ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে মাদক পাচারে নারী সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে মাদক পাচারে নারী সিন্ডিকেট

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে হতদরিদ্র শ্রেণীর নারীদের ইয়াবা বহনে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। নারীরা গ্রেফতারের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে জামিনে ছাড়িয়ে নিতে প্রস্তুত থাকে একটি মহল। ফলে মাদক ব্যবসায় একাধিকবার নারীদের গ্রেফতারের ঘটনা পরিবারকে আতঙ্কিত করছে না। মাদক ব্যবসায়ীদের এ কৌশল দীর্ঘদিনের হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আঁচ করতে অনেকটা দেরি হলেও সম্প্রতি সন্দেহজনক নারীদের তল্লাশি চলছে। মাদক সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ধ্বংস হচ্ছে দেশের যুব সমাজ। কোটিপতি বনে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী। হতদরিদ্র শ্রেণীর মহিলাদের মধ্যে যারা এ ব্যবসায় বহনকারী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে তারাও স্বল্প সময়ে বিত্তশালী বনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এদিকে, সন্দেহজনক নারীদের তল্লাশি করতে রাস্তায় বিভিন্ন থানার চেকপোস্টে নারী পুলিশও মোতায়েন করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে দুদিনের অভিযানে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে চার নারী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে গ্রেফতার হওয়া এ নারীদের তিন পরিবারের আত্মীয়স্বজনরাই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়াও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত শিশুরাও রয়েছে ইয়াবা পাচার ও বহনের কাজে। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি নারীদের সিন্ডিকেট কাজ করছে ইয়াবা পাচারে। শিশু থেকে গৃহিনী পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীর নারীরা এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিও বেড়েছে। সন্দেহজনক নারীদের তল্লাশি চলছে যানবাহনসহ বিভিন্ন পয়েন্টে। বিশেষ করে কক্সবাজার থেকে আসা বিভিন্ন যানবাহনের দিকে নজরদারি বেশি। নগরীর প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে দমানো যাচ্ছে না ইয়াবা পাচার। শুধু ইয়াবাই নয়, বিভিন্ন কৌশলে চোলাই মদ, গাঁজা, আফিমসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য বহনে নারীরা জড়িয়ে পড়ছে। কারণ হিসাবে দেখা গেছে, সাধারণত পুরুষের প্রতি সন্দেহভাজন হয়ে বিভিন্ন পরিবহন ছাড়াও পথচারীদেরও এক সময় তল্লাশি করা হতো। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের উত্তর বাহারছড়ার কেচিদিয়া সড়কের একটি ভবনে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই সড়কের এন রাবেয়া ম্যানশন নামের একটি ভবনে অভিযান চলাকালে মোছাম্মৎ রাশেদা নামের এক নারী দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় র‌্যাব তাকে ২ হাজার ৭৭৫ পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে আটক করে। এদিকে, একইদিন বায়েজিদ থানা পুলিশের একটি দল চক্রেসো কানুন নামের আবাসিক এলাকার সড়কে অভিযান চালিয়ে সাত হাজার পিস ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। এরমধ্যে ২ নারী ও ২ জন পুরুষ রয়েছে। তাদের সবার বাড়ি কক্সবাজারে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- টেকনাফের হাসান আলী, রোকেয়া বেগম, আনোয়ারা বেগম ও আবদুর রহিম। এরা সম্পর্কে বেয়াই বেয়াইন ও জামাতা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, নারী পুরুষ একসঙ্গে ভ্রমণ করলে পুলিশেরও সন্দেহ থাকে না। ফলে তারা কৌশল অবলম্বন করেছে পুলিশকে এড়াতে। এ ব্যাপারে বায়েজিদ থানার ওসি মোঃ মহসিন জনকণ্ঠকে বলেন, আত্মীয়স্বজনের এ সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শ্বশুর-শাশুড়ি, বেয়াইন ও জামাই মিলে পুলিশের সন্দেহ এড়াতে কৌশল গ্রহণ করেছে। মূলত শ্বশুর শাশুড়ি মিলে টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসে চট্টগ্রামে। এরপর বেয়াইন ও জামাতা মিলে এসব ইয়াবা নগরীর বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রহিমা নামের আরেক নারী ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়। এর আগেও রহিমা পুলিশের হাতে চারবার গ্রেফতার হয়েছে। রহিমাকে ছাড়িয়ে নিতে আদালতে যেমন কৌঁসুলি রয়েছে, তেমনি তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে এ পথে নামিয়ে রোজগারের দুয়ার খুলেছে। ফলে পাঁচবার গ্রেফতার হওয়ার পরও তারমধ্যে কোন ধরনের পরিবর্তন বা ভীতি ছিল না, এমন তথ্য দিয়েছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। রহিমা বেগম বায়েজিদ থানার রউফাবাদ এলাকার স্টারশীপ গলির বাসিন্দা।
×