ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফসলের জমিতে ইটভাঁটি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ফসলের জমিতে ইটভাঁটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি ॥ সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কেশবপুরে অবাধে নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ ইটভাঁটি। ফসলের মাঠ নষ্ট করে বিত্তবান ও ক্ষমতাশীন লোকেরা অনুমতি ছাড়াই ইটভাঁটি নির্মাণ করে চলেছে। নিচু জমিতে মাছের ঘের আর উঁচু জমিতে ইটভাঁটি দখল হয়ে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণ। কেশবপুরের ৯০ ভাগ কৃষিজীবী মানুষ দিন দিন তাদের ফসলের জমি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। ফসলের মাঠ, জনবসতি এলাকা, শহর-বাজার, স্কুল-কলেজের পাশেসহ যত্রতত্র অবৈধ ইটভাঁটি স্থাপন করায় কেশবপুরের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী পৌরসভা এলাকায়, আবাসিক এলাকায় ও কৃষি জমিতে ইটভাঁটি স্থাপন করা যাবে না। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই শুধু ট্রেড লাইন্সেস এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের অনাপত্তিপত্র নিয়ে কেশবপুরে ফসলি জমিতে নতুন করে তিনটি অবৈধ ইটভাঁটি নির্মাণের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী ইটভাঁটি বন্ধের দাবিতে পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করেছেন। শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কেশবপুর-সাতবাড়িয়া সড়কের পাশে সাতবাড়িয়া বাজারসংলগ্ন বিশাল ফসলের মাঠের মাঝখানে মেসার্স সুপার ব্রিকস নামে একটি ইটভাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফসলে জমির উপর নির্মিত ইটভাঁটির চিমনির কাজ প্রায় শেষ। এর চারপাশে ইরি ধান, মসুরি, সূর্যমুখী, বেগুন ক্ষেত, পানের বরজ, ফলদ গাছে পরিপূর্ণ। এর পশ্চিমে ৩শ’ গজ দূরে সাতবাড়িয়া বালিকা বিদ্যালয়। তিন পাশে জনবসতি। একশ’ গজের মধ্যে বসবাসকারী রেজাউল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, এখানে বসবাস করা যাবে না ধোঁয়া ও ইটের গুড়োর কারণে। বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিতু, পূজা, তাওসিয়াসহ অনেকেই জানায়, ভাঁটির কালো ধোঁয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়াসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। ট্রাক ও ট্রলির শব্দে শব্দ দূষণ হবে। কেশবপুর-চিংড়া সড়কের কাস্তা-বারুইহাটি চৌরাস্তা মোড়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ও ফসলি জমিতে রোমান ব্রিকস নামে আর একটি ইটভাঁটি নির্মাণের কাজ চলছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক চলাচল করে। ইটভাঁটির চারপাশে ফসলি জমি ছাড়াও একটি কওমি মাদ্রাসা, একটি সারদীয় পূজা মন্দির, একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি বাজার ও একটি মসজিদ রয়েছে। সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান, এখানে ইটভাঁটি চালু হলে ফসল আবাদে ব্যাহত হবে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে। এলাকাবাসী ইটভাঁটি বন্ধ করতে প্রায় একশ’ জন স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদফতর, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে। রোমান ব্রিকসের মালিক সাতবাড়িয়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, জেলা প্রশাসকের কাছে এখনও আবেদন করেনি। ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইন্সেস ও উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমতিতে ইটভাঁটি করেছি। এছাড়া কেশবপুর পৌরসভার ভোগতি এলাকায় একই কায়দায় ফসলি জমিতে অপর একটি ইটভাঁটি নির্মাণের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ রায়হান কবির জানান, ইটভাঁটি নির্মাণের ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যানের অথবা উপজেলা পরিষদের অনাপত্তিপত্র দেয়ার কোন নিয়ম নেই। একমাত্র জেলা প্রশাসকের অনুমতির পরই কেবল ইটভাঁটি নির্মাণ করা যাবে।
×