ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রেগুলেটরি সেল গঠনের প্রস্তাব ॥ গাইডলাইন অনুমোদন

সাইবার স্পেস ও ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিশ্চিতে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সাইবার স্পেস ও ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিশ্চিতে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ সাইবার স্পেস ও ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যক্তিপর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। এখান থেকে রক্ষা পেতে কেন্দ্রীয় মনিটরিং রেগুলেটারি সেল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে সাইবার নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে একটি গাইডলাইন অনুমোদন করেছে সরকার। গাইডলাইনে সাইবার নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ গাইডলাইন অনুসারে ইন্টারনেট নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের ২১টি প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকিমুক্ত করতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ওই সব প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে, দেশের প্রথম নিজস্ব ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট) ‘ব্র্যাক অন্বেষা’র মহাকাশে উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ স্যাটেলাইট মহাকাশ থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, নদী, ফসলের মাঠ থেকে শুরু করে নগর, পাহাড়-সাগরসহ অনেক কিছুর ছবি পাঠাবে। উন্নত দেশগুলো অনেক আগেই এ ধরনের স্যাটেলাইটের মালিক। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তান ন্যানো স্যটেলাইটের মালিক। বাংলাদেশ মার্চে ন্যানো স্যাটেলাইটটি মহাকাশে স্থাপন করবে। মে মাস থেকে স্যাটেলাইটটি ছবি পাঠাতে শুরু করবে। স্যাটেলাইটটির ওজন প্রয় এক কেজি। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি যেন কারও জন্য হুমকির কারণ না হয় তার জন্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা ঘটেছে। সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা দেশের জন্য বড় ক্ষতি ডেকে এনেছে। এ ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে সাইবার নিরাপত্তা খুবই জরুরী। বিশেষ করে আর্থিক খাতে এ নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এনবিআর এমন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এনবিআর আয়োজিত এক সেমিনারে বলেছেন। তিনি এনবিআরকে ‘থ্রেট ইন্টেলিজেন্টস’ তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন। সাইবার সিকিউরিটি তৈরি করতে না পারলে আরও বড় কোন ঘটনা ঘটতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ন্যাশনাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ (অবকাঠামো) আওতায় ২১ প্রতিষ্ঠানকে স্পর্শকাতর স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা দিতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সহযোগিতা দেবে। আর্থিক সব প্রতিষ্ঠানকেই আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়ায় ঘটনা থেকে সরকার এটা উপলব্ধি করেছে। আইটি সিকিউরিটি অডিট সিস্টেম চালু করার জন্য এনবিআরকে আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। এনবিআরের কাছে ২৭ লাখ অনলাইন ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বরধারীর (টিআইএন) তথ্য রয়েছে। প্রতিটি টিআইএনের যথাযথ সুরক্ষা নিতে হবে। এদিকে সাইবার নিরাপত্তার জন্য তৈরি গাইডলাইনে বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধ দমনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠন করবে বিটিআরসি। এ সংস্থা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ সাইবার অপরাধের ওপর নজরদারি জোরদার, অপরাধ তদন্ত ও দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নেবে। সাইবার অপরাধ দমন ও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ ও সমন্বয় করে কাজ করার সার্বিক উদ্যোগ নেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবার অপরাধের ওপর নজরদারি জোরদার, সংঘটিত ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা। অপরাধ দমনে দেশের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও দফতরের সমন্বয়ে এ কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে বিটিআরসি। বিটিআরসি বিদ্যমান সামর্থ্য ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাইবার অপরাধীদের শনাক্তকরণসহ পুলিশের তদন্তকাজে সহায়তার জন্য কারিগরি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। বিটিআরসির পাশাপাশি সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন দফতর এবং নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিজস্ব অধিক্ষেত্র অনুসারে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করবে। বর্তমানে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দেশের পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে বিটিআরসি সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে সাইবার অপরাধ দমনে বিটিআরসির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধ দমনে আরও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাক, চিন্তা ও যোগাযোগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সুস্থ ও সাবলীল সামাজিক মাধ্যম গঠনে বিটিআরসি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবার অপরাধ দমনে বিদ্যমান জনবল ও কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে বিটিআরসি সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন চাহিদামতো সহযোগিতা দেবে।
×