ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও শহীদ শামসুজ্জোহা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও শহীদ শামসুজ্জোহা

বাঙালীর ইতিহাসের স্মরণীয় দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে দিনটি আরও বেশি স্মরণীয়। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগের অসামান্য অবদান নিহিত রয়েছে দিনটিতে। তার স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেই চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে রয়েছে তার সমাধি। রয়েছে মৃত্যু স্থলে স্মৃতিস্তম্ভ, অমর স্মৃতি ফলক স্ফুলিঙ্গ। বিশ^বিদ্যালয় প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে সুসজ্জিত ও সুশোভিত সমাধিটি। যে স্থানটিতে তিনি শায়িত আছেন তার চারদিকে আছে অসংখ্য ফুল গাছ। এ বছরই আরও দৃষ্টি নন্দন করার জন্য সংস্কার করা হয়েছে সেটি। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এই স্থানটি জ্জোহা চত্বর নামে পরিচিত। তার নামেই নামকরণ করা হয়েছে একটি আবাসিক হল। মৃত্যুর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন প্রশাসন অধ্যাপক জ্জোহার নামানুসারে সেই সময়ে নবনির্মিত আবাসিক হলকে শহীদ শামসুজ্জোহা হল নামে নামকরণ করা হয়। হলের মূল ফটকের সামনেই আছে শহীদ শামসুজ্জোহার স্মৃতির অনন্য নিদর্শন স্মৃতি ভাস্কর্য ‘স্ফুলিঙ্গ’। শামসুজ্জোহার বুক পর্যন্ত ৩ ফুট উচ্চ প্রতিকৃতি ধারণ করে আছে এই ভাস্কর্যটি। বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক শিল্পী কনক কুমার পাঠক এর হস্ত নৈপুণ্যের অনন্য কারুকার্য হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে এটি। অধ্যাপক জ্জোহার প্রতিকৃতি সংবলিত এই স্মৃতিস্তম্ভটি ২০১২ সালে নির্মিত হয়। দৈর্ঘ্যে ৩৮ ফুট ও প্রস্থে ২৪ ফুট ভাস্কর্যটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। বিশ^বিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে যে স্থানে তাকে হত্যা করা হয় সেখানেও একটি প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে বিশ^বিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের গৌরবগাথা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয় তার স্মৃতি স্তম্ভগুলো। শামসুজ্জোহার স্মৃতিস্তম্ভগুলো দেখতে প্রতিদিনই অগণিত মানুষ ক্যাম্পাসে ভিড় জমায়। ঊনসত্তরে যখন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছয় দফা ও ১১ দফা দাবিতে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে তখন পাকিস্তানী অপশক্তির গুলিতে মিছিলে আমানুলাহ আসাদুজ্জামান শহীদ হন। হত্যা করা হয় জহুরুল হককে। এই দুটি হত্যাকা-ে আন্দোলন বেগবান হয়ে উঠলে পরিস্থিতি প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে ওই দিনই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বেয়োনেটের আঘাতে আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শামসুজ্জোহা। সেই দিনটিতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসাবে যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি সেই দায়িত্বশীলতার চেতনা অমর করে রেখেছে এই স্মৃতি স্তম্ভগুলো। প্রতিবছরই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয় ড. শামসুজ্জোহা দিবস। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি, রাবিতে সীমাবদ্ধ না রেখে এ দিনকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হোক। সালমান শাকিল
×