ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ প্রভাতফেরি হবে, মানুষের ঢল নামবে শহীদ মিনারে। পুষ্পিত শ্রদ্ধা জানাবে মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি। গত বছরের একুশে ফেব্রুয়ারির কথা মনে পড়ে। সেদিন জনকণ্ঠ ভবনে ‘ঢাকার দিনরাত’ লিখতে বসে কিছুক্ষণ থমকে ছিলাম। অফিসে আসার সময় সড়কে বিশেষ ভিড় দেখিনি। অন্যদিন ঢাকার রাজপথ রাজত্ব করে প্রাইভেটকার। সেদিন সকালে সেই প্রাইভেট গাড়িরই সংখ্যা অতিসামান্য। ভাবছিলাম একুশের পথ ধরে স্বাধীনতার সুফল এটাও যে লাখ লাখ মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি হাঁকাতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে তাদের ভেতর দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ, আপন সংস্কৃতির জন্য দায়িত্ববোধ কতখানি রয়েছে সেটা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত থাকি। শহীদ দিবসে সকাল বেলায় রাস্তা এতটা সুনসান কিভাবে? বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ির স্বল্পতা দেখে অনুমান করি, গাড়িঅলারা সব বিশ্রামে আছেন এই ছুটির দিনে। ঢাকার রাস্তায় কম গাড়ি বেরুলে কি বায়ুদূষণ কিছুটা কম হয়? রাজধানীর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছে। জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আবদুল মালিক একবার নাগরিক সচেতনতার জন্য বলেছিলেন, ‘সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড থেকে শুরু করে মার্কারি, লেডের মতো ভারি পদার্থ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এগুলো ফুসফুসের পাশাপাশি হৃদরোগ, যকৃতের সমস্যা ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বায়ুদূষণের কারণে ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, এ্যাজমা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রদাহজনিত (সিওপিডি) রোগ বেশি হচ্ছে।’ এটা ঠিক আমাদের শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্বের অনেক শহরের তুলনায় বেশি। ঢাকাবাসীকেও বায়ুদূষণের ব্যাপারে সজাগ হতে হবে। বৃহস্পতিবার একটি সংবাদপত্রে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে নতুন তথ্যের প্রতি অনেকেরই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। রাজধানীর দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলা। নগরের বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এই ধুলা হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লী। ঢাকার পরেই রয়েছে পাকিস্তানের করাচি ও চীনের বেইজিং। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে একযোগে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গ্যাসচেম্বার ঢাকা থেকে আমাদের মুক্তির উপায় খুঁজে সে অনুযায়ী সক্রিয় হতে হবে। প্রথম অগ্নিশিখা ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় প্রতিবাদী সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। ১৯৫৩ সালের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে আমরা বুঝব একুশে ফেব্রুয়ারির মতো একটি সংকলন প্রকাশ করা কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কাজটি করে ওঠা সহজও নয়। পশ্চিমাদের শাসন-শোষণ-শ্যেনদৃষ্টির মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে প্রতিবাদী, প্রকৃত বিদ্রোহী ও প্রগতিশীল এবং সত্যিকারের সৃষ্টিশীল সংকলন প্রকাশ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জই ছিল। মুসলিম লীগের শাসন, চতুর্দিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, বামপন্থী মাত্রই রাষ্ট্রদ্রোহী, সরকারের গণবিরোধী শাসনের স্টিমরোলারÑ এমন পরিস্থিতিতে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনের প্রকাশ একটি দুঃসাহসিক কাজ। শুধু পরিবেশই বৈরী ছিল না, নতুন লেখকরাও সেভাবে শনাক্ত হন নাই; তাঁদের রচনার সাহিত্যমানও সেভাবে তৈরি হয়নি। তবু একুশের চেতনা এবং নবপর্যায়ে যাত্রা করা একটি ভূখ-ের সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক প্রাণশক্তি ও প্রণোদনাকে যুগপৎ ধারণ করার জন্য ওই সংকলনের কোনো বিকল্প ছিল না। কয়েক বছর আগেই বাংলায় দাঙ্গার মতো মানবতাবিরোধী ঘটনা ঘটে গেছে। দায়িত্বশীল সাহিত্যকর্মী হিসেবে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদনা করলেন দাঙ্গার পাঁচটি গল্প। আবারও দেখুন, অন্য কেউ এই কাজে এগিয়ে আসেননি, হাসান এসেছিলেন। তাঁকে আসতেই হতো। কারণ গভীর দেশপ্রেম ছিল তাঁর ভেতরে, আর দেশসেবার এবং একইসঙ্গে দেশের মানুষকে জাগাবার উৎকৃষ্ট পথ তাঁর সামনে ছিল একটাইÑ সাহিত্য সম্পাদনা। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনের মূল পরিকল্পনাকারী তিনি ছিলেন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-অভিমুখী এবং জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। ব্যক্তিগত তুষ্টি বা কোন গোষ্ঠীর অভিপ্রায় চরিতার্থ নয়, তিনি সংকলন করেছিলেন দেশেরই প্রয়োজন মেটাতে। মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করে বটে, আবার কখনও কখনও ইতিহাসই যেন ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে; ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। কী ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলনে? প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, গান, একুশের নকশা, চিত্রমালাÑ সকল কিছুই একুশকেন্দ্রীক, ভাষা আন্দোলনের সাহিত্যিক দলিল। সেই সঙ্গে বাংলা ভাষা আন্দোলনের ঘটনাক্রমকে তুলে ধরা। একুশের মূল চেতনা হচ্ছে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং তার মর্যাদা সমুন্নত রাখা। মায়ের ভাষায় বাংলা মায়ের জন্যে শাব্দিক উচ্চারণ এবং সৃষ্টিশীলতা। তাই সেই ১৯৫৩ সালে বাংলায় কিছু রচনা করার অর্থই ছিল একুশের চেতনাটিকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। সংকলনটিতে বাহান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনাপুঞ্জি দিন তারিখসহ লিপিবদ্ধ হয়েছিল। এই সংকলনের ভেতর দিয় হাসান হাফিজুর রহমান দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পাঠকসমাজ তথা দেশবাসীর সম্পর্ক সাঁকো প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আবার নতুন লেখক তৈরির অঙ্গীকারবোধটিও বিস্মৃত হননি। সংকলনটি অনেক কবিতার সঙ্গে ধারণ করেছিল আজকের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, যেটি তাঁর জীবনের প্রথম প্রকাশিত কবিতা। সংকলনের একমাত্র প্রবন্ধ যা আলী আশরাফের নামে মুদ্রিত হয়েছিল সেটি ছিল কমিউনিস্ট নেতা খোকা রায়ের লেখা। এ প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান তাঁর স্মৃতিকথা ‘কাল নিরবধি’তে লিখেছেন, ‘...পরিচিত সবার কাছেই হাসান লেখা চাইলেন। এমন সময়ে জেলখানার ভেতর থেকে কমিউনিস্ট নেতা খোকা রায়ের চোরাপথে পাঠানো প্রবন্ধ ‘সকল ভাষা মর্যাদা’ আবদুল্লাহ আল মুতীর কাছে পৌঁছাল। অতি ক্ষুদ্রাক্ষরে লেখা প্রবন্ধটি আমি হাতে কপি করি। স্থির হয়, হাসানের পরিকল্পিত সংকলনে এটাই যাবে একমাত্র প্রবন্ধ হিসেবে-লেখকের নাম দেওয়া হয় আলী আশরাফ’। হাসান হাফিজুর রহমানের জন্য একটি গল্প লিখে দেন তরুণ আনিসুজ্জামান। গল্পটি প্রথমবার পড়ে হাসান বলেন, আরম্ভটা খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু সমাপ্তিটা নিরাশ করে। পরে গল্পের সমাপ্তিটা পরিবর্তন করে দেন লেখক। ড. আনিসুজ্জামানের কাছ থেকে আরও জানা যায়, একুশের প্রথম সংকলনে শামসুর রাহমানের যে কবিতাটি ছাপা হয়, সেটি ঠিক ঐ সংকলনকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়নি। কবিতাটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন উপলক্ষে শামসুর রাহমানের কোন কবিতা ছিল না; তাগাদা দিয়েও যখন তা পাওয়া গেল না, তখন কলকাতার ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত তার একটি কবিতা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেন হাসান।’ উল্লেখ্য, সংকলনে প্রকাশিত কবিতাগুলোর পৃথক কোন শিরোনাম ছিল না। সংকলনের ‘একুশের কবিতা’ বিভাগে গ্রন্থিত হয়েছিল সব কবিতা। এতে কোন সংশয় নেই যে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনটি এই ভূখ-ের মানুষের সামজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক চেতনা ও সার্বিক আশা-আকাক্সক্ষার প্রথম গ্রন্থিত রূপ। কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘একুশের সংকলন’-এর এক দশক পূর্তিতে হাসান হাফিজুর রহমানের সংকলনটি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘গুণে-মানে কেমন ছিল এই সংকলন? এ কথা তোলাই মুশকিল, একশ’ রকম মাপকাঠি লাগবে সে বিচারের জন্য। প্রচলিত সাহিত্যের মান, কবিতা গল্পের মান, শিল্পের চলতি মান এখানে চলবে না। এই সংকলনের গুরুত্ব পর্বততুল্য, তার আলোর বিচ্ছুরণছটা দিগন্ত-পেরুনো। বাঙালীর জাতিত্ব ও বিশ্ববোধের নিয়ামক, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মহাকর্মযজ্ঞের প্রথম অগ্নিশিখা।’ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলন প্রেরণা যুগিয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের সাহিত্যকর্মীদের। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন মানেই ছিল একুশের সংকলন প্রকাশ। দু-চার টাকা চাঁদা তুলে বা দোকান-প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য বিজ্ঞাপন নিয়ে সেই সংকলন প্রকাশ করা হতো। এসব সংকলন প্রকাশে প্রগতিশীল লেখক-শিল্পীরা জড়িত থাকতেন। প্রতিটি সংকলন থেকে বিচ্ছুরিত হতো বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা। চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতিচারণে বিষয়টি উঠে এসেছে এভাবে: ‘...প্রতি একুশেতে শত শত সংকলন প্রকাশিত হতো লেখা ও আঁকা নিয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে। শহীদ মিনারের পাদদেশে, সামনের ফুটপাথে [চাটাই] বিছিয়ে সেই সংকলনগুলো বিক্রি হতো। ...এসব কর্মকা-ের সঙ্গে আমরা জড়িয়ে পড়েছিলাম সমসাময়িক সবাই। নান্দনিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রচ্ছদ, ভেতরের সজ্জা, হরফ নির্বাচন- সবই করে দিতাম একটি সুন্দর সংকলনের জন্য। এই সংকলনগুলো শহীদ মিনারের পাদদেশে বিক্রি হতো। আমার ধারণা, এটাই ছিল একুশের বইমেলার প্রথম বীজ রোপণ।’ একটি জরুরী প্রশ্ন মৌচাক-চৌধুরীপাড়া রাস্তাটা ঠিক করবে কে? জনস্বার্থ সম্পর্কিত এমন প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যাপক-কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে। লেখাটিতে তিনি বলছেন, ‘এই এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলছে চার-বছর ধরে। ২০১৪-এর ডিসেম্বরে নির্মাণযজ্ঞ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৬-তেও শেষ হয়নি (আরও কত বছর লাগবে, আল্লাহ মালুম)। এই চারটি বছর ধরে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাচ্ছে এ এলাকার মানুষ। রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে একাকার। অনেকদিন ধরে মৌচাক থেকে রামপুরাগামী রাস্তাটির কিছু অংশ (মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত) চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেলগেট থেকে চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থাও ভয়াবহ। খানাখন্দে ভর্তি, গর্তগুলো এতটাই গভীর (এবং সবসময় পানি জমে থাকে বলে) সেখানে রিকশা বা সিএনজির মতো ছোট যানগুলো পড়লে আর উঠতে পারে না। দশ-বারোজন মিলে ঠেলেঠুলে সেই নোংরা পানি থেকে ওগুলোকে টেনে তোলে। বাস-ট্রাকগুলো জোরজুলুম করে চললেও গাড়ি চলতে গিয়ে একই বিপত্তির মধ্যে পড়ে। প্রতিদিনই এসব ঘটনা ঘটে চলেছে আর ভুক্তভোগীরা অবিরাম অভিশাপ দিয়ে চলেছেন তাদের যারা উপহার দিচ্ছে জঘন্য ভোগান্তির জীবন। রাস্তাটি চলাচলের পুরোপুরি অযোগ্য হলো ‘মাননীয়’ কর্তৃপক্ষ (এরা কারা?) সেটি বন্ধ করতে পারছে না, কারণ সেক্ষেত্রে কয়েক হাজার মানুষকে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হবে- তাদের বেরুনোর আর কোন রাস্তা নেই, এটি ছাড়া। তাহলে কি এভাবেই চলবে? এই রাস্তাটি ঠিক করার দায়িত্ব কার? কেউ কি জানেন? কবে ঠিক করা হবে এটি, জানেন কেউ? কেউ কি পারেন এ এলাকার মানুষকে একটু পরিত্রাণ দিতে?’ গ্রন্থ-মোড়ক উন্মোচন সৈয়দ আনওয়ারুল হাফিজের উপন্যাস ‘রূপে তোমায় ভোলাব না’র গ্রন্থ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়ে গেল রবিবার জাতীয় জাদুঘরে। এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, লেখক আনিসুল হক ও গুণীজন গওহর রিজভী উপন্যাসটি নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করেন। বইটি গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এ বই আমাদের বইমেলা প্রতিবেদকদের (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক) দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আমার ঘোর সন্দেহ রয়েছে বইমেলা যারা কাভার করেন তাদের নিরানব্বই ভাগ লেখকের নাম শুনেছেন কিনা। সৈয়দ আনওয়ারুল হাফিজ ‘রূপে তোমায় ভোলাবো না’ উপন্যাসখানি লিখছেন কয়েক বছর ধরে। ভদ্রলোক পঁচাত্তর পেরিয়ে উপন্যাস লিখতে শুরু করেছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস পড়েই আলোড়িত হই। শেখার যেমন কোন বয়স নেই, তেমনি লেখা শুরুরও কোন বয়স নেই। সৈয়দ আনওয়ারুল হাফিজ, যিনি পেশায় চিকিৎসক, পুরটা ক্যারিয়ার কেটেছে বিলেতে। এখন তার সাতাশি চলছে। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী যিনি এন্টার্কটিকায় গেছেন। গত বছর জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যায় আদিম অরণ্যে তাঁর গরিলা দর্শনের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছিলেন। ভদ্রলোকের লেখার প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই। অথচ এতকাল যে তাঁর লেখালেখি হয়ে ওঠেনি সেজন্যে কারণ হিসেবে বলেন অন্য চিন্তা ও অন্ন-অন্বেষণের ব্যস্ততার কথা। যা হোক, এবারের বইমেলায় তাঁর যে উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে সেটি (রূপে তোমায় ভোলাবো না) দুই দেশের দুই নর-নারীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টি ছাপিয়ে ওই দুজনের পেশাগত সঙ্কট ও সম্ভাবনা এবং উভয়ের নিজ নিজ দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সর্বোপরি মানুষের চিরন্তন আবেগ ও গভীর বোধকে উর্ধে তুলে ধরেছে। হিগস-বোসন কণা বা গড পার্টিক্যালের আবিষ্কারের জন্য ক’বছর আগে নোবেল দেয়া হলো আবিষ্কারকদের। এই আবিষ্কার চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছিল জেনিভায়। লেখক সৈয়দ আনওয়ারুল হাফিজের এই উপন্যাসের নায়িকা একজন পদার্থবিজ্ঞানী। বিষয়টি আদ্যোপান্ত বুঝে নিয়ে উপন্যাসে তুলে আনার প্রয়োজনে লেখক গত বছর জেনিভাতে যান। লেখার জন্য এতটা সিরিয়াস ও নিবেদিতপ্রাণ হতে দেখে গর্ব বোধ হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ [email protected]
×