ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্ধ ঘোষণার ৮০ দিন পর খুলে দেয়া হলো

শ্যামলীর ‘শিশুমেলা’ এখন ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শ্যামলীর ‘শিশুমেলা’ এখন ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্ধ ঘোষণার ৮০ দিন পর অবশেষে খুলে দেয়া হলো রাজধানীর শ্যামলীতে প্রথম বেসরকারীভাবে নির্মিত শিশুদের জন্য পার্ক ‘শিশুমেলা’। তবে আগের নামে নয় শিশুদের নতুন এ বিনোদন কেন্দ্রটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড’। রবিবার দুপুরে নতুন এ পার্কটির উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। পূর্বের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ান্ডারল্যান্ড গ্রুপের কাছেই এক বছরের চুক্তিতে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ও আগের ইজারার বকেয়ার সঙ্গে তিনগুণ জরিমানাসহ অর্থ আদায় করে এ পার্কটি খুলে দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে কোম্পানির পক্ষ থেকে গরিব অনাথ পথশিশুদের জন্য বিনামূল্যে সকল রাইড ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয় ও শিশুদের খাবার প্রদান করা হয়। এছাড়া পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সপ্তাহের প্রতিদিনই গরিব শিশুদের জন্য বিনামূল্যে পার্কে প্রবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মেসবাহুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) আমিনুল ইসলাম, ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেন, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ, ওয়ান্ডারল্যান্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পার্কটি উদ্বোধনকালে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, বেশকিছু ত্রুটির জন্য পার্কটি বন্ধ করা হয়েছিল। তারা (মেসার্স ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিস) ভুল স্বীকার করে বকেয়া ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে এবং এর জরিমানা হিসাবে ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করে। তিনি বলেন, তাদের বিনিয়োগের কথা চিন্তা করে এক বছরের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে টেন্ডারের মাধ্যমে পার্কটি ইজারা দেয়া হবে। অন্য কেউ এর চেয়ে বেশি সুবিধা দিলে এক বছর পর তা বিবেচনা করা হবে বলেও জানান মেয়র। এসময় আগামী ২/৩ বছরে আরও বেশ কিছু নতুন শিশুপার্ক নির্মাণেরও ঘোষণা দেন তিনি। নতুন নিয়মে মাসিক ভাড়া আগের চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি, ডিএনসিসির অনুমতি ছাড়া রাইডসের মূল্য বাড়াতে পারবে না ইজারাদাররা। পার্কটি বন্ধ করার আগে ৪ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া থাকলেও নতুন চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। যা আগের তুলনায় ৩৫ গুণ বেশি। ভাড়া বেশি দিলেও বিভিন্ন রাইডসের মূল্য আগের চেয়ে বৃদ্ধি করতে পারবে না ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। উপস্থিত সাংবাদিকরা এ বিষয়ে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ভাড়া বৃদ্ধি হলেও রাইডসের মূল্য বাড়বে না। মূল্য বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই ডিএনসিসির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে গত বছরের ২৬ নবেম্বর শিশুতোষ বিনোদন পার্কটি বন্ধ করে দেয় ডিএনসিসি। পরবর্তীতে পার্কটি চালু করার জন্য একটি কমিটি করে দেয়া হয়। কমিটি ইজারা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা বাবদ ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার স্থলে জরিমানাসহ ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় এবং মাসিক ভাড়া ৪ হাজার ২৭ টাকার স্থলে ১ লাখ ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ করে অস্থায়ীভাবে পূর্ববর্তী ইজারা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ১ বছরের জন্য ইজারা প্রদানের সুপারিশ করে। সে মোতাবেক ডিএনসিসি’র সম্পত্তি বিভাগ ইজারাদারের কাছ থেকে বকেয়াসহ ১ বছরের অগ্রীম ভাড়া বাবদ ৪২ লাখ ২১ হাজার ৩১ টাকা আদায় করে। নতুন ভাড়া নির্ধারণ সত্ত্বেও পার্কের প্রবেশ মূল্য ও অন্যান্য রাইডের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না এবং ভবিষ্যতে এরকম যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ডিএনসিসি’র অনুমোদন প্রয়োজন হবে মর্মে ইজারাদার লিখিতভাবে সম্মতি প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর শ্যামলীর শিশু হাসপাতালের পাশে ১ দশমিক ৪০ একর ভূমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে শিশুপার্ক হিসেবে পরিচালনার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন গুলশান-২-এ অবস্থিত একটি পার্ক ও শ্যামলীর একটি পার্কে নিজ খরচে আধুনিক খেলার যন্ত্রাংশ স্থাপন করার জন্য ইজারা দেয়া হয়। এরপর ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মেসার্স ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেসের পক্ষে গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিএমএম রহমানের সঙ্গে এক লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৬ টাকার বিনিময়ে তিন বছরের জন্য চুক্তি করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রতিবছর লীজ দেয়া মোট অর্থের শতকরা ১০ ভাগ অর্থ বাড়তি হিসেবে ডিএনসিসিকে প্রদান করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০১২ সালে শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ মামলায় হেরে যায়। কিন্তু কর্পোরেশন কোন প্রকার ইজারা ফি প্রদান বন্ধ করে দেয়। চুক্তির সময় শেষে চুক্তি নবায়ন না করে ইজারা বাতিল করে শিশুপার্কটি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি কর্পোরেশন। পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আদালতে একটি রিট মামলা দায়ের করে। দীর্ঘদিন ইজারার কোন অর্থ প্রদান না করায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আদালতে গিয়ে জানতে পারে যে, মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ নেই।
×