ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতো বিশ্বব্যাংকের সাফাই গাইছে বিএনপি ॥ ড. হাছান

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতো বিশ্বব্যাংকের সাফাই গাইছে বিএনপি ॥ ড. হাছান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ জলবায়ু অভিঘাত হতে দেশের উপকূলকে সুরক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে উপকূলের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্নয় খুবই প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। রবিবার সংসদ ভবনের আইপিডি সম্মেলন কক্ষে ‘জলবায়ু অভিঘাত হতে বাংলাদেশের উপকূলকে সুরক্ষা : বর্ষাকালে সামুদ্রিক জোয়ারের প্লাবন থেকে রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় বিএনপির নেতা রহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির নেতারা বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতো বিশ্বব্যাংকের সাফাই গাইছে। হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশকে যে অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল তার প্রেক্ষিতে বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যৌক্তিক। কিন্তু বিএনপির নেতাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা যেন বিশ্বব্যাংকের বেতনভুক্ত বা তাদের এ সম্পর্কে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছেন। হাছান মাহমুদ বলেন, পদ্মা সেতুতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু নিয়ে ঋণ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু আমরা ঋণ চাই না, চাই অনুদান। এ সময় সভায় সুপারিশগুলো পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। সভায় পানি বিশেষজ্ঞ ড. অধ্যাপক আইনুন নিশাদ বলেন, উপকূলের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই উপকূল ব্যবস্থাপনা করতে পারলেই বাংলাদেশ রক্ষা পাবে। নদী শাষন যুক্ত করতে হবে, সুইজগেটগুলো পরিবর্তন সংস্কার প্রয়োজন, ভেতরের খালগুলো পুনঃখনন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক পরিবর্তনই আসবে তা আমরা জানি এবং এর কি কি সমাধান আছে সেটাও আমাদের জানা। এখন সঠিক ব্যবস্থাপনা যদি করা যায় তাহলেই উপকূলীয় মানুষকে রক্ষা সম্ভব। পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, জলবায়ু সংকটের জন্য ধনী দেশগুলো দায়ী। তাই, আমরা এজন্য ভুক্তভোগী হয়ে সহায়তা নয় ক্ষতিপূরণ চাই। তিনি উপকূলের বেড়িবাঁধগুলোর সংস্কারের দাবি জানান। এর আগে একটি প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়। যেখানে অনেক তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয়, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২৭ সেমি বাড়লে প্রায় তিন কোটি লোক প্লাবিত হবে। ১ মিটার বাড়লে ১৮ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। ২০০৮-১৪ সময়কালে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ লোক। এছাড়াও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে খাদ্য নিরাপত্তার উপরও। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে আলুর উৎপাদন কমে যেতে পারে ৬০ শতাংশ। ২০১০ সালে বন্যায় হাওর এলাকায় প্রায় ১.৫০ লাখ ধান উৎপাদন কম হয়। সিডরের ফলে নষ্ট হয় ১.২৩ মিলিয়ন টন ধান। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০০-২০১০ সালের মধ্যে সুন্দরবন উত্তর দিকে প্রায় ৮.৩ শতাংশ কমে গেছে। ৫৩ শতাংশ এলাকায় লবণাক্তার প্রকোপে আক্তান্ত। প্রেজেন্টেশনে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিও দেখানো হয়। সেখানে আইলার কারণে ৪০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০ জনের প্রাণহানী ও ৫০০০ লোক ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০০০ কিমি সড়ক ও ২০০০ কিমি বেড়িবাঁধ। সিডরে মারা যায় ৩৫০০ লোক আর ৫৫ হাজার লোক আহত হন। এই দুই দুর্যোগের ফলে প্রায় ১০ লাখ লোক গৃহহীন হয়েছে বলেও জানানো হয় উপস্থাপনায়। উপকূল রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু সুপারিশও করা হয়। স্বল্প মেয়াদী সুপারিশের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, আগামী অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য ভেঙ্গে যাওয়া সকল বাঁধ অবশ্যই মেরামত করতে হবে। নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে রোগবালাই কম হয়। উপকূল রক্ষায় দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করা শেল্টার কাম হাউস নির্মাণ, এলজিইডির রাস্তাসমূহকে ভবিষ্যত বন্যা প্রতিরোধক স্তরে উন্নীত করা, নদী-খাল চ্যানেলগুলোকে দখলমুক্ত রাখা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা ও সিস্টেমলস কমানো, চলমান কর্মকা-ের বিষয়ে সকল তথ্য জনসাধারণের কাছে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করা এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনার সুযোগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।
×