ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১২৩ গুণ বেতন বাড়ানো হয়েছে, এরপরও শিক্ষকরা হৈচৈ করেন

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

১২৩ গুণ বেতন বাড়ানো হয়েছে, এরপরও শিক্ষকরা হৈচৈ করেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) এক অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের এক হাত নিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষকরা সরকারের উন্নয়নের গল্প শুনতে চান না এমন অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষকবান্ধব। সরকার শিক্ষকদের জন্যে কি-না করেছে। শিক্ষকদের বেতনভাতা ১২৩ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সরকারের উন্নয়নের গল্প বললে শিক্ষকরা চেঁচামেচি শুরু করেন, হৈ- হুল্লোড় করেন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তেন বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) জাতীয় সম্মেলন-২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এই অভিযোগ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংগঠনের নেতারা বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সভাপতি করে পরিচালনা কমিটি গঠন, পুরো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে বেসকারী কলেজ সরকারীকরণ। শিক্ষক নেতাদের দাবির জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সম্মেলনে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে যেসব দাবি আসবেÑ তা আমার কাছে জমা দেয়ার পর তা নিয়ে আলোচনায় বসব। সিদ্ধান্ত নেব। শিক্ষকদের জন্য লড়াই করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ইচ্ছে করলেই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে আপনাদের দাবির ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব। তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষার গুণগত মান অর্জন করা। আর এটা নিশ্চিত করতে পারেন গুণগত শিক্ষকরা। শিক্ষকদের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্য শুরুর এক পর্যায়ে শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ে নানা ধরনের সেøাগান দিতে থাকেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষকবান্ধব। সরকার শিক্ষকদের জন্যে কি-না করেছে। শিক্ষকদের বেতনভাতা ১২৩ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সরকারের উন্নয়নের গল্প বললে শিক্ষকরা চেঁচামেচি শুরু করেন, হৈ- হুল্লোড় করেন। আজ অনেক কষ্ট পেলাম এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংসদে যখন শিক্ষকদের কোন বিল পাস হয়, তখন আমি সেটা পাসের যৌক্তিকতা আছে কিনা উপস্থাপন করি। কেননা আমার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষকদের সমস্যা রয়েছে। তাই কোন কিছু পাস করার আগে আমাকে যৌক্তিকতা খুঁজতে হয়। তখন সংসদে আমার বিভিন্ন সহকর্মী মন্ত্রীরা বলেন, আমি (শিক্ষামন্ত্রী) নাকি সংসদের বিরোধী দল। যাদের জন্য এত কষ্ট করি আর তারাই সরকারের উন্নয়নের গল্প শুনতে চান না। কেননা আপনাদের যদি না বলি তাহলে শিক্ষার্থীদের আপনারা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কি গল্প শোনাবেন? তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষকবান্ধব সরকার এবং আমি মন্ত্রী আপনাদের শিক্ষকদের কর্মী। এরপরও আপনাদের সামনে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরলে আপনারা হৈ-হুল্লোড় শুরু করেন। যা আমায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিক্ষা দেয়। আপনাদের দাবি থাকবে সেটা নেতাদের মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন। কিন্তু হৈ-হুল্লোড় করে কখনও দাবি বাস্তবায়ন করা যায় না। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষ সকলের মতামত প্রয়োজন। নতুবা কারও পক্ষেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কেন না আমরা একক সিদ্ধান্তে কোন কিছুই করতে চাই না। অন্যদিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, শিক্ষকদের জ্ঞান দেয়ার মান বাড়াতে হবে। শুধু দাবি দাওয়া উপস্থাপন করবেন আর বেতন নিবেন সেটা হবে না। কেননা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পড়ালেখার মানে সার্টিফিকেট অর্জন নয়, প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সেটা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে বেসরকারী কলেজ জাতীয়করণের দাবি জানান সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা প্রবীণ শিক্ষকনেতা কাজী ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষকদের কাজ করতে হবে। অন্যদিকে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক নীতিমালা শিক্ষকরা চান না। কেননা শিক্ষকরা কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে ব্যবহৃত হবেন না। শিক্ষকরা শুধুমাত্র তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে যাবেন। তাই শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে নীতির প্রশ্নে কোন আপোস নয়, মর্যাদার প্রশ্নে কোন আপোস নয়। ফলে শিক্ষকদের দাবি দাওয়া সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় যদি নীতিমালা করেও থাকে, সেটাও শিক্ষকদের জানার অধিকার আছে। একই সঙ্গে বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের জন্য অধ্যাপক পদ সৃষ্টির দাবিও জানান তিনি। সমিতির সভাপতি আসাদুল হক বলেন, যে বৈষম্যের জন্য শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন, এখনও তা দূর হয়নি। এই বৈষম্য দূর করতে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। জাতীয়করণ করা বেসরকারী কলেজশিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তির বিষয়ে সরকারী কলেজশিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বিরোধিতার সমালোচনা করেন আসাদুল হক। তিনি ওই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, সংযত হয়ে কথা বলবেন, না হয় আপনাদের বিরুদ্ধেও কথা বলা শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুন নবী সিদ্দিকী, শিক্ষকনেতা আজিজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী প্রমুখ। সারাদেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত কয়েক হাজার শিক্ষক প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, আমরা নানামুখী প্রত্যাশা নিয়ে এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছি। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হবো। রাজপথে সক্রিয় হবো। তবে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের এভাবে হতাশ না করলেও পারতেন।
×