ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে একুশের আড্ডা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্যাম্পাসে একুশের আড্ডা

ফেব্রুয়ারির সঙ্গে আমাদের সকলের পরিচয় আছে। এই মাস যেমন বসন্তের, ঠিক তেমনি ভালবাসারও। এই মাস ত্যাগের, এই মাস মহিমার, এই মাস অমর একুশের। ১৯৫২ সালের এই মাসেই মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে জীবন দিয়েছিল সালাম, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালী জাতির এই সর্বোচ্চ ত্যাগ ইতিহাসে সৃষ্টি করেছে মাইলফলক। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়েই আমরা ছিনিয়ে আনতে শিখেছি আমাদের ন্যায্য অধিকার, দেখেছি দাবি আদায়ের পথ, পেয়েছি মুক্তি, পৃথিবীর বুকে আঁকতে পেরেছি লাল-সবুজের এক নতুন মানচিত্র। ২১ আমাদের বাঙালী চেতনাকে করেছে উদ্দীপ্ত। ১৯৯৯-এর ১৭ নবেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) এর সাধারণ অধিবেশনে ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কো আয়োজিত এক সম্মেলনে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশ বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে সর্মথন করে। অতঃপর সর্ব সম্মতিক্রমে তা অনুমোদিত হয়। একুশ নিয়ে এই প্রজন্মের তরুণদের ভাবনা জানতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে চাইলে উঠে আসে বর্তমান একুশের চেতনা। একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমী এ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ‘পৃথিবীর মাতৃভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষাই সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রম যে, এই ভাষাটিতে তাঁর প্রাচীন রূপ থেকেই মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে লড়াই করে আসতে হয়েছে। বাংলার আদিকালে ‘সেন’ শাসন আমলে বাংলা ভাষার চর্চার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলা হয়েছিল বাংলা ভাষাচর্চা করলে রৌরব নামক নরকে যেতে হবে। মধ্যযুগে এসেও বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে অবহেলা থেমে থাকেনি। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ছিল নানাবিধ ষড়যন্ত্র। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে বাঙালী জাতির প্রত্যক্ষ সংগ্রাম।’ একুশ নিয়ে গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ রনি বলেন, ‘একটি জাতিসত্তার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ভাষা’। আর আমাদের এই মূলসত্তাকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। এককথায় পৃথিবীর ইতিহাসে আমরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। একুশ মানে শুধু একটি দিন নয়। মায়ের ভাষায় কথা বলার প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে একুশ। তাই একুশ বেঁচে থাকবে তার কৃতিত্বে, একুশ বেঁচে থাকবে অমর হয়ে।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘একটি জাতিসত্তার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ভাষা’। আর আমাদের এই মূলসত্তাকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। বুঝতে শেখার পর থেকেই আমি গভীরভাবে ভাষা শহীদদের স্মরণে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছি। বাঙালীর ইতিহাসে বায়ান্ন এসেছিল বলে একাত্তর এসেছে, পরে আমরা স্বাধীন জাতির স্বীকৃতি পেয়েছি। যে চারটি বড় স্তম্ভের ওপর বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার অন্যতম প্রধান স্তম্ভটি হলো জাতীয়তাবাদ। আবার এই জাতীয়তাবাদের চেতনাবাহী প্রধানতম স্তম্ভ হলো ‘ভাষা’। ‘আমরা আমাদের বাংলা ভাষা নিয়ে গর্বিত।’ স্টামফোর্ড ইউনির্ভাসিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ৩য় শিক্ষার্থী জেরিন তাসনিম অর্চির মতে, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি একদিকে যেমন আমাদের শোকের অপরদিকে তেমনি গর্বেরও। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের মায়ের ভাষা। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের সেই অর্জন শুধু আমাদের মাতৃভাষার প্রাপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং সেটাকে ছাপিয়ে পরবর্তীতে আমাদের মধ্যে স্বাধীন সত্তার এক নতুন স্বপ্নবীজের জন্ম হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের পথের সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছিল ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের এই মহিমা। যারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের আলো বাতাসে বেঁচে আছি, হাসছি, কাঁদছি। এছাড়াও একুশ আজ আমাদের জন্য পরম গর্বেরও, এজন্য যে তাদের ত্যাগের ওই মহাত্মাকে আমরা আজ বিশ্বের নিপীড়িত হাজারো ভাষাভাষী মানুষের অনুভবের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। বিভিন্ন রূপে, ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গে।’ বাংলাদেশ ও সমগ্র বাঙালী জাতির ইতিহাসে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ শব্দ দুটি একত্রে উচ্চারিত হলেই প্রতিটি বাঙালীর স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে এক চিরন্তন চিত্রকল্প। হৃদয়ে বেজে ওঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?
×