ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বতন্ত্র আবেগ, বইয়ের পাতায় খুঁজে ফেরা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বতন্ত্র আবেগ, বইয়ের পাতায় খুঁজে ফেরা

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসটির নাম মুক্তিযুদ্ধ। বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় লেখা হয়েছে সামান্যই। তবে আশার কথা যে, এই লেখালেখি অব্যাহত আছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, সম্মুখ সমর, গণহত্যা, বধ্যভূমি, নারী নির্যাতন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, শত্রু মিত্র ইত্যাদি বিষয়ে এখনও প্রকাশিত হচ্ছে প্রামাণ্য গ্রন্থ। স্মৃতিকথা প্রবন্ধ সংকলন আসছে। প্রকাশিত হচ্ছে কম বেশি গবেষণা গ্রন্থ। গল্প কবিতা উপন্যাসের ভাষায় তুলে ধরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে। অমর একুশে গ্রন্থমেলায়ও প্রতি বছর আসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই। এবার সংখ্যায় কেমন? মৌলিক রচনা কতটি আছে? মূল বৈশিষ্ট্যটি কী? এমন বিভিন্ন প্রশ্ন মাথায় নিয়ে রবিবার ঘুরে দেখা হলো মেলার বিভিন্ন স্টল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বতন্ত্র আবেগ। বইয়ের পাতায় খুঁজে ফেরা। দেখে বেশ লেগেছে। ছোট বড় অধিকাংশ স্টলেই খুঁজে পাওয়া যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বই। বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, ১৯তম দিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নতুন বই এসেছে ৬৭টি। বাকি দিনগুলোতে আরও আসবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশনার খোঁজ নিতে প্রথমেই যেতে হয় সাহিত্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও লেখক গবেষক মফিদুল হকের প্রতিষ্ঠান যেহেতু, স্বতন্ত্র একটি উপস্থাপনা নিয়েই মেলায় আছে। বিকেলে সেখানে গিয়ে মন ভাল হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের উপরে কত শত বই। সুন্দর সাজানো। এখানে নতুন পুরনো বিচার করার সুযোগ নেই। প্রায় সব প্রকাশনাই নির্বাচিত। একেবার নতুন এসেছে ‘ইধহমষধফবংয ১৯৭১ উৎবধফভঁষ ঊীঢ়বৎরবহপবং.’ বইতে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত চরম বর্বর ও পাশবিক বিভিন্ন তৎপরতার ভয়ঙ্কর বিবরণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের এই বিবরণ প্রথমে ‘১৯৭১ : ভয়াবহ অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। রশীদ হায়দার সম্পাদিত বইয়ের ইংরোজী সংস্করণ বহির্বিশ্বের কাছে পাকিস্তান বাহিনীর ঘৃণ্য কর্মকা- তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আগে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য ‘মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস।’ প্রচুর বিক্রি হচ্ছে, মাহবুব আলমের ‘গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে।’ একাত্তরের গেরিলার লেখা স্মৃতিকথা আর দশটি স্মৃতিকথার মতো নয়। বরং অবিস্মরণীয় সংযোজন বলা যেতে পারে। ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ‘আমার একাত্তর’ সর্বাধিক বিক্রীত বইগুলোর অন্যতম। স্মৃতির আশ্রয়ে একাত্তরকে বর্ণনা করেছেন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। তাতেই অনেক অজানা সামনে এসেছে। মুফিদুল হক সংকলন সম্পাদনা ও অনুবাদ করেছেন সিডনি শনবার্গের বিখ্যাত রচনা ‘ডেডলাইন বাংলাদেশ : নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান।’ বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক সিডনি শনবার্গের অনেক লেখা ১৯৭১ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়। সেগুলো নিয়েই এ বই। একাধিক বইতে আগে পরের বিভন্ন বিষয়কে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে লেখা হয়েছে। তেমন একটি বই ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নবেম্বর।’ লিখেছেন কর্নেল শাফায়েত জামিল (অব)। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের কথা লিখেছেন তিনি। এসেছে নবেম্বর মাসে সংঘটিত বিপ্লব প্রতি বিপ্লবের অজানা অনেক তথ্য। মোঃ শাহজাহান সম্পাদিত ‘একাত্তরের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগাথা’, জহিরুল ইসলামের ‘মুক্তিযোদ্ধার জীবন’সহ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা অধিকাংশ বইয়ের ব্যাপারে দারুণ আগ্রহ দেখাচ্ছেন পাঠক। তেমনটিই জানালেন স্টলের কর্মীরা। তাম্রলিপি থেকে এবার আসা ৬৪টি জেলার ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস’র কথা অনেকেরই জানা। এবারের মেলার এটি উল্লেখযোগ্য কাজ। প্রতিটি জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিশোরদের উপযোগী করে লেখা হয়েছে সিরিজ গ্রন্থে। প্রকাশনার বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করেছেন উপদেষ্টা ও জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। গ্রন্থমালা সম্পাদনার কাজ করেছেন আমিনুর রহমান সুলতান। সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন আহমদ রফিক, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, অধ্যাপক ড. খোদেজা খাতুন ও অধ্যাপক ড. একেএম জসীম উদ্দীন। মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের খোঁজ করতে অনন্যার প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকটি নতুন প্রকাশনা। জনপ্রিয় ধারার অনেক বই এখানে। এর পরও ভাল বিক্রি হচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের উপরে লেখা বইগুলো। প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবার এসেছে ধীরাজ কুমার নাথের বই ‘শরণার্থী শিবির ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া মানুষের বেদনাবিধুর জীবনের কথা বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে এস এ কালামের ‘মুক্তিযুদ্ধে মুক্ত এলাকা।’ প্রকাশিত হয়েছে ইমদাদুল হক মিলনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘নয়মাস।’ এগুলোর বাইরে ‘মুক্তিযুদ্ধের উত্তর-পূর্ব রণাঙ্গন’ পরিবেশন করছে অনন্যা। বইটি লিখেছেন মেজর (অব) এম এ মোত্তালিব। সময় প্রকাশন থেকে মেলায় এসেছে কর্নেল (অব.) তৌফিকুর রহমানের রচনা ‘গেরিলা ১৯৭১।’ একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে মুনতাসীর মামুনের বই ‘রাজাকারের মন।’ সুবর্ণ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের অজানা ভাষ্য।’ লিখেছেন মামুন সিদ্দিকী। এটি মূলত প্রবন্ধ সংকলন। লেখকের ভাষায় ‘জনইতিহাসের বিনম্র নিবেদন।’ ঐতিহ্য থেকে এসেছে পলাশ দাশের ‘মার্কিন নথিতে উনিশশ’ একাত্তর।’ আহমদ পাবলিশিং হাউস বের করেছে সাযযাদ কাদিরের ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ : উদ্যত সঙ্গিনের নিচে।’ একুশে বাংলা প্রকাশন থেকে এসেছে বিপ্রদাশ বড়ুয়ার ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প।’ অবসর থেকে এসেছে তপন চক্রবর্তীর ‘মুক্তিযুদ্ধের ধূসর স্মৃতি : মিজোরামের শরণার্থী।’ শ্রাবণ প্রকাশনী বের করেছে রাহাত মিনহাজের ‘সায়মন ড্রিং ও অন্যান্যের একাত্তর’, নন্দিতা বের করেছে আবুল কাইয়ুমের স্মৃতিচারণ ‘মুক্তিযুদ্ধের কথা : রণাঙ্গনে নয় মাস।’ কথাপ্রকাশ থেকে জাফরুল আহসানের ‘বাংলাদেশ পেলাম কেমন করে’, দ্য রয়েল পাবলিশার্স থেকে সৈয়দ ইকবালের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম’, কালিকলম প্রকাশনী থেকে অনুপম হায়াতের ‘মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য’ এবং জাগৃতি থেকে এসেছে নাদীম কাদিরের ‘মুক্তিযুদ্ধ : অজানা অধ্যায়।’ মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে কথোপকথন ॥ এদিন মেলায় এসেছিলেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। মুক্তিযুদ্ধের বই বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাহিত্য প্রকাশের সামনে দাঁড়িয়ে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে। সঠিক ইতিহাসের আলোতে আসতে হবে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর বেশি বেশি বই লেখা ও পড়া জরুরী। তবে এবারের মেলায় যেসব বই এসেছে তাতে তিনি খুশি হতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। বললেন, মৌলিক রচনা তেমন চোখে পড়েনি। চর্বিত চর্বনে তো বিশেষ লাভ নেই। মুক্তিযুদ্ধের ওপর আরও গবেষণা আরও মৌলিক রচনা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রকাশকের সঙ্গে কথা ॥ মুক্তিযুদ্ধের বই প্রসঙ্গে কথা হয় তাম্রলিপি প্রকাশনীর কর্ণধার তারিকুল ইসলাম রনির সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মতো বড় বিষয় নিয়ে কাজ করার একটা তৃপ্তি আছে। এ কারণে কিশোরদের উপযোগী করে ৬৪ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থ প্রকাশ করেছি আমরা। এবং প্রথম দিন থেকেই খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গ মাওলা ব্রাদার্স ॥ মেলার অধিকাংশ বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ব্যস্ততা কমে এসেছে প্রকাশকদের। এখন অনেকেই নিজের স্টল বা প্যাভিলিয়নে সময় দিচ্ছেন। রবিবার মাওলা ব্রাদার্সের প্যাভিলিয়নে পাওয়া গেল প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আহমেদ মাহমুদুল হককে। গত কয়েকদিন আগে জনকণ্ঠে অতি পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর আলোচনা করতে গিয়ে মাওলা ব্রাদার্সের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দেয়া সম্ভব হয়নি। কেন দেয়া সম্ভব হয়নি তা বলতে গিয়ে ‘এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি এখন যার হাতে তার সঙ্গে সব মহলই সচেতন দূরত্ব বজায় রাখেন’Ñ এমন একটি পর্যবেক্ষণও যোগ করা হয়েছিল। আলোচনার শুরুতে সেই পর্যবেক্ষণের প্রতিবাদ করেন আহমেদ মাহমুদুল হক। তীব্র প্রতিবাদই বলতে হবে। একইসঙ্গে বেদনাহত হওয়ার কথা জানান। বলেন, যারা মেধাহীন অযোগ্য বা অসৎ অপেশাদার তাদের সঙ্গে দূরত্ব থাকতে পারে। অন্য সবার সঙ্গে আমার বহুদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক। কথা বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে যান তিনি। ফিরে যান পুরনো দিনে। আর তাতেই জানা হয়ে যায় মাওলা ব্রাদার্সের দীর্ঘ পথচলার খুঁটি নাটি। সে মতে, প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে ১৯৫৪ সালে। খানবাহাদুর জিয়াউল হক ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে দায়িত্ব নেন তার সন্তান আহমেদ আতিকুল মাওলা। ১৯৬১ সালে এখান থেকে আবদুশ শাকুরের ‘ক্ষীয়মাণ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘সীমানা পেরিয়ে’ ও গল্পগ্রন্থ ‘অনুপম দিন।’ এভাবে যুক্ত হওয়া সৃজনশীল প্রকাশনার সঙ্গে। তার পর একই পথ ধরে কেবল এগিয়ে চলা। প্যাভিলিয়নের তিন পাশে সাজিয়ে রাখা অসংখ্য বই থেকে কয়েকটি তুলে নিয়ে প্রতিবেদককে দেখান তিনি। বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সকল বরেণ্য লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক গবেষকের নাম রয়েছে মাওলা ব্রাদার্সের লেখকের তালিকায়। বিভিন্ন বিষয়ের প্রধান প্রধান লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এখান থেকে বের হয়েছে। নিজের আত্মনিবেদনের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, মাওলা ব্রাদার্সের ঐতিহ্য ও সুনাম ধরে রাখতে আমি বছরের পর বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। অন্য চাকরি ব্যবসা করতে পারতাম। সুযোগ ছিল। যাইনি ওসবে। সৃজনশীল চিন্তার জগৎ নিয়ে থাকতে চেয়েছি। আর তাই মাওলা ব্রাদার্স এখনও গৌরবের সঙ্গে টিকে আছে। আমরা মানসম্পন্ন বই করার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি। পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বহু প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তা করিনি। আমাদের প্রায় সব বই এখনও পাওয়া যায়। সিরিয়াস বই করি। এবং সারা বছর বিক্রি হয় আমাদের বই। লেখকসহ সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে এটি সম্ভব হতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নিজের যোগাযোগের নানা উদাহরণও দেন। সব দেখে শুনে চমৎকার একটা অনুভূতি হয়। কয়েকদিন আগের পর্যবেক্ষণ থেকে সরে এসে দেখতে ইচ্ছে করে বর্তমান। মাওলা ব্রাদার্সের মতো একটি প্রতিষ্ঠান সবার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। এই চাওয়াটাকে স্বাগত জানিয়েই শেষ হয় এদিনের সংলাপ। নতুন বই ॥ বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, ১৯তম দিনে মেলায় এসেছে ১১৫টি নতুন বই। এগুলোর মধ্যে গল্প ১২, উপন্যাস ১৮, প্রবন্ধ ২, কবিতা ৪৩, গবেষণা ৪, ছড়া ৯, শিশুসাহিত্য ২, জীবনী ৪, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ২, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ২, অনুবাদ ৩ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর আরও ৯টি বই রয়েছে। বিবি ফাউন্ডেশন থেকে এসেছে বাহাদুর বেপারীর ‘জাতির রাজনৈতিক বাস্তবতার শনাক্তকরণ’, সালমা বুক থেকে এসেছে শেখ আবদুল হাকিমের ‘ডিসেপশন পয়েন্ট’, জুলফিকার নিউটনের ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন’, আগামী প্রকাশনী এনেছে ফরিদ কবিরের ‘আমার গল্প’, কথাপ্রকাশ এনেছে রাজীব সরকারের ‘বহুমাত্রিক বুদ্ধদেব বসু’, মুহিত হাসানের ‘বিস্মৃত কথকতা’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে কাউছার মাহমুদের ‘এক পকেট হাসি’, আলী ইমামের ‘এশিয়ার রূপকথা-১’, সেলিনা হোসেনের ‘বটফলের গল্প।’ ক্ষুদে লেখক অলীন বাসারের গল্পের বই ‘ভুতুম’ এসেছে সাঁকোবাড়ি প্রকাশন থেকে। ১৫টি গল্প স্থান পেয়েছে বইতে। মোড়ক উন্মোচন ॥ এদিন ৪৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রফিকুল হক, আলী ইমাম এবং সুজন বড়ুয়া। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। প্রাবন্ধিক বলেন, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের রচনাসহ বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্য কোনোভাবে বিস্মৃত হওয়া ঠিক হবে না। এসব সৃষ্টিকে বলা যায় বাংলাভাষার ধ্রুপদী শিশুসাহিত্য। এর মধ্যে যোগীন্দ্রনাথ সরকার শিশুসাহিত্যে অলঙ্করণ, সজ্জা এবং মুদ্রণে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিলেন। আজ হয়ত মুদ্রণশিল্পে ব্যাপক উন্নতির ফলে আরও সুন্দর পরিপাটি ঝকঝকে বই মিলছে, কিন্তু বইয়ের আধেয়ের দিক থেকে ধ্রুপদী শিশুসাহিত্যের স্থান বরাবর উচ্চতায় থাকবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ ব্যালে ট্রুপ’-এর পরিবেশনা। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী লাকী সরকার, বদিয়ার রহমান, অনিমা মুক্তি গোমেজ, শরণ বড়ুয়া, শাপলা পাল এবং মোঃ মুরাদ হোসেন।
×