ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে না যাওয়ার উস্কানি দিচ্ছে আরএসও ক্যাডাররা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে না যাওয়ার উস্কানি দিচ্ছে আরএসও ক্যাডাররা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকার হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে তাদের পুনর্বাসনের যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছে, সেজন্য অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তকে যুগোপযোগী বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে কক্সবাজার সোসাইটি। ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হলে হাতিয়ার বিভিন্ন উন্নয়ন সাধিত হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি হচ্ছে, তাও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে উখিয়া-টেকনাফ এলাকা থেকে ঠেঙ্গারচরে না যেতে রোহিঙ্গাদের ইন্ধন দেয়া শুরু করেছে একাধিক আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ। সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ তৈরির কথা জানিয়েছে। সমাজে মিশে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ডাটাবেজের কাজ চলবে বলে জানা গেছে। ডাটাবেজ হলে মিয়ানমার সরকার অথবা বিদেশী রাষ্ট্র বা সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে ও কথা বলতে অনেক সুবিধা হবে। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার স্থানীয় জনগণ। কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপড়া ক্যাম্পে আশ্রিত নিবন্ধিত ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়াও পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছে। এরপর ২০১৬ সালের নবেম্বর-ডিসেম্বরে মিয়ানমার থেকে নতুন করে পালিয়ে আসে আরও প্রায় ৭০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা মাদক, ইয়াবা, চুরি-ছিনতাই ও খুনসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকার রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্থানীয় জনগণ সেটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে সরকারের এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে ঠেঙ্গারচরে যেতে রাজি না হওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের উস্কে দিচ্ছে বিদ্রোহী নেতারা। রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরএসও, আরআইএফ, আল এ্যাকিন, আল মুন্দাতা, মুজাহিদ ফাউন্ডেশন ও আল সাবাবুল আরাকানি ইত্যাদি বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে না যেতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নানা রকমের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের সহযোগিতা দিয়ে চলছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ব্যবসা পরিচালনাকারী কতিপয় জনপ্রতিনিধি। স্থানীয়রা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রিত ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া না থাকা এবং অবাধ যাওয়া-আসার সুযোগ রয়েছে। ফলে এসব রোহিঙ্গা মাদক, অস্ত্র, চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিভিন্ন সংগঠনে। রোহিঙ্গাদের নামে বিদেশ থেকে অঢেল টাকা এনে সিংহভাগ আত্মসাত করছে বিদ্রোহী ক্যাডাররা। রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে নিয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে আরএসও ক্যাডারদের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থার অনুদান। রোহিঙ্গাদের এখান থেকে সরিয়ে নিলে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ক্যাম্প-বস্তির নামে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা বনবিভাগের শত শত একর বনভূমি। এসব বিবেচনায় আরএসও ক্যাডারদের সঙ্গে ওই ধান্ধাবাজরা রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে নিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে জানা গেছে। আরএসও জঙ্গীরা রোহিঙ্গাদের জানিয়ে দিয়েছে, তারা উখিয়া-টেকনাফে অবস্থান করলে তারা মাঝেমধ্যে মিয়ানমারে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতসহ খোঁজখবর নেয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু ঠেঙ্গারচরে নিয়ে গেলে সে সুযোগ থাকবে না। রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে নেয়ার পরিকল্পনার বিরোধিতাকারী কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গীরা গোপনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে সূত্রে জানা গেছে। টেকনাফের নয়াপাড়া মুচনি ক্যাম্পের রোহিঙ্গা (মুজাহিদ ক্যাডার) মৌলবি আমান উল্লাহ, তার সহোদর হাফেজ শফি উল্লাহ, একই ক্যাম্পের মৌলবি ইয়াছিন, নুরুল হক, মাস্টার রশিদ উল্লাহ, মাস্টার সুলতান আহমদ, শহরের পাহাড়তলীর আল এ্যাকিন সদস্য মৌলবি নুরুল হোসাইন, মৌলবি সিদ্দিক, চট্টগ্রামে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা ডাঃ নজির, মৌলবি বেলাল, মৌলবি ইলিয়াছ ও মৌলবি আবদুর রহমানসহ বহু আরাকান বিদ্রোহী নেতা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বস্তিতে দফায় দফায় বৈঠক করে চলছে বলে সূত্র আভাস দিয়েছে। ওই উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, রোহিঙ্গারা এ অঞ্চলের জন্য বিষফোঁড়া। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না গেলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের স্থানীয় অধিবাসীদের নাগরিক সুবিধা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধন্যবাদ প্রস্তাব ॥ শনিবার বিকেলে কক্সবাজার সোসাইটির কার্যালয়ে এক সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নিয়ে ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন আমরাও চাই, কিন্তু তা হতে হবে আমাদের স্বাদ আর সাধ্যের সীমা রক্ষা করেই। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের অতিরিক্ত চাপে জেলার সামগ্রিক পরিবেশ-প্রতিবেশ সঙ্কটে রয়েছে। তাই ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন এখন সময়ের দাবি। আর প্রধানমন্ত্রী সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।
×