ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুল্ক বিধি ভঙ্গ ॥ কাঠগড়ায় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শুল্ক বিধি ভঙ্গ ॥ কাঠগড়ায় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসা গাড়ি বিধি ভঙ্গ করে ব্যবহার করা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর থেকে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে নোটিসও পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট এ সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে আলোচনার জন্য যাচ্ছেন বলে বিশ্বব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ১৬টি গাড়ি ও কাগজপত্র চেয়ে নোটিস দেয়ার বিষয়টি পদ্মা সেতু নিয়ে সৃষ্ট মতবিরোধের কারণে হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান একটি অনলাইনকে বলেছেন, রুটিন কাজের অংশ হিসেবেই বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধানের কাছে এই নোটিস পাঠানো হয়েছে। এর আগেও একই অভিযোগে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও বিদেশী কূটনীতিকের গাড়ি জব্দ করেছেন তারা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে ছয় মাসের সময় চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় চাওয়ার বিষয়ে তারা এখনও কিছু জানেন না। কোন চিঠিও তারা পাননি। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসা গাড়ি ব্যবহারে বাংলাদেশের আইন অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের মেনে চলতে হবে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসা গাড়ি শর্ত ভঙ্গ করে বিক্রি কিংবা হস্তান্তরের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৪৫টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার গাড়িও রয়েছে। সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের ১৬ কর্মকর্তার গাড়ি ও সেগুলোর পাস বই চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে। বিধি ভঙ্গ করে বিলাসবহুল এসব গাড়ি বিক্রি করার অভিযোগে এর আগে জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউএনডিপির উর্ধতন কর্মকর্তাদেরও তলব করা হয়েছিল। আইএলও কর্মকর্তা জুনিয়র প্রফেশনাল মিজ নিসকে জ্যানসেন ২০১৪ সালে তার পাজেরো জিপটি আনেন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার আগে তিনি গাড়ি এবং পাস বই কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করেননি এবং শুল্ক আইন ভঙ্গ করে গাড়িটি রাজধানীর গুলশানের ইংলিশ ইন এ্যাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে যান। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর জব্দ করা হয় ইউএনডিপির সাবেক কর্মকর্তা কিশোর কুমার সিংয়ের ব্যবহৃত গাড়িটি। ১০ অক্টোবর ২০১১ সাল থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত তিনি ইউএনডিপিতে কর্মরত ছিলেন। ইউএনডিপিতে থাকা অবস্থায় তিনি গাড়িটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় গ্রহণ করে পাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় গাড়ি ও পাস বই কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করেননি। শুল্ক আইন অমান্য করায় ১৫ জানুয়ারি জব্দ করা হয় মিসরের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জতের গাড়ি। বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি বিধি ভঙ্গ করে গাড়িটি বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীর কাছে হস্তান্তর করে চলে যান। পরে তিনি মিসর থেকে ঢাকায় এসে এ বিষয়ে কৈফিয়ত দিয়ে যান। বিদেশী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর গাড়ি কেলেঙ্কারির বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ওই অনলাইনকে আরও বলেন, আইন মেনেই সবাইকে চলতে হবে। বাংলাদেশী হোন আর বিদেশী হোন। যারাই আইন ভঙ্গ করবেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক ছাড়াও আরও কিছু বিদেশী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা রয়েছে, যাদের কর্মকর্তারা শুল্ক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি হস্তান্তর কিংবা বিক্রি করেছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি তালিকাও করা হয়েছে। সেসব সংস্থাকেও নোটিস পাঠানো হবে। ড. মইনুল খান বলেন, যিনি শুল্ক আইনসহ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করছেন তিনি চলে গেলেও তার প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান আছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সনদের ভিত্তিতেই তাকে কাস্টমস থেকে পাস বই দেয়া হয়েছে। সেজন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরও এখানে দায় রয়েছে। যদি কোন কারণে কোথাও কোন গরমিল হয়, শুল্ক ফাঁকি হয়, মিশন প্রধান নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেটা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন সেটাই নিয়ম। তাই আমরা শুধু ব্যবহারকারীকে নয়, মিশনের প্রধানকেও তলব করছি। বক্তব্য নিচ্ছি। তারা কী দায়িত্ব পালন করছেন সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, গাড়ি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাসবুকের বাইরে বাড়তি কোন সুবিধা নিয়েছেন কিনা সেটাও তদন্ত করা হচ্ছে। শুল্ক আইন ভঙ্গের সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিও সামনে চলে আসছে।
×