ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী পুনর্বাসনে সহায়তা দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী পুনর্বাসনে সহায়তা দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অস্থায়ী পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার বায়েরিশার হফ হোটেলে ৫৩তম নিরাপত্তা সম্মেলনের সাইড লাইনে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজ সভায় এই আহ্বান জানান। খবর বাসসর। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখছে। কিন্তু পর্যটন শহর কক্সবাজারে তাদের অবস্থান ও কর্মকা-ের কারণে সেখানকার পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটছে, যা তাদেরও অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, কাজেই বাংলাদেশ সরকার তাদের একটি উন্মুক্ত, স্বাস্থ্যকর এবং নাগরিক সুবিধা সংবলিত স্থানে সরিয়ে নিতে চায়। এ জন্য জার্মানি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নেতৃবৃন্দ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার, উন্নয়ন, শরণার্থী সমস্যাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে লিঙ্গ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে অবহিত করেন। বৈঠকের পর দেশে বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সিস্টেমের আরও আধুনিকায়ন, দু’দেশের মধ্যে একটি সমাঝোতা স্মারক এবং দু’দেশের মধ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জার্মান সরকার ও জনগণের সমর্থনের কথা স্মরণ করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলকে দুঃসময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান। স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, স্বাস্থ্যসেবা ও স্যানিটেশন, লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাম্প্রতিক সাফল্যসমূহ জার্মান চ্যান্সেলরকে অবহিত করেন। শেখ হাসিনা মেরকেলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসার আগ্রহও প্রকাশ করেন, জানান প্রেস সচিব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন এবং জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দেশের শিল্পায়ন ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সারাদেশের একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ সময় জার্মানির উদ্যোক্তাদের এই সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন অংশদারিত্ব সৃষ্টিতেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে শ্রমিকদের কল্যাণে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলোতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা প্রদানের কথাও জানান। জার্মান চ্যান্সেলর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দু’দেশের মধ্যকার স্বাক্ষরিত এদিনের সমঝোতা স্মারকের আওতায় জার্মানি বাংলাদেশকে প্রায় ৫০ লাখ ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করবে এবং ‘জেডিআই’ অনুযায়ী উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে উভয় দেশ একযোগে উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক বিনিময় করবে। প্রধানমন্ত্রী ৫৩তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে তিন দিনের সরকারী সফরে জার্মানিতে অবস্থান করছেন। সফর শেষে তিনি আজ স্থানীয় সময় ৯টা ৪৫ মিনিটে স্বদেশের উদ্দেশে রওনা হবেন। ক্ষতিগ্রস্তরা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে - প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত এবং কানাডার আদালতে মামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির ভ্রান্ত অভিযোগে যাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল বিশ্বব্যাংক সেসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এজন্য আইনের আশ্রয় নিতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকেলে মিউনিখ ম্যারিয়ট হোটেলে ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ প্রবাসী আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন।
×