ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মডেল ফার্মেসি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মডেল ফার্মেসি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে

নিখিল মানখিন ॥ অবশেষে আধুনিক বিশ্বের আদলে মডেল ফার্মেসি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি মডেল ফার্মেসি স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে গাইডলাইন। বাস্তবায়ন করছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। গত কয়েক মাস ধরে মডেল ফার্মেসি স্থাপনের ঘোষণা এবার বাস্তবের রূপ নিয়েছে। ভেজাল ওষুধ বিক্রি প্রতিরোধ করাই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দোকানগুলোর ঠিকানা, বৈধতা ও অবৈধতা যাচাই করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে ওষুধের দোকান। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চা, পান, বিড়ি, মুদির দোকানেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ। আর ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতাদের অধিকাংশই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা নেই। রাজধানীতেও এ সংখ্যা একেবারে কম নয়। অবৈধ ওষুধের দোকান জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রাজধানীর ধানম-িতে দু’টি এবং গুলশান ও বনানী এলাকায় ৫টি ফার্মেসিকে মডেল হিসেবে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি মডেল ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। সারাদেশে দুই শতাধিক মডেল ফার্মেসি হলেও রাজধানীতেই হবে অর্ধশতাধিক। জানা গেছে, ‘এ’ ও ‘বি’ দুই ক্যাটাগরির মডেল ফার্মেসির লাইসেন্স দেয়া হবে। ‘এ’ ক্যাটারির মডেল ফার্মেসির আয়তন ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির ফার্মেসির আয়তন হবে ১০ ফুট বাই ৯ ফুট। মডেল ফার্মেসিগুলোতে ক্যাটাগরি (এ ও বি) অনুযায়ী ওষুধ রাখার অনুমতি প্রদান করা হবে। কোল্ড চেন অনুসরণ করে ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। সাধ্য মোতাবেক কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুব্যবস্থা করতে পারে। এসব ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বিক্রয়ের পর ওষুধের হিসাব রাখতে হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন জানান, বর্তমানে দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা এক লাখ ২১ হাজার। তবে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি রয়েছে ১৯ হাজার ৮০০। অধিদফতরের কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে ফার্মেসি পরিদর্শন করে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসিগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানায়, বর্তমানে সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট দ্বারা ফার্মেসিগুলো পরিচালিত হচ্ছে। তারা ফার্মেসি কাউন্সিলের অধীনে সপ্তাহে একদিন করে আট সপ্তাহের ক্লাস ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সি ক্যাটাগরির লাইসেন্স পাচ্ছেন। তবে ফার্মেসি কাউন্সিলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ কোর্সের মেয়াদ ছয় মাস করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকারী তালিকাভুক্ত ৯৫ হাজার ফার্মেসির মধ্যে ৬০ হাজারের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান বন্ধে জোরালো অভিযান শুরু হয়েছে। লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ দোকানগুলো সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন অভিযান টিমের সদস্যরা। ওই সব ফার্মেসির মালিকরা গত দু’ থেকে পাঁচ বছর ধরে লাইসেন্স রিনিউ না করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ বর্তমানে দেশে মাত্র ৩৫ হাজার ফার্মেসি বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আর অননুমোদিত ফার্মেসির সংখ্যা সোয়া লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে। লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ দোকানগুলো সামাল দেয়ার পর অননুমোদিত, অবৈধ দোকানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে ওষুধ ও খাবারের নকল বন্ধে বেশ কিছু দিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ভেজাল ওষুধের কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে ওষুধ প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে জেলা পর্যায়ের অফিসকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এমনও দেখা যায় শাস্তি পাওয়ার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারও একই অপরাধ করছে। এতে করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই প্রবণতা বন্ধ করতে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। দেশের বড় বড় হাসপাতাল ও দোকানে যদি ভেজাল ও অননুমোদিত ওষুধ পাওয়া যায় তবে দেশবাসী কোথায় যাবে? দেশবাসীকে বাঁচাতে প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে দোকানে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিক্রি বন্ধে জনমত দৃষ্টি করার ওপরও গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফার্মেসি চালাতে অবশ্যই সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু এসব কোন নিয়মই মানা হচ্ছে না। স্বল্প শিক্ষিতরা লাইসেন্স ও অনুমোদন ছাড়াই ফার্মেসি খুলে দেদারসে ওষুধ বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। ফার্মেসির লাইসেন্স গ্রহণ ও পরিচালনার পূর্বশর্ত হলো-ফার্মেসি পরিচালনার জন্য বাধ্যতামূলক কমপক্ষে ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ফার্মেসিগুলো ন্যূনতম প্রশিক্ষণবিহীন কথিত ফার্মাসিস্টদের দিয়েই চলছে। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রাম-গঞ্জে অবৈধ ফার্মেসির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এসব ফার্মেসিী চালাচ্ছেন স্বল্প শিক্ষিতরা। যাদের অধিকাংশেরই প্রশিক্ষণ এবং ফামের্সির কোন লাইসেন্স নেই।
×