ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিনদেশিদের কন্ঠে ১৫ ভাষায় একুশের গান

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভিনদেশিদের কন্ঠে ১৫ ভাষায় একুশের গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পনেরো দেশের ভাষায় ভিনদেশিরা গাইলেন একুশের গান। তাদের কন্ঠে- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি শুনে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন উপস্থিত সবাই। ভিনদেশিরা খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন। বাংলা ভাষা ছাড়াও ইংরেজি, নরওয়েজিয়ান, ফিনিশ, হিন্দি, ইথিয়োপিয়ান, ডাচ, রুমানিয়ান, মোঘামো, রাশিয়ান, কম্বোডিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান, চাইনিজ, কোরিয়ান ও জাপানিজ ভাষায় বিদেশিরা একুশের গান গেয়ে শুনিয়েছেন। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শনিবার লার্ন বাংলা স্মরণ করল ভাষা শহীদদের। গুলশানের লেকব্রিজ হোটেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। বিদেশিদের বাংলা ভাষা শেখানো, বাংলা সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবহিত করা এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিতেই গড়ে উঠেছে ভাষাকেন্দ্রিক এই প্রতিষ্ঠান। সাংস্কৃতিক আয়োজনে রুমানিয়ার নাগরিক অক্টাভিয়ান রেটেযানের কবিতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তিনি আবৃত্তি করেছেন কবি সুফিয়া কামালের ‘জন্মেছি এই দেশে’। এছাড়া ভারতের নাগরিক মনোজ ভর্মণ আবৃত্তি করেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’। যুক্তরাজ্যের নাগরিক এলিজাবেথ সিম্পসন ও অস্ট্রীয় নাগরিক লীডিয়া স্ট্রেলীয়ান ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানের সঙ্গে পরিবেশন করেন অসাধারণ নৃত্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অনুষদের শিক্ষক বিশ্বজিৎ গোস্বামী, লার্ন বাংলা’র চেয়ারম্যান লেনিন পিনারু, লার্ন বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেরি জুলিয়েট পিনারু, বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস ম্যাপেল লিফ হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, সাংবাদিক মাহফুজ মিশু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে শিক্ষানীতির পাশাপাশি একটি সুনির্দিষ্ট ভাষানীতি করার দাবি তোলা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক হোসেন বলেন, বাংলা ভাষাকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করছে লার্ন বাংলা। এজন্য লার্ন বাংলা’কে ধন্যবাদ জানাই। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই ভাষার জন্য প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এটি খুবই ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। লার্ন বাংলা’র চেয়ারম্যান লেনিন পিনারু বলেন,আসলে ভাষা সৈনিক বলতে আমরা সহজে যা বুঝি তা হলো এদেশের রাষ্ট্রভাষার বাংলা’র দাবিতে যাঁরা তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। এক কথায় ভাষা শহীদ। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও যে শত শত ভাষা সৈনিক এ ভাষার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তা হয়তো আমরা জানিও না। অনেকেই এই বাংলা ভাষাকে, এই দেশের সংস্কৃতিকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। লার্ন বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেরি জুলিয়েট পিনারু বলেন, বিদেশিদের বাংলা ভাষা শেখানো কাজটি করে যাচ্ছি প্রায় ১৭ বছর ধরে। লার্ন বাংলা প্রতিষ্ঠানটি করেছি তাও প্রায় সাত বছর। হাজার হাজার বিদেশি নাগরিকদের শিখিয়েছি বাংলায় কথা বলা, পরিচিত করে তুলেছি দেশের সঙ্গে, আমার দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে, এদেশের আপামর জনগণের সঙ্গে। কিন্তু আমার এই মহৎ কাজটি পরিচালনা করতে গিয়ে হাজারো বাধার সম্মুখীন হয়েছি। কেবল দেশে একটি সুনির্দিষ্ট ভাষানীতি নেই বলে। তিনি বলেন, এবারের এই মহান একুশের মাসে আমার দেশের যাঁরা নীতি নির্ধারক, যারা আমার দেশের ভাষা নিয়ে কাজ করছেন, এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার বিশেষ চাওয়া, আমাদের দেশে শিক্ষানীতির পাশাপাশি যেন সুনির্দিষ্ট একটি ভাষানীতিও প্রণয়ন করা হয়। আমরা যেন এদেশের ভাষা নিয়ে কাজ করতে পারে। আমরা যেন আমাদের ভাষা আর সংস্কৃতিকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারে।
×