ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধরলার ভাঙ্গন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ধরলার ভাঙ্গন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ ধরলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে তিন গ্রামের ১৪ থেকে ১৫শ’ পরিবার একত্রিতভাবে শুরু করেছে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং। এজন্য আশপাশের প্রায় ২৫ গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার বাঁশ। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মানুষ পর্যায়ক্রমে পাইলিংয়ের কাজে সহযোগিতা করছে। আর এজন্য বাড়ি বাড়ি চাল-ডাল সংগ্রহ করে কর্মক্লান্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে গৃহিণীরা। সরকারী উদ্যোগ না থাকায় ভাঙ্গন কবলিত কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নানকার এলাকায় চলছে এই পাইলিংয়ের কাজ। ইতোমধ্যে ৩শ’ মিটার পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে। নানকার গ্রামের ভাঙ্গন কবলিত কৃষক হবিবর রহমান জানান, গত ২/৩ বছরে আমার ৫০ বিঘা ফসলী জমি, পাকাবাড়ি ধরলা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। আমার বাড়িতে ৪টা হাল ছিল। এখন আমি ফুফাতো ভাইয়ের হাত-পা ধরে তার জায়গায় ঠাঁই নিয়েছি। জমা-জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হবিবর রহমান। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেল, এই এলাকায় প্রায় ১২ কিলোমিটার জুড়ে চলছে ভাঙ্গন। এখন ভাঙ্গন না থাকলেও তার চিহ্ন বহন করছে গোটা তীরজুড়ে। শুধু নানকার নয়, এরসঙ্গে সাতভিটা, কাইম বড়াইবাড়ী, নন্দদুলালের ভিটা, জগমোহনের চর, পাঙ্গারচর, সর্দারপাড়াসহ প্রায় ১০ গ্রামজুড়ে ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, আবাদিজমি ও বৃক্ষরাজি। নানকার ও নন্দদুলালের ভিটা এলাকার ছানছার আলী, ফিচারী, লোকমান, আব্দুল হাকিম, মেহেরভান ও ছকিনা জানান, গত ২/৩ বছরে এই এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে একরের পর একর ফসলী জমিন। হুমকির মুখে রয়েছে নন্দদুলারের ভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। মাত্র ২০ ফুট দূরেই প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা নদী। তারা অভিযোগ করেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে রিলিফ আর বাড়ি ভাঙ্গার তালিকা নিয়ে লোকজন চলে যায়, কিন্তু ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। এলাকার মানুষ রিলিফ চান না। তারা ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকারের সহযোগিতা চান। নন্দদুলারের ভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, আড়াই শ’ শিক্ষার্থী নিয়ে এই দ্বিতল বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছর টিকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। অনেক দেনদরবার করেও সরকারীভাবে কোন প্রটেকশনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে আমরা হতাশ। পাইলিং কাজের উদ্যোক্তা মজিবর রহমান (৪৬) জানান, প্রতিবছর ভাঙ্গনের সময় আমরা চেয়ারম্যানসহ সরকারী দলের নেতাকর্মীদের জানাই। কিন্তু তারা কোন উদ্যোগ নেয় না। তারা চাল দেয়, টাকা দেয় কিন্তু ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য আশ্বাস দিলেও কাজ করে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেও কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় আশপাশের লোকজনকে ডেকে পাইলিংয়ের কাজের কথা বলি। এতে সাতভিটা, নানকার ও কাইম বড়াইবাড়ি গ্রামের ১৪/১৫শ’ পরিবার এই কাজের জন্য আগ্রহ দেখায়। তাদের নিয়েই আমরা কাজটা শুরু করেছি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর বাম ও ডানতীরে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার জন্য প্রকল্প তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ভোগডাঙ্গায় যারা ভাঙ্গন প্রতিরোধে অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তাদের কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।
×