ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পিৎজা না পেয়ে জেদি কিশোর নীচে লাফ দিতে উঠল পাঁচ তলার কার্নিসে

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পিৎজা না পেয়ে জেদি কিশোর নীচে লাফ দিতে উঠল পাঁচ তলার কার্নিসে

অনলাইন ডেস্ক ॥ নীচে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে আবেদন-নিবেদন করছেন, স্তোক দিচ্ছেন, ‘নড়িস না বাবা’, ‘লাফাস না বাবা’, ‘অনেক পিৎজা দেব’। পুলিশ-দমকল বাহিনী কোনও সময় ছাদ থেকে, কোনও সময় দেওয়াল বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আর ওর মধ্যেই পিৎজার শোকে পাঁচ তলার কার্নিসে দাঁড়িয়ে নীচে লাফ দেওয়ার হুমকি দিয়ে সবাইকে তটস্থ করে রেখেছে ১৩ বছরের কিশোর। শেষ পর্যন্ত এক যুবকের তৎপরতায় ও পুলিশ-দমকলের সাহায্যে উদ্ধার করা হল ওই কিশোরকে। ঘটনার শুরু গত কাল রাতে। পিসির বাড়িতে এসেছিল সে। রাতে হঠাৎ পিৎজা খাওয়ার বায়না ধরে অঙ্কিত। তা না পেয়ে সারা রাত ধরে গুমরে থেকে শেষে সবাইকে তটস্থ করে তুলল। শিলচর শহর এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি। গত কাল হাইলাকান্দিতে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরী ভয়ে ঠিক পরীক্ষার আগে বটগাছে চড়ে বসেছিল। তাকে নামিয়ে আনতে তত বেগ পেতে হয়নি। তার কাকা গাছে উঠে পড়েছিলেন। আজ পাঁচতলা আবাসনের জানালার কার্নিসে পৌঁছনও যে সম্ভব হচ্ছিল না। ঘণ্টা দুয়েক তার পিছনে পড়ে থেকে মান্না বড়ভুইয়া নামে এক যুবক দালান বেয়ে আচমকা তার পা ধরে ফেলে। মান্নার পিছনে পিছনে এগিয়ে যায় জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর এক জওয়ান। তখন ছাদ থেকে রশি ফেলা হলে দুইজনে মিলে তাঁর কোমর বেঁধে দেন। অন্যরা তাকে টেনে ছাদে নিয়ে যায়। যাকে নিয়ে শনিবার দুপুরে এত হইচই, সেই অঙ্কিত পাল আসলে শিলচরের ছেলে নয়। তার বাড়ি অসমেরই নগাঁও জেলার যমুনামুখে। পড়ত সেখানকারই সেন্ট্রাল স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর আর স্কুলে পাঠানো যাচ্ছিল না তাকে। বাবা নির্মল পাল ও মা তপতী পাল অতিষ্ঠ হয়ে যান। শেষে পিসি জলি পাল তাকে শিলচরে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, শিলচরে থেকেই অঙ্কিত পড়াশোনা করবে। বৃহস্পতিবারই তাকে শিলচরে নিয়ে আসা হয়। লিঙ্ক রোডে পিসির বাড়ি। কাল রাতে হঠাৎ পিৎজা খাওয়ার বায়না ধরে। পিসি বা পিসেমশায় তাতে একদমই গুরুত্ব দেননি। আজ সকালে মায়ের সঙ্গে পিসির বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় ফোনে। পিৎজা প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। সেই সময় অঙ্কিত ফোন টেনে কী একটা বলতে চেয়েছিল মাকে। জলিদেবী সে সুযোগ দেননি। এর পরই ছাদে উঠে পাইপ বেয়ে জানালার কার্নিশে নেমে গিয়ে দাঁড়ায় অঙ্কিত। প্রথমে বিষয়টি পথচারীদের দু’-একজনের নজরে পড়ে। দেখতে দেখতে নীচে ভিড় জমে যায়। এরই রেশে শহর জুড়ে যানজট মাত্রা ছাড়ায়। ছুটে যায় পুলিশ, দমকল, এসডিআরএফ। কান্নায় ভেঙে পড়েন পিসি। কার্নিসে দাঁড়িয়েই শত-শত পিৎজার ‘অফার’ পাচ্ছিল অঙ্কিত। দু’-একজন গিয়ে দোকান থেকে পিৎজা কিনেও নিয়ে আসে। তবু নামতে রাজি হয়নি। তার একটাই বক্তব্য, এই জীবন রেখে লাভ নেই। তাই সে মরতে চায়। তবে নীচে নামানোর পরেও অভিমান কমেনি তার। পিসিকেই নানা ভাবে দোষারোপ করছিল। পুলিশ তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। তবে শরীরের কোথাও কোনও চোট লাগেনি। ছিল না কোনও অস্বাভাবিকতাও। পুলিশ জলিদেবীর হাতেই তাকে তুলে দেয়। এলাকার পুরসদস্য অসিত সরকার জানিয়েছেন, এরপরই তার বাবাকে ফোন করা হয়েছে। তিনি কালই এসে ঘরের ছেলেকে ঘরে নিয়ে যাবেন। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×