ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। তিনি ২০-২৩ ফেব্রুয়ারি চারদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পাশাপাশি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি গত ১০-২১ জানুয়ারি মিয়ানমারে ১২ দিন সফর করেছেন। তিনি সফর শেষে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন। এবার সীমান্তের এপারে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে চায় জাতিসংঘ। এখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে সমস্যা সমাধানে সুপারিশও করবে সংস্থাটি। সে লক্ষ্যেই ইয়াংহি লি ঢাকায় আসছেন। সূত্র জানায়, ঢাকায় আসার পরে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন ইয়াংহি। তিনি কক্সবাজার এলাকায়ও যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে তার। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেয়া হবে। এ বিষয়ে ঢাকার কূটনীতিকদেরও অবহিত করেছে সরকার। সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, আশ্রয় কেন্দ্র, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মসজিদ, রাস্তা ইত্যাদি নির্মাণ করতে চায় সরকার। এসব কার্যক্রম শেষ হলেই রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ঠেঙ্গারচরে নিয়ে আসা হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার বিষয়েও বিস্তারিত জানবেন ইয়াংহি লি। তিনি ঠেঙ্গারচর এলাকা পরিদর্শন করতে পারেন বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লির মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদনে দেশটির নির্বাচিত নতুন সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের তীব্র সমালোচনা করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সেদেশের আইন মেনে এবং মানবাধিকার রক্ষা করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কোনভাবেই যেন রোহিঙ্গাদের ওপর আইনবহির্ভূত হত্যাকা- না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য বলা হয়। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসেন কফি আনান কমিশনের তিন সদস্য। এরপর গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তারা কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন। ওই সময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও), জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (ইউএনএইচসিআর) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আনার কমিশনের প্রতিনিধিরা অভিমত প্রকাশ করেন, মিয়ানমার সরকার থেকে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হলে রোহিঙ্গা সঙ্কট অনেকটাই সমাধান হবে। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় সেদেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর আশপাশের এলাকাগুলোয় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ওই সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেও নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দাবি করে তারা। দমন অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ প্রেক্ষাপটে সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তবে অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। এ প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ বিশেষ দূত পাঠায় মিয়ানমারে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি ১২ দিন মিয়ানমারে অবস্থান করেন। তিনি রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এছাড়া মিয়ানমারের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাত করেন। তারই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জানতে বাংলাদেশে আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত।
×