ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাংসের বাজার

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মাংসের বাজার

অস্থির হয়ে উঠেছে মাংসের বাজার। শনিবার জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দাম অকার্যকর করে বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫০০ টাকায়। মানভেদে ৫৮০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস। বিষয়টি সাধারণ ভোক্তাদের জন্য আশঙ্কাজনক। রমজানের তিন মাস আগেই যদি এভাবে এক লাফে মাংসের দাম বেড়ে যায় তাহলে রোজার সময়ে কী হবে? সাধারণত দেখা যায় একবার কোন জিনিসের দাম চড়া হয়ে গেলে তার দাম আর কমে না। বরং ক্রমান্বয়ে তা বেড়েই চলে। মাংসের দাম বাড়ার নেপথ্যে যেসব কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গাবতলী গরুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে গত সপ্তাহে মাংস বিক্রেতাদের ছয় দিনের ধর্মঘট শুরু হয়। এই ধর্মঘটের কারণে ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজারের মাংসের দোকানগুলো বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শনিবার পর্যন্ত তাদের ধর্মঘটের কর্মসূচী ছিল, তা পালন করা হয়েছে। আপাতত নতুন কোন কর্মসূচী তারা দিচ্ছেন না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সামনে তাদের বৈঠক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে কি মাংসের বাজার অস্থিতিশীলই থাকবে? দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা মিটাতে বিদেশ থেকে গরু আমদানি করতে হয়। এই আমদানির ক্ষেত্রে অনেক সময় বৈধ পথ অনুসরণ করা হয় না। ফলে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি আর দুর্নীতির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে ব্যবসায়ীর খরচ বেড়ে যায়। বাড়তি খরচ পোষাতে সাময়িকভাবে বাজারে মাংসের দাম বাড়তে পারে। জনকণ্ঠকে এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্ত পেরুতে প্রতিটি পশুর জন্য অতিরিক্ত ১৫-২০ হাজার টাকা গোনা লাগে। আবার সীমান্ত থেকে গাবতলী পৌঁছতে একটি গরুতে ব্যয় হয় ২০-৩০ হাজার টাকা। ওই ব্যবসায়ী খোলাখুলি বলেছেন, দেশে ইজারাদার, চামড়া ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে এখন ৫০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। বিষয়গুলো বিবেচনা করা দরকার। তা ছাড়া চামড়ার দামও আগের মতো নেই। গরুর যে চামড়া এক সময় ৪ চার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, সেই চামড়া এখন ২০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। ছাগলের যে চামড়া তারা এক সময় ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করতেন, তা এখন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মুনাফা কমে যাওয়ার ফলে মাংসের দাম বাড়িয়ে লাভের হিসাব ঠিক রাখতে গেলে তার চাপ ভোক্তার ওপরেই পড়বে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে মাংসের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। পরস্পরকে দোষারোপ কোন শুভ ফল বয়ে আনবে না।
×