাড়া আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, সায়েরা হাবীব, ঝর্ণা সরকার এবং তামান্না নীপা।
×