ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বছরের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন, জোর প্রস্তুতি নিন ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আগামী বছরের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন, জোর প্রস্তুতি নিন ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ নেতাকর্মীদের সকল ভেদাভেদ ভুলে আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই জোরালো প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আগামী বছরের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, সরকারের উন্নয়নে ঘাটতি নেই, ঘাটতি আছে নেতাদের আচরণে। আচরণটা শুদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনের দেরি নেই। মানুষের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। এখন ক্ষমতায় আছেন, কেউ কিছু বলছে না। আচরণ খারাপ হলে মানুষ ব্যালটে শাস্তি দিয়ে দেবে। শনিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের বিশাল বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে বিভাগের আট জেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দেন। নেতাদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কে কী করেন, তা সব জানি। আমার নেত্রীও জানেন। দলে গণবিরোধী গডফাদার চাই না। জনপ্রিয় লিডার চাই। কর্মীবান্ধব নেতা হন। কর্মীদের মূল্যায়ন করুন। অনুপ্রবেশকারী বসন্তের কোকিলদের দলে ঠাঁই দেবেন না। ত্যাগী কর্মীদের নিয়ে কমিটি করবেন। কর্মীদের ত্যাগেই এই আওয়ামী লীগ। পরগাছাদের নিয়ে কেউ দল ভারি করার চেষ্টা করবেন না। তিনি বলেন, মঞ্চের সামনে বসে থাকা সাধারণ কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা মঞ্চে বসে থাকা নেতাদের নিয়ে। আমরা কর্মীদের নিজেদের স্বার্থরক্ষার পাহারাদার বানাই। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সভাপতিত্বে সমাবেশে ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাদের লক্ষ্য করে বলেন, আপনারা কেউ পকেট কমিটি করবেন না। কর্মীদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝতে হবে। যদি না বোঝেন, তাহলে রাজনীতি করার দরকার নেই। দলীয় এমপিদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে কর্মীদের বাঁচাতে হবে। কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি এখন নালিশবাদী দল। প্রত্যেক দিন শুধু নালিশ আর নালিশ। অর্জন নেই, ইতিহাস নেই, আন্দোলন নেই; কিচ্ছু নেই। তবে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপিকে ছোট করে দেখা যাবে না। কারণ, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিই হবে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবলে চলবে না। তা ভাবতে গেলে পরিস্থিতি ’৯১-এর নির্বাচনের মতো হবে। তিনি বলেন, বিএনপি যত এলোমেলো, যত দুর্বলই হোক না কেন, তাদের সমর্থন দুর্বল নয়। ভোটের রাজনীতিতে বিএনপিকে তুচ্ছ করে দেখারও কোন উপায় নেই। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মী সমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সমাবেশে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার প্রায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। সকাল থেকে নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। বেলা দশটার মধ্যে বিশাল মাদ্রাসা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশ শুরুর পর থেকে জেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। তারা নিজেদের এলাকার সাংগঠনিক কার্যক্রম তুলে ধরেন। অনেকে দলে বিভক্তির কথাও উল্লেখ করেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. আবদুল খালেক, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নূরুল ইসলাম ঠা-ু ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। এছাড়াও রাজশাহী জেলা সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, আয়েন উদ্দিন এমপি, আবদুল ওয়াদুদ দারা এমপি, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি, শহিদুজ্জামান শহিদ এমপি, আবদুল মান্নান এমপি, ইসরাফিল আলম এমপি, হাবিবুর রহমান এমপি, গোলাম মোস্তফা এমপি, গোলাম রাব্বানী এমপি, মকবুল হোসেন এমপি, আবদুল ওদুদ এমপি, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স এমপি এবং রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন আসনের এমপি, বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার উপস্থিত ছিলেন। ফুটপাথে কালাই রুটি খেলেন ওবায়দুল কাদের ॥ প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে ফুটপাথে তৈরি কালাই রুটি খেলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অতি সাধারণবেশে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গল্পও করেছেন তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রসংশায় ভাসছেন তিনি। রাজশাহীতে দুইদিনের সফরে এসে তিনি সার্কিট হাউসে রাত যাপন করেন। শনিবার ভোর সোয়া ৬টায় হালকা বাদামি ফুলহাতা গেঞ্জি আর নীল রঙের প্যান্ট পরে অতি সাধারণবেশে তিনি বের হন প্রাতঃভ্রমণে। প্রথমে নগরীর সিএ্যান্ডবি মোড়ে এসে সাধারণ একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কলা কিনে খান। এরপর হেঁটে হেঁটে পদ্মানদীর তীরে পৌঁছান। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে এসে বসেন পদ্মা পাড়ের মিনার (৫০) কালাই রুটির দোকানের সামনের একটি আধাভাঙ্গা প্লাস্টিকের চেয়ারে। মিনা তখনও রুটি তৈরির কাজ শুরু করেননি। ওবায়দুল কাদের তার সঙ্গে গল্প শুরু করেন। তখনও মিনা জানতেন না তার দোকানের ক্রেতা আর কেউ নাÑ তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একে একে সাধারণ মানুষ আসতে থাকেন। সবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। অনেকে এরই ফাঁকে ছবি তোলা শুরু করেন। অনেকে অবাক বনে যান নেতাকে সামনে পেয়ে। ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন বড় নেতাকে কাছে পেয়ে অবাক হয়ে যান অনেকে। সকালে ওই সময় কালাই রুটির দোকানে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা সাঈদ আলী রেজা জানান, এটি বিরল ঘটনা। ওবায়দুল কাদেরের কথা অনেক শুনেছেন। তবে এভাবে সাধারণবেশে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে মরিচবাটা ঝাল দিয়ে কালাই রুটি খাবেন এটি যেন তার দেখা বিরল একটি ঘটনা। স্থানীয়রা জানান, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সহকারী ও পুলিশের কয়েকজন সদস্য থাকলেও তিনি একা একা হেঁটে হেঁটে নগরীর পদ্মা নদী পর্যবেক্ষণ করেন। এদিকে তার কালাই রুটি খাওয়ার ছবি আর কথা নিয়ে প্রশংসা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ভাষণে নয়, কাজে জনগণকে খুশি করতে হবে ॥ নাটোর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দলীয় নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভাষণ দিয়ে নেতাদের মন খুশি করে লাভ নেই, কাজ দিয়ে জনগণকে খুশি করতে হবে। বক্তৃতা করে নেতাদের মন খুশি করে আপনাদের লাভ হবে না, লাভ হবে উন্নয়ন করে, ভাল আচরণ করে জনগণকে খুশি করলে। শনিবার বিকেলে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, একজন রাজনীতিকের কাছে জনগণের ভালবাসার চাইতে অন্য কিছু বড় হতে পারে না। সাধারণ জনগণের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে। যদি আমরা জনগণের সাথে ভাল ব্যবহার না করি তবে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে আমাদের শাস্তি দেবে। তিনি বলেন, আমি একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত ও আমার রাজনৈতিক শিক্ষক, অভিভাবক শেখ হাসিনার হাতে গড়া দেশের কর্মী, দলের কর্মী। আমরা নেতা না হয়ে যদি সবাই কর্মী হতাম তাহলে শেখ হাসিনার এজেন্ডা আরও অনেক এগিয়ে যেত। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চাইতেও বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনার মতো জনপ্রিয় করার জন্য আমি নাটোরে এসেছি। তবে পথরোধ করে পথসভার আয়োজন করায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, পথ বন্ধ করে পথসভা করবেন না। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। মানুষ যদি রাস্তায় কষ্ট পায়, দুর্ভোগে পড়ে, অবুঝ শিশু, অবলা নারী, বয়স্ক মানুষ, মুমূর্ষু রোগী যদি রাস্তায় দুর্ভোগে পড়ে তার দায় কি আমরা এড়াতে পারব? পারব না। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল-মাহ্মুদ স্বপন, নওগাঁ-রানীনগর আসনের এমপি ইস্র্রাফিল আলম।
×