ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবিকার তাগিদে ওরা হকার

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জীবিকার তাগিদে ওরা হকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ১৮ ফেব্রুয়ারি ॥ ম্যালামাইন জিনিসপত্র বিক্রি করতে ঝুড়ি মাথায় গ্রামের পর গ্রাম হাঁটে তারা। সারাদিনের বিক্রি শেষে আবার দোকানির কাছে বিক্রিত পণ্যের অর্থ ও অবিক্রিত পণ্য বুঝিয়ে বাড়ি ফেরে এসব নারী। আর উপার্জনের অর্থ দিয়েই বাজারসহ রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার সকাল হলেই ছুটতে হয় জীবিকার টানে। সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য স্বামী পরিত্যক্তাসহ হতদরিদ্র এসব নারীর প্রতিদিন হকার হতে হয়। জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ পৌরসভাধীন ‘গাইনপাড়া’ এলাকার দরিদ্র পরিবারের নারীরা দীর্ঘদিন ধরে ম্যালামাইনের জিনিসপত্র মাথায় নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করে সংসারের ব্যয় মিটিয়ে আসছে। সদরের হারুয়া চৌরাস্তায় ১০-১২টি ম্যালামাইনের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এসব দোকান থেকে ম্যালামাইন পণ্য নিয়ে ঝুড়িতে সাজায় ৭০-৮০ নারী। সাজানো শেষ হলে ঝুড়ি ও পণ্য কাপড়ে বেঁধে মাথার রেখে হাঁটতে শুরু করেন যার যার গন্তব্যস্থলে। জেলার ভৈরব, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ছাড়াও ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত গিয়েও ম্যালামাইনের তৈজসপত্র বিক্রি করে ওইসব নারী। তবে তারা দূরে যেতে যানবাহনে উঠতে বাধ্য হয়। সাজেদা আক্তার জানান, চার বছর আগে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে স্বামী সিরাজ মিয়া মারা যান। এরপর থেকে তার জীবনযুদ্ধ শুরু। এখনও তিন ছেলে ও নিজের ভরণ-পোষণের জন্য ম্যালামাইনের তৈজসপত্র মাথায় নিয়ে নিরন্তর ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকার উপার্জিত আয় দিয়েই চলে তার সংসার। আবার কোন কোন দিন বিক্রি না হলে ম্যালামাইনের দোকানির কাছ থেকে টাকা ধার করেন। এভাবেই চলছে সাজেদাসহ ৭০-৮০ দরিদ্র নারীর সংসার। স্বামী পরিত্যক্তা সাজেদা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শুনেছি, সরকার বিধবা ভাতার কার্ড দেয়। কিন্তু চার বছর ধরে আমার কোন কার্ড নেই’। একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে শারমিন আক্তার বলেন, ‘বিধবা ভাতার কাড (কার্ড) কেমনে পাইয়াম, আমরার তো ট্যাহা (টাকা) নেই। ট্যাহা থাকলে কার্ড মিলে। যারা কার্ড পাইছে তারা হগলেই (সবাই) বড়লোক’। এমন ক্ষোভের সঙ্গে আরও বলেন, হালিমা আক্তার, মরিয়ম আক্তার, বিলকিছ বেগম ও রোকেয়া বেগম। চৌরাস্তায় ম্যালামাইন দোকানের মালিক সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘আমার দোকান থেকে ১০ নারী তৈজসপত্র নিয়ে বিক্রি করে। প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার পণ্য দেই। তারা সেগুলো বিক্রি করে আমাকে টাকা বুঝিয়ে দেয় এবং আমিও তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেই’। আরেক মালিক শ্যামল মিয়া বলেন, ‘এসব নারী থাকায় আমাদের কর্মচারী রাখার দরকার পড়ে না। তাই আমরা কোন কর্মচারী রাখি না’।
×